পরিত্যক্ত উড়োজাহাজ পরিদর্শনের পর এবার শর্তসাপেক্ষে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকা কার্যালয়গুলোতে প্রবেশের অনুমতি পেয়েছে ইউনাইটেড এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষ।
এয়ারলাইনসটি বলছে, এখন কার্যালয় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করছে তারা। ২০১৬ সাল থেকে এগুলো বন্ধ ছিল।
ইউনাইটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এটিএম নজরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার অফিসগুলো খোলা হয়েছে। এখন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার কাজ চলছে। কার্যালয়ে প্রবেশ করতে পারাটা বড় অগ্রগতি।’
এর আগে গত ২০ সেপ্টেম্বর শাহজালাল বিমানবন্দরে পরিত্যক্ত ৯টি উড়োজাহাজ পরিদর্শন করে এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষ। সে সময় এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষ বলেছিল, উড়োজাহাজগুলোর অবস্থা যতটা খারাপ ভাবা হচ্ছিল, তার চেয়েও ভালো অবস্থায় আছে, তবে এগুলো ওড়ার উপযোগী করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে ইঞ্জিনিয়ারিং অডিটের পর।
কার্যালয়ে প্রবেশাধিকার মিললেও এয়ারলাইনসটি আবারও পাখা মেলতে পারবে কি না, তা নিশ্চিত নয়। অবশ্য প্রবেশাধিকার পাওয়ায় প্রাথমিকভাবে কার্যালয়ে থাকা এয়ারলাইনসটির গুরুত্বপূর্ণ নথি এবং উড়োজাহাজের টেকনিক্যাল লগ বুকগুলো পর্যবেক্ষণের সুযোগ পাবে কর্তৃপক্ষ।
এয়ারলাইনসটিকে পুনরায় সচল করা যাবে কি না, তাও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা এতে সহজ হবে। পাশাপাশি উড়োজাহাজগুলো কী অবস্থায় আছে এবং এগুলো পুনরায় সচল করা যাবে কি না, তা সম্বন্ধেও ধারণা পাওয়া যাবে নথি বিশ্লেষণে।
এটিএম নজরুল বলেন, ‘আমরা একটি টিম করেছি ইঞ্জিনিয়ার এবং পাইলটদের নিয়ে। তারা ফিজিক্যালি উড়োজাহাজগুলো পরিদর্শন করবে। আমাদের যে ডকুমেন্টগুলো এখানে আছে, সেগুলো তারা অডিট করবে। হয়তো এটা ৪০ ভাগ কাজে লাগবে। এটা না হলে বোঝা যাবে না উড়োজাহাজগুলো কী অবস্থায় আছে। লগ বইগুলো স্টাডি করে তারা একটি রিপোর্ট করবে। সেটা হয়ে গেলে আমরা একটি সিদ্ধান্ত নেব।
‘এটা ডিপেন্ড করছে সিভিল সিভিল এভিয়েশেনের অনুমতির ওপর। তারা আমাদের এই টিমকে বিমানবন্দরে প্রবেশের অনুমতি দিলে আমরা কাজ শুরু করতে পারব। আমরা আশা করি, এক-দুই সপ্তাহের মধ্যে অনুমতি পাব।’
২০১০ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ইউনাইটেড এয়ার ২০১৬ সালে হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়। এতে কোম্পানির শেয়ার দর নামতে নামতে দুই টাকার নিচে নেমে আসে। বিএসইসি মূল মার্কেট থেকে কোম্পানিটিকে স্থানান্তর করে ওভার দ্য কাউন্টার বা ওটিসি মার্কেটে। সেখানে শেয়ার লেনদেন জটিল ও সময়সাপেক্ষ বলে লেনদেনও হচ্ছে না। এতে ৭২ কোটি টাকা মূল্যের শেয়ারের মালিকদের টাকা কার্যত শূন্য হয়ে গেছে।
এর প্রায় পাঁচ বছর পর গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ইউনাইটেড এয়ারের বোর্ড ভেঙে দিয়ে নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠন করে দেয় বিএসইসি। পরিচালনা পর্ষদের প্রধান তাসবিরুল আলম চৌধুরীকে বাদ দিয়ে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেয়া হয় এভিয়েশন খাতের পরিচিত মুখ কাজী ওয়াহিদুল আলমকে। আর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বে আসেন এটিএম নজরুল ইসলাম, যিনি এর আগে ইউনাইটেড এবং জিএমজি এয়ারলাইনসের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।
বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) হিসাব অনুযায়ী, গত মার্চ পর্যন্ত ইউনাইটেড এয়ারের কাছে তাদের পাওনা টাকার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২০৩ কোটি ৬ লাখ ৬৯ হাজার ৪৯৩ টাকা। এ টাকা আদায়ে চলতি বছরের শুরুতে এয়ারলাইনসটির পরিত্যক্ত উড়োজাহাজগুলো নিলামের উদ্যোগ নেয় বেবিচক। অবশ্য পরে প্রতিষ্ঠানটির নতুন পরিচালনা পর্ষদের অনুরোধে সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে সংস্থাটি।
দেনা-পাওনার বিষয়ে ইউনাইটেডের এমডি নজরুল ইসলাম বলেন, ‘সিভিল এভিয়েশনের যে শর্ত ছিল যে দেনা পাওনার বিষয়ে, তারা সেটি সরকারের কাছে জানতে চেয়েছে যে কী হবে। মিনিস্ট্রি সিভিল এভিয়েশনকে একটি চিঠি দিয়েছে তাদের মতামত চেয়ে।
‘তারা মিনিস্ট্রিতে চিঠি পাঠাবে। সেটা না আসা পর্যন্ত আমাদের প্রোগ্রেস আটকে থাকবে। এটা হলে ফরমালি আমাদের সম্পদে অ্যাকসেস পাব। এখন যেটা পাচ্ছি, তাতে যদি কিছু করতে চাই, সেটা পারছি না।’