তৃতীয় দফা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মাদারীপুর সদর উপজেলার যে ১৪টি ইউনিয়নে নির্বাচন হতে যাচ্ছে তার একটিতেও নৌকা প্রতীকের প্রার্থী থাকছে না। এ নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের একাংশের নেতাকর্মীর মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। তবে অপর একটি পক্ষ বলছে, দলীয় প্রতীক না থাকায় অন্তকোন্দল সৃষ্টির সুযোগ থাকছে না। ভোটরাও স্বতস্ফূর্তভাবে ভোট দিতে উৎসাহ পাচ্ছেন।
আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ২৪ অক্টোবর সদর উপজেলায় প্রার্থিতা উন্মুক্ত রাখার তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের দলীয় লোকজনই এখানে স্বতন্ত্র প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। ফলে ১৪টি ইউনিয়নে কোনো নৌকা প্রতীকের প্রার্থী থাকছে না।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ১৫ অক্টোবর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের একাংশের সভাপতি সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেন সেলিম ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এজাজুর রহমান আকনের উপস্থিতিতে বর্ধিত সভা হয়। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও মাদারীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য শাজাহান খান।
আওয়ামী লীগ অধ্যুষিত এই উপজেলার সবগুলো ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীর সংখ্যা বেশি এবং তাদের আলাদা করে বাছাই করা উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সম্ভব হচ্ছে না বলে আলোচনা হয়। তাই সভায় সবার সম্মতিতে সদর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থিতা উম্মুক্ত রাখার সুপারিশ করা হয়। পরে সভার কার্যবিবরণী দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পাঠানো হয়।
অন্যদিকে সদর উপজেলার আরেক অংশের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইউসুফ চৌকদার ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা কামালের উপস্থিতিতে ১৯ অক্টোবর শিল্পকলা একাডেমিতে বর্ধিত সভা হয়। সেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ মোল্লা। সেই সভায় সর্বসম্মতিক্রমে নৌকা প্রতীকে দলীয় মনোনয়ন দেয়ার কথা বলা হয়। কিন্তু দলীয় সংসদীয় বোর্ড ও স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের যৌথসভা শেষে সদর উপজেলায় তৃতীয় দফা নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন থাকছে না বলে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
নৌকা প্রতীকে নির্বাচন হচ্ছে না, বিষয়টি জানার পর বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রার্থীরা প্রচারণা শুরু করেছে। প্রার্থীরা ভোটারদের কাছে যাচ্ছেন। বিভিন্ন এলাকাতে উঠান বৈঠকও করতে দেখা গেছে তাদের। এরই মধ্যে প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র কিনতে শুরু করেছে। তৃণমূল আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা নৌকা প্রতীক না থাকার বিষয়টি দেখছেন ভিন্নভাবে।
আওয়ামী লীগের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে জানা যায়, তৃণমূল পর্যায়ে বিশেষ করে ইউনিয়ন পর্যায়ের রাজনীতিতেও একাধিক যোগ্য প্রার্থী রয়েছেন, যারা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। কেউ ইউনিয়ন পর্যায়ের কমিটিতে আবার কেউ কেউ উপজেলা পর্যায়ের কমিটিতে রয়েছেন।
শাজাহান খানপন্থি একাংশের নেতাদের দাবি, ইউনিয়ন পর্যায় থেকে দলীয় মনোনয়ন দিতে গেলে একাধিক যোগ্য প্রার্থীদের মধ্যে বেছে নেয়া দুরূহ হতো। তা ছাড়া পরস্পরের মধ্যে মনোমালিন্য ও দূরত্ব সৃষ্টি হতো। এই মনোমালিন্য আর দূরত্ব রোধে সদরের ১৪টি ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কোনো দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়নি। দলীয় সমর্থনে একাধিক প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। অর্থাৎ আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত সব প্রার্থী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। এর মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মধ্যে ভোট নিয়ে উৎসাহ তৈরি হয়েছে। নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোটদানের সুযোগ তৈরি হয়েছে।
সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের একাংশের সভাপতি সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেন সেলিম বলেন, ‘সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সুপারিশে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে উপজেলা আওয়ামী লীগ প্রার্থীতা উন্মুক্ত রেখেছে। এখানে দলীয় একক কোনো সমর্থন দেয়া হয়নি। কারণ প্রার্থীদের বেশির ভাগই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। একক প্রার্থী দিলে অন্তদ্বন্দ্ব তৈরি হয়। এখন ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করতে পারবে। আমাদের আর কোনো সমস্যা নেই।’
মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ মোল্লা জানান, ‘নেত্রীর সিদ্ধান্তই আমরা মেনে চলি। তিনি যে নির্দেশনা দেবেন, সেটাই আমরা পালন করব। তারপরেও জেলা আওয়ামী লীগ থেকে প্রতিটি ইউনিয়নের দলীয়ভাবে নিবেদিত কর্মীদের সমর্থন দিব। যাতে ত্যাগীরা জয়ী হতে পারে।’
মাদারীপুর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান জানান, তৃতীয় ধাপে সদর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আগামী ২ নভেম্বর মনোনয়নপত্র জমার শেষ তারিখ। যাচাই-বাছাই হবে ৪ নভেম্বর, ১১ নভেম্বর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের তারিখ এবং ২৮ নভেম্বর ভোটগ্রহণ হবে। এ উপজেলায় ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন ২ লাখ ২১ হাজার ৭৮৩ জন ভোটার। আমাদের সব প্রস্তুতি ইতোমধ্যেই নেয়া হয়েছে।’