১০ তলা ভবন। ১ লাখ ৭৬ হাজার বর্গফুট ফ্লোরে ৪০টি সরকারি দপ্তর। বিশাল মাল্টি-পারপাস হলরুম থেকে শুরু করে ডে-কেয়ার সেন্টার পর্যন্ত আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা।
কোনো জেলা শহরে এ রকম সমন্বিত অফিস ভবন দেশে এই প্রথম।
মাদারীপুর পৌর শহরের প্রাণকেন্দ্র শকুনী লেক ও মাদারীপুর-শরীয়তপুর আঞ্চলিক সড়কের পাশে এটি তৈরি করা হয়েছে।
ভবনের কিছু কাজ এখনও বাকি থাকায় বরাদ্দকৃত সব অফিস নতুন ভবনে উঠতে পারেনি এখনও। নভেম্বর মাসে এখানে উঠতে পারবে দপ্তরগুলো।
এক একর জায়গার ওপর নির্মাণ করা ভবনটির ব্যয় হয়েছে ৭০ কোটি টাকা। নির্মাণকাজ শেষ হয় গত জুনে। ৩ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দৃষ্টিনন্দন ভবনটি উদ্বোধন করেন।
মাদারীপুর গণপূর্ত বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলা শহরে অনেক ছোট-বড় সরকারি অফিস রয়েছে, যাদের নিজস্ব কোনো ভবন নেই। শহরের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ভাড়া বাসায় রয়েছে এ সরকারি ভবনগুলো। ফলে সাধারণ মানুষ এগুলোর সেবা নিতে বিড়ম্বনায় পড়ছে। জেলার এ অফিসগুলোকে যাতে এক জায়গায় একটি ভবনে রাখা যায়, সে জন্য মাদারীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক নৌমন্ত্রী শাজাহান খান ২০১২ সালে জেলায় একটি সমন্বিত সরকারি অফিস ভবন নির্মাণ করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে প্রস্তাব দেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বিষয়টি পর্যালোচনা করতে গৃহায়ন ও গণপূর্ত বিভাগকে দায়িত্ব দেয়া হয়।
মাদারীপুর গণপূর্ত বিভাগ আরও জানান, ভবনটির ধারণা একেবারেই নতুন। এটির নকশা প্রণয়নের জন্য গণপূর্ত অধিদপ্তর ও স্থাপত্য অধিদপ্তরকে দায়িত্ব দেয়া হয়। দীর্ঘ সময় গবেষণা ও পর্যবেক্ষণের পর ২০১৬ সালের মার্চে একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী ভবনটির অনুমোদন দেন। দরপত্রের কার্যক্রম শেষ করে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়।
নিচতলা থেকে চতুর্থ তলা পর্যন্ত প্রতিটি ফ্লোরে ২০ হাজার বর্গফুট এবং পাঁচতলা থেকে দশম তলা পর্যন্ত প্রতি ফ্লোরে ১৬ হাজার বর্গফুট জায়গা রয়েছে। ভবনের বেসমেন্টে ৪২টি এবং নিচতলায় ১৩টি গাড়িসহ ৫৫টি গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
ভবনে ৪টি লিফট, ৫০০ কেভিএ জেনারেটর, ১২৫০ কেভিএ বিদ্যুতের সাবস্টেশন এবং ৩ হাজার ২০০ বর্গফুট মাল্টিপারপাস হলরুম রাখা হয়েছে। ভবনে স্যুয়েজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়েছে। ফলে ভেতরে ব্যবহৃত অপরিশোধিত বর্জ্য বাইরের নর্দমায় আসবে না।
ভবনে ফায়ার হাইড্রেন্ট, ফায়ার ডোর স্থাপন করা হয়েছে। বৃষ্টির পানি ধরে রাখার জন্য রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং, ৩৫ কিলোওয়াট অনগ্রিড সোলার প্যানেল, সুপরিসর ক্যান্টিন, ডে কেয়ার সেন্টার ও ব্যাংকের শাখা থাকবে। প্রতিবন্ধী ও শারীরিকভাবে অক্ষম মানুষের জন্য হুইলচেয়ার অ্যাক্সেসিবল টয়লেট রাখা হয়েছে। থাকবে ওয়াইফাই ইন্টারনেট।
মাদারীপুর গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কামরুল ইসলাম খান বলেন, ‘দেশে প্রথম সরকারি সমন্বিত অফিস ভবন নির্মাণ করা হলো মাদারীপুরে। এটিকে অনুসরণ করে গোপালগঞ্জ, মানিকগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় এ রকম ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। একসঙ্গে অনেক সরকারি অফিস থাকায় সরকারের অনেক টাকা সাশ্রয় হয়েছে। জেলার মানুষের ভোগান্তি অনেক কমে যাবে।’
সংসদ সদস্য শাজাহান খান বলেন, ‘২০১২ সালে আমি যখন নৌমন্ত্রী ছিলাম, তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এ ভবনের প্রস্তাব দেই। প্রধানমন্ত্রী আমার প্রস্তাবটি গ্রহণ করেন।’
মাদারীপুর জেলা প্রশাসক রহিমা খাতুন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এরই মধ্যে যেসব সরকারি দপ্তর ভাড়া ভবনে অফিস করত, তাদের নোটিশ দেয়া হয়েছে। তারা শিগগিরই নতুন ভবনে উঠবে। আগামী নভেম্বরের মধ্যে প্রায় সব দপ্তর নতুন ভবনে অফিস করবে। বাকিগুলোও নতুন বছরের শুরুতে উঠবে।’