চট্টগ্রামে ছাত্র ও যুব অধিকার পরিষদের গ্রেপ্তার নেতাদের নির্যাতন এবং তাদের পরিবারের কাছ থেকে টাকা দাবি করেছে পুলিশ, নুরুল হক নুরের এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছে বাহিনীটি।
পুলিশ বলছে, ক্রসফায়ারে দেয়ার হুমকির অভিযোগটি ভিত্তিহীন। এ ছাড়া কারও কাছে টাকাও চায়নি পুলিশ।
রাজধানীর নয়াপল্টনে যুব ও ছাত্র অধিকার পরিষদের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে রোববার দলটির আহ্বায়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর এমন অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, ‘১৩ অক্টোবর কুমিল্লার নানুয়ার দিঘির পাড়ের পূজামণ্ডপে কোরআন পাওয়ার জেরে চট্টগ্রামে জেএমসেন হল পূজামণ্ডপে হামলার চেষ্টা করা হয়। এ ঘটনায় প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত না করে ছয় মাস ধরে কারাগারে থাকা তিন বিএনপিকর্মীকে মামলার আসামি করা হয়েছে।
‘ছাত্র ও যুব অধিকার পরিষদের ৯ নেতা-কর্মীকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে টাকা দাবি করা হয়েছে। চোখে কালো কাপড় বেঁধে ক্রসফায়ারেরও হুমকি দিয়েছে। পরে মামলায় জড়িয়ে থানায় নিয়ে অমানবিক নির্যাতন করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি আদায় করেছে পুলিশ।’
নির্যাতনের অভিযোগের বিষয়ে গ্রেপ্তার নেতা-কর্মীদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে নিউজবাংলা।
তবে তারা কেউ এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তাদের আইনজীবীও রাজি হননি কথা বলতে।
নুরের দলের গ্রেপ্তার ৯ জনের মধ্যে আছেন ছাত্র ও যুব অধিকার পরিষদের চট্টগ্রাম মহানগরের আহ্বায়ক মো. নাছির। তিনি নগরের তামাকুমন্ডি লেনে ব্যবসা করেন। সেখানে তার বাবা ও বড় ভাইয়েরও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে।
সোমবার গিয়ে দেখা যায়, নাছিরের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ।
পরিবারের কাছে পুলিশ টাকা চেয়েছে কি না জানতে চাইলে তার বড় ভাই আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘এসব বিষয়ে আমরা কথা বলতে পারব না। আমাদের আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেন।’
নাছিরের সঙ্গে দেখা হয়েছে কি না সে প্রশ্নে বলেন, ‘আদালতে নিয়ে গেলে দূর থেকে দেখেছি। রোববার বিকেলে আমরা কারাগারে গিয়েছিলাম তার সঙ্গে দেখা করতে কিন্তু পারিনি। করোনার কারণে নাকি দেখা করা নিষেধ। তাই এখনও নাছিরের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।’
নাছিরের বাবা ব্যস্ততার কথা জানিয়ে নিউজবাংলার প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি।
ছাত্র ও যুব অধিকার পরিষদের বায়েজিদ বোস্তামী থানার আহ্বায়ক মো. রাসেলের বাসায় গেলে তার পরিবারের সদস্যরাও এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।
দলটির চট্টগ্রাম মহানগর শাখার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পুলিশ ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে জবানবন্দি নিয়েছে। তবে টাকা দাবির বিষয়টি আমি শুনিনি।’
ওই ৯ নেতা-কর্মীর মামলা পরিচালনা করছেন চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আদালতের আইনজীবী মাইনুল হোসেন ভূঁইয়া।
নির্যাতনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা শুধু মামলা পরিচালনা করি। এর বাইরে কোনো কিছু বলার সুযোগ আমার নেই।’
টাকা দাবির বিষয়ে জানান, তাকে এই বিষয়ে কেউ কিছু বলেনি। পরিবারের সদস্যরা এখনও আদালতকে কিছু জানায়নি।
নুরের অভিযোগ অস্বীকার করে চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নেজাম উদ্দিন বলেন, ‘ভিডিও ফুটেজ দেখে আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জোর করে কারও কাছ থেকে পুলিশ জবানবন্দি নেয়নি। ক্রসফায়ারে দেয়ার হুমকির অভিযোগ ভিত্তিহীন। পুলিশ কারও কাছে টাকা চায়নি।’
পুলিশ জানায়, দলটির চট্টগ্রাম কমিটির সাবেক আহ্বায়ক হাবিবুল্লাহ মিজান রোববার চট্টগ্রামের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। সেখানে তিনি ১৫ অক্টোবরের হামলার দুদিন আগে এ বিষয়ে পরিকল্পনা করার কথা জানান। পরিকল্পনা অনুযায়ী মণ্ডপে হামলার দিন মুসল্লিদের জড়ো করেন।