সিরাজগঞ্জের রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪ শিক্ষার্থীর মাথার চুল কেটে দেয়ার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়টির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষক ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি।
রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ও ট্রেজারার আব্দুল লতিফ সোমবার নিউজবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, ‘তদন্ত কমিটি সুন্দর প্রতিবেদন দিয়েছে। কমিটির সদস্যরা সুন্দরভাবে বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছে। তার (ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
উপাচার্য আরও বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আমাদের আলাপ-আলোচনা হয়েছে। আমরা ঐকমত্যে পৌঁছেছি। তারা প্রশাসনিক ভবনের তালা খুলে দিয়েছে। আমাদের কিছু নিয়ম-কানুন বাকি আছে, এটা শেষ হলে আমরা সিন্ডিকেটের সভা ডাকব। আশা করছি, ৮-১০ দিনের সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠিত হবে।’
তদন্ত কমিটি কী তার বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছে, এমন প্রশ্নে আব্দুল লতিফ বলেন, ‘হ্যাঁ, হ্যাঁ।’
অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন তদন্ত কমিটির এক সদস্যও। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই সদস্য বলেন, ‘তদন্ত কমিটি ৩৪ জন শিক্ষার্থীর বক্তব্য নিয়েছে। এর মধ্যে ১৪ জন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী রয়েছেন। এ ছাড়া প্রত্যক্ষদর্শী ৫ জন শিক্ষক, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরের একজন সহকারী রেজিস্ট্রার এবং ৫ জন কর্মচারী রয়েছেন। সবার বক্তব্যেই ফারহানার বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। আমরা তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেছি। এখন বিষয়টি সিন্ডিকেট দেখবে।’
ফারহানা ইয়াসমিনের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে গত ২২ অক্টোবর রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ঢাকা অফিসে সিন্ডিকেট সভা ডাকা হয়েছিল। এ বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনা হলেও সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয় সভা।
বিষয়টি জানার পর রোববার সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের কান্দাপাড়ায় বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রশাসনিক ভবনের সামনে অপেক্ষমাণ শিক্ষার্থীরা জরুরি বৈঠক করে ফের আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নেন। তারা অনশন কর্মসূচি ও লাগাতার আন্দোলনের ঘোষণা দেন।
শিক্ষার্থীরা দুটি গ্রুপে ভাগ হয়ে শাহজাদপুরের কান্দাপাড়ার প্রশাসনিক ভবনের সামনে অনশন এবং বিসিক বাসস্ট্যান্ড এলাকার শাহজাদপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজের একাডেমিক ভবনের সামনে অবস্থান ধর্মঘট কর্মসূচি শুরু করেন।
এতে আবারও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস।
এর আগে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪ শিক্ষার্থীর চুল কেটে দেয়ার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি গত বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার দিকে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও ট্রেজারার আব্দুল লতিফের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, গত ২৬ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষার হলে ঢোকার সময় বিভাগের শিক্ষক ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন দরজায় কাঁচি হাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন। শিক্ষার্থীরা হলে ঢোকার সময় যাদের মাথার চুল হাতের মুঠোর মধ্যে ধরা যায়, তাদের সামনের অংশের বেশ খানিকটা কেটে দেন তিনি। এভাবে ১৪ শিক্ষার্থীর চুল কেটে দেন ওই শিক্ষক।
ওই ঘটনা নিয়ে শিক্ষার্থীরা ফেসবুকে পোস্ট দিলে বিষয়টি ভাইরাল হয়।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, ফারহানা ইয়াসমিন শিক্ষার্থীদের গালাগালি করে পরীক্ষার হলে যেতে বাধ্য করেন। এর প্রতিবাদ করলে নাজমুল হাসান তুহিন নামের প্রথম বর্ষের এক শিক্ষার্থীকে নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে গালাগালি করেন এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ী বহিষ্কারের হুমকি দেন।
ওই ঘটনার পর ‘অপমান সইতে না পেরে’ তুহিন রাতে দ্বারিয়াপুরের শাহ মুখদুম ছাত্রাবাসের নিজ কক্ষে দরজা আটকে ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। সহপাঠীরা বিষয়টি টের পেয়ে তাকে অচেতন অবস্থায় এনায়েতপুর খাজা ইউনুস আলী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন।
বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২৮ সেপ্টেম্বর রাতে শিক্ষক ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন তার বিভাগের চেয়ারম্যান পদ, সহকারী প্রক্টর পদ ও প্রক্টরিয়াল বোর্ডের সদস্য পদ থেকে লিখিতভাবে পদত্যাগ করেন।
ঘটনার তদন্তে পরে রবীন্দ্র অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান লায়লা ফেরদৌস হিমেলকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।