দুর্গাপূজায় চট্টগ্রামে সাম্প্রদায়িক হামলায় জড়িত অভিযোগে ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের নেতৃত্বাধীন ছাত্র, যুব, শ্রমিক ও পেশাজীবী অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের নাম এসেছে। এছাড়া বিভিন্ন সভা-সমাবেশে নুরের বক্তব্যও তৈরি করেছে সমালোচনা।
এমন পরিস্থিতিতে নুরুল হক নুরের বক্তব্যের দায় নিতে অস্বীকার করছেন তার সঙ্গে রাজনৈতিক ঐক্য প্রক্রিয়ায় থাকা গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি। সাম্প্রদায়িক হামলার অভিযোগ দূর করতে নুরের সংগঠন কী সিদ্ধান্ত নেয়- তা দেখে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়ার কথাও জানিয়েছেন সাকি। সম্প্রতি একটি সংবাদ মাধ্যমের টকশোতে এ বিষয়ে বক্তব্য দেন সাকি।
তবে জোনায়েদ সাকির এমন বক্তব্য রাজনৈতিক জোট প্রক্রিয়ায় কোনো প্রভাব ফেলেনি বলে দাবি করেছেন ছাত্র, যুব, শ্রমিক ও পেশাজীবী অধিকার পরিষদের সমন্বয়ক নুরুল হক নুর। সাম্প্রদায়িক হামলায় নিজের সংগঠনের নেতাকর্মীদের দোষ খুঁজে না পাওয়ার দাবিও করেছেন তিনি।
সাকির বক্তব্য নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে নুরুল হক নুর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি শুনেছি। প্রোগ্রামটা আমি দেখছি। এটা ঠিক আছে। আসলে, যার যার স্ট্যান্ড থেকে, আপনি ধরেন যেকোনো দলের ক্ষেত্রেও কোনো নেতা বক্তব্য দিলেও তাহলে বলে এটা তার ব্যক্তিগত অবস্থান।’
নুর বলেন, ‘সাকি ভাই যেহেতু বাম রাজনীতির মধ্যে, ইয়াং লিডারদের মধ্যে একজন রাইজিং এই সময়ে। সেলিম ভাই, মেনন ভাই, ইনু ভাইরা তো সেই আমলের। কিন্তু বাংলাদেশের বাম রাজনীতিতে দেখতে গেলে সাকি ভাই একটা ফিগার। সেই জায়গা থেকে উনাকে নানাভাবে বিতর্কিত করার একটা প্রচেষ্টা থাকে। উনি অ্যাজ ইউজুয়ালি কথা বলেছেন। আমরা ফ্রেন্ডলি বা জয়েন্টলি কাজ করতে পারি।’
নুর দেশের বাম নেতাদের মধ্যে গণসংহতির জোনায়েদ সাকিকে এগিয়ে রাখলেও গত ১ আগস্ট সাকি নিউজবাংলাকে জানিয়েছিলেন, তিনি নিজেকে বামপন্থি মনে করেন না।
আফগানিস্তানের তালেবানের সঙ্গে চীনের ঘনিষ্ঠতার বিষয়ে জোনায়েদ সাকির মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি তখন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কী বলবো বলেন। আমি বামপন্থি না। এটা নিয়ে সিপিবিকে জিজ্ঞেস করেন অথবা বাম জোটের সমন্বয়কে জিজ্ঞেস করেন। আমরা তো গণ মানুষের রাজনীতি করি। আমরা মাওলানা ভাসানীর রাজনৈতিক ধারায় গণ মানুষের রাজনীতি করি।’
আরও পড়ুন: চীন-তালেবান বন্ধুত্ব: বাংলাদেশের বামপন্থিদের কী অবস্থান?
সাম্প্রতিক টকশোতে জোনায়েদ সাকির মন্তব্যের পরেও জোটগত রাজনীতি প্রশ্নে এখনও নিজের অবস্থান ‘পজিটিভ’ বলে দাবি করেন নুর।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘হ্যাঁ, জোট প্রসঙ্গে তো পজিটিভ। আমাদের আলোচনা ছিল, আমরা একটা পার্টি করতে পারি কিনা। তাদের একটা পার্টি, আমাদের একটা পার্টি, জয়েন্টলি আরও ছোট ছোট পার্টি, ওই আলোচনা আছে এখনও।’
গত বছরের নভেম্বরে মাওলানা ভাসানীর মৃত্যুবার্ষিকী একসঙ্গে পালনের মধ্য দিয়ে জোটগতভাবে এগিয়ে চলার ঘোষণা দেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি এবং ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর।
তাদের সঙ্গে আরও ছিলেন ভাসানী অনুসারী পরিষদের মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু এবং রাষ্ট্রচিন্তার হাসনাত কাইয়ুম। এরপর গত ১৬ ফেব্রুয়ারি জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এই চারটি সংগঠন তাদের যৌথ কর্মসূচি ঘোষণা করে।
এ প্রসঙ্গে নুর বলেন, ‘মাওলানা ভাসানীর মৃত্যুবার্ষিকী পালনের মধ্য দিয়ে চারটা সংগঠন জাতীয় ইস্যুতে কিছু কিছু কর্মসূচি পালন করেছিলাম এবং এখনও করছি, নিজেদের মধ্যে বিভিন্ন আলাপ আলোচনা করে। একটা ঐক্যমতে পৌঁছানো এবং কমন কিছু রাজনৈতিক ইস্যুকে সামনে রেখে, আমরা এই মুহূর্তে একটা পার্টি বা একটা জোট আকারে কাজ করেত পারি কি-না, এই আলোচনাটা আমাদের এখনও চলছে।’
বিষয়টি নিয়ে নিউজবাংলা জোনায়েদ সাকির সঙ্গেও কথা বলেছে। তিনি বলেন, ‘নুরের দল বলে কিছু আমি জানি না। ছাত্র, যুব, শ্রমিক ও পেশাজীবী অধিকার পরিষদ নামে যে দল আছে সেখানে নুর একজন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি, তাকে সমন্বয়কের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।’
নুরের সঙ্গে রাজনৈতিকে জোটের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘আমরা একদিকে আমাদের জাতীয় দিবসগুলো পালন করব, তার সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের মধ্যে আমাদের আলাপ আলোচনাগুলো করব- কোথায় মিল আছে, কোথায় আরও বেশি আলাপ আলোচনার প্রয়োজন আছে।’
লেখক মোশতাক আহমেদের কারাগারে মৃত্যুর পরপর ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর নেতৃত্বে গড়ে ওঠা নাগরিক আন্দোলনেও নুর যুক্ত হয়েছেন বলে জানান জোনায়েদ সাকি।
তিনি বলেন, ‘নুরুল হক নুর এবং তার নেতৃত্বে তাদের ছাত্র যুব অধিকার পরিষদ সেই সংগঠনটা যুক্ত আছে। সে কারণে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কখনও কখনও একসঙ্গে প্রোগ্রাম করলে তাদের সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আমাদের দেখা হচ্ছে, আমাদের কোনো কর্মসূচিতে তারা এসেছেন, আমরাও তাদের ডাকে কোনো কোনো কর্মসূচিতে গিয়েছি।’
চট্টগ্রামে গণসংহতির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচিতে ছাত্র, যুব, শ্রমিক ও পেশাজীবী পরিষদের নেতারা অংশ নেন। দুর্গাপূজা ও পূজা পরবর্তী সাম্প্রদায়িক হামলার সঙ্গে তাদের জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে।
এ প্রসঙ্গে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক বলেন, ‘আমি সংবাদ মাধ্যমে দেখেছি, বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখতে পাচ্ছি যে, তাদের মধ্যে একজন অভিযুক্ত হয়েছেন। তিনি এমন একটা মিছিলের নেতৃত্ব দিয়েছেন, যে মিছিল থেকে পরবর্তীকালে জেএম সেন হলের পূজামণ্ডপে হামলা করা হয়।’
জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘আমরা তো নিঃসন্দেহে এ ধরনের ঘটনার তদন্ত চাইব এবং আমাদের অবস্থান খুব পরিষ্কার। অন্য দলের তো বটেই, আমাদের দলেরও যদি কেউ কখনও কোনো অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হয়, বিশেষ ভাবে মন্দিরে হামলার মতো অপরাধ, তার বিচার এবং শাস্তি আমরা নিশ্চিতভাবেই চাইব।’
তবে কয়েক জন ব্যক্তির অপরাধের জন্য পুরো দলকে দায়ী করা যায় না বলেও মন্তব্য করেন সাকি। তিনি বলেন, ‘একজন ব্যক্তি বা কতিপয় ব্যক্তির জন্য পুরো দল তো আর দায়ী হয় না। ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে সেটাই হচ্ছে সেই দলের দিক থেকে... এখন আমরা দেখছি, ছাত্র যুব অধিকার পরিষদের কর্মীদের ব্যাপারে যে অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে সে অভিযোগের ভিত্তিতে তারা কী পদক্ষেপ গ্রহণ করে।’
জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘এটা আমাদেরও যেমন পর্যবেক্ষণে আছে, আমাদের অন্যান্য শরিক দলগুলো, যারা আমরা একসঙ্গে কাজ করি, সবারই পর্যবেক্ষণে আছে। আমরা আশা করব, এই বিষয়ে তাদের যে সাংগাঠনিক তদন্ত ও ইত্যাদির পরিপ্রেক্ষিতে নিশ্চিত হয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন অথবা তাদের অবস্থান স্পষ্ট করবেন।’
এরপরই জোট নিয়ে গণসংহতি সিদ্ধান্ত নেবে জানিয়ে সাকি বলেন, ‘তা তো বটেই, সেটা তো একটা রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার ব্যাপার।’