বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

নিষেধাজ্ঞা শেষে ইলিশ ধরতে প্রস্তুত জেলেরা

  •    
  • ২৫ অক্টোবর, ২০২১ ১০:৪৪

নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে দেখে ভোলা, চাঁদপুর, বরগুনা, ঝালকাঠিসহ দেশের ইলিশের স্পটগুলোর জেলেদের মাঝে বিরাজ করছে উন্মাদনা। নিষেধাজ্ঞার এই সময়টায় তারা নৌকা, জাল মেরামতের কাজ সেরে রেখেছেন। ঘড়ির কাঁটা কখন সোমবার রাত ১২টায় পৌঁছাবে এখন শুধু সেই অপেক্ষা।

মা ইলিশ রক্ষায় সরকারের দেয়া ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে আজ। ফের ইলিশ শিকারে নদীতে নামতে তর সইছে না জেলেদের। সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন তারা।

ভোলা, চাঁদপুর, বরগুনা, ঝালকাঠিসহ দেশের ইলিশের স্পটগুলোর জেলেদের মাঝে বিরাজ করছে উন্মাদনা। নিষেধাজ্ঞার এই সময়টায় তারা নৌকা, জাল মেরামতের কাজ সেরে রেখেছেন। ঘড়ির কাঁটা কখন সোমবার রাত ১২টায় পৌঁছাবে এখন শুধু সেই অপেক্ষা।

নদীতে নামতে প্রস্তুত ভোলার দুই লক্ষাধিক জেলে। আগে থেকেই তারা জাল, নৌকাসহ ইলিশ ধরার অন্যান্য সরঞ্জাম প্রস্তুত রেখেছেন।

মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে ফের সরগরম হয়ে উঠবে মৎস্যঘাটগুলো। খুলবে বন্ধ থাকা বরফকল। জেলেপল্লিও হয়ে উঠবে মুখর। জেলে, মৎস্যজীবী ও আড়তদারদের হাঁকডাকে মুখরিত হয়ে উঠবে আড়তগুলো।

ভোলার তুলাতলী, নাছির মাছি, ভোলার খাল, ইলিশা, শিবপুরসহ ঘাটে ঘাটে ইলিশ ধরার শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কেউ জাল বুনছেন, কেউ নৌকায় রং দিচ্ছেন, কেউ বা নৌকা-ট্রলার মেরামত করছেন।

এ বিষয়ে কথা হয় তুলাতলী ঘাটের জেলে বশির মাঝি, হারুনসহ অন্যদের সঙ্গে। তারা জানালেন, এত দিন মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদীতে মাছ ধরা বন্ধ ছিল, ধারদেনা করে চলতে হয়েছে। আবার মাছ ধরা শুরু হচ্ছে। কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ মাছ পেলে ধারের টাকা শোধ করবেন তারা।

ভোলা জেলা সমিতির সভাপতি মো. এরশাদ ফরাজি বলেন, ‘ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞা থাকায় অনেক জেলে নদীতে যায়নি, এই সময়ে সরকারের অভিযান ছিল। এত দিন জেলেরা অপেক্ষায় ছিল, কবে থেকে মাছ ধরা শুরু হবে। তাদের সেই প্রতীক্ষার পালা শেষ। তারা এখন নদীতে নামার প্রস্তুতি নিয়েছেন। জাল নৌকা নিয়ে জেলেরা নেমে পড়বেন মাছ শিকারে।

জেলা মৎস্য বিভাগ জানিয়েছে, ২১ দিনে জেলায় ৩৪২টি অভিযান পরিচালিত হয়েছে। এর মধ্যে ৩৯৯ জেলের জেল-জরিমানা করা হয়েছে। ১১৮ জেলেকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। ২৮১ জনকে জরিমানা করা হয়েছে। এ ছাড়া ৭ লাখ ৫৭ হাজার মিটার জাল এবং ২ হাজার ১৫৩ কেজি ইলিশ জব্দ করা হয়েছে। জরিমানা আদায় করা হয়েছে ১১ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ টাকা।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে ৪ অক্টোবর থেকে ইলিশ ধরা বন্ধ ছিল। ২৬ অক্টোবর থেকে মাছ ধরা শুরু হচ্ছে। এখন জেলেদের মাছ ধরতে কোনো বাধা নেই। মৎস্য বিভাগের অভিযানে নদীতে ইলিশের উৎপাদন বাড়বে। আশা করি, এ বছর ইলিশের উৎপাদন আগের চেয়ে অনেক বাড়বে।’

রাত ১২টার বাজার অপেক্ষায় আছেন বরগুনার জেলেরাও। ইতিমধ্যে জাল, ট্রলার, নৌকা মেরামত করে প্রস্তুত করে রেখেছেন তারা। প্রস্তুত সাগরযাত্রার জন্য। ট্রলারগুলোতে বাজার-সওদা আর বরফ ভর্তি করে অপেক্ষা করছেন। মধ্য রাতেই ছুটবেন।

জেলেরা জানান, ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞায় তারা আর্থিক অভাব-অনটনের মধ্য দিয়ে পার করেছেন। কমবেশি সব জেলেই ঋণগ্রস্ত হয়েছেন।

আবারও প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে পাওয়ার অপেক্ষায় বরগুনা সদর, আমতলী, পাথরঘাটা, তালতলী উপজেলার জেলেপাড়াগুলো। দীর্ঘদিন সাগরে মাছ আহরণ বন্ধ থাকায় এবার বেশি মাছ পাবেন বলে আশাবাদী জেলেরা।

সোমবার বরগুনা সদরের নিশানবাড়িয়া এলাকায় বিষখালী নদীসংলগ্ন জেলেপল্লিতে বেশ কয়েকজন জেলের সঙ্গে কথা হয়। তারা জানান, ইলিশ ধরতে সাগরে যাওয়ার জন্য সব প্রস্তুতি শেষ তাদের। জেলে শ্রমিকসহ আড়তদার, পাইকার ও ট্রলারের মালিকদের মুখে এখন হাসি। স্থানীয় মুদি-মনিহারি ব্যবসায়ীদের মধ্যেও আনন্দ বিরাজ করছে।

বরগুনা সদর উপজেলার নিশানবাড়িয়া এলাকার জেলে হারুন মিয়া বলেন, ‘২২ দিনের অবরোধ শেষ। এহন আবার সাগরে যাওনের পালা। দেহি যদি আল্লায় মুখ তুইল্লা চায়।’

পাথরঘাটা উপজেলার মঠের খাল এলাকার জেলে জাফর হাওলাদার বলেন, ‘সরকারের আইনের প্রতি সম্মান রাইক্কা শত কষ্টেও সাগরে ইলিশ শিকারে যাইনি। খাইয়া না খাইয়া কোনো রহম দিন কাডাইছি, ধারদেনা কইরা কোনো রহম সংসার চলছে। এখন দেখি আল্লাহ কী রাখছে।’

তালতলী উপজেলার সোনাকাটা গ্রামের জেলে শামীম বলেন, ‘মোগো মাছ ধরা ছাড়া কামাই নাই, মাছ ধরা বন্ধ থাকলে খাওনও বন্ধ অইয়া যায়, ২২টা দিন কবে শ্যাষ অইবে খালি অপেক্ষা হরি, আইজ নামমু রাইত ১২টার পর, আল্লায় দেলে মাছ পাইলে আবার কামাই অইবে।’

বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, ‘২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা চলতে থাকলে উপকূলের জেলেরা নিঃস্ব হয়ে পড়ে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশে অবরোধের সময়সীমা একসঙ্গে নির্ধারণ করে যাতে অবরোধ সময়সূচি করা হয়, সরকারের প্রতি আমরা এই দাবি জানাই।’

মৎস্য কর্মকর্তারা বলছেন, এ বছর যত ইলিশ ধরা হয়েছে তার দ্বিগুণ ধরা পড়বে নিষেধাজ্ঞার সময় শেষে।

বরগুনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব বলেন, ‘বরগুনায় জেলেরা সরকারের আইন মেনে নিষেধাজ্ঞাকালীন ইলিশ শিকার বন্ধ রেখেছে। আমরা তাদের সাধুবাদ জানাই। জেলেদের খাদ্য সহায়তার জন্য চাল পৌঁছে দেয়া হয়েছে। আমরা আশা করছি, দক্ষিণ উপকূলে এবার প্রচুর ইলিশ ধরা পড়বে।’

নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে দেখে উৎসব উৎসব ভাব চাঁদপুর ও লক্ষ্মীপুরের জেলেদের মাঝেও। জেলেরা নৌকা নিয়ে ভাসবেন মাছ ধরতে। তাই তারা সেরে নিচ্ছেন শেষ সময়ের প্রস্তুতি।

চাঁদপুরের হরিণা ফেরিঘাট এলাকার জেলে ইদ্রিস মিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সোমবার রাইতে শেষ অইব নিষেধাজ্ঞা। অহন আমরা জাল সিলাই কইরা ঠিক করতাছি। নিষেধাজ্ঞা শেষ অইলেই গাঙ্গো নাইমা যামু। যদি কিসমতে থাকে তয় মাছ পামু।’

নিষেধাজ্ঞার সময়টায় চলতে ফিরতে খুব কষ্ট হয়েছে বলে জানালেন অনেক জেলে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চাঁদপুরের একজন জেলে বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় মাত্র ২০ কেজি কইরা চাউল দিবে কইছিল, কিন্তু আমরা তাও পাই নাই। ১৪ জনে ১৫ কেজি পাইছি। এই দিয়া কি সংসার চলে? সংসারের খরচ চালাইতে গিয়া বিভিন্ন এনজিও আর মহাজনের কাছ তনে ঋণ নিছি। জীবনের ঝুঁকি লইয়া গাঙ্গে গিয়া মাছ ধরছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘জেলেদের যদি আর্থিক ও খাদ্য সহায়তা করত, তয় কেউ আর নিষেধাজ্ঞা ভাইঙা গাঙ্গে যাইত না মাছ ধরতে। জরিমানাও দিতে হইত না, মা ইলিশও বাঁচত।’

চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা গোলাম মেহেদী হাসান নিউজবাংলাকে জানান, নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন চাঁদপুরের নদীতে মাছ ধরার কাজে নিবন্ধিত ৪৪ হাজার ৩৫ জন জেলেকে ২০ কেজি করে চাল দেয়া হয়েছে। এরপরও মাছ ধরতে যাওয়া দুই শতাধিক জেলেকে বিভিন্ন মেয়াদে জেল-জরিমানা করাসহ প্রায় ১ কোটি মিটার কারেন্ট জাল ও এক টন ইলিশ জব্দ করেছে প্রশাসন।

এই কর্মকর্তার দাবি, মা ইলিশ রক্ষা অভিযান সফল হয়েছে। আগামীতেও ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধিতে এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে।

পাশ্ববর্তী লক্ষ্মীপুর জেলায় প্রায় ৫২ হাজার জেলের মধ্যে ৪২ হাজারের নিবন্ধন রয়েছে। তারা সবাই মেঘনা নদীতে মাছ ধরে সংসার চালান।

লক্ষ্মীপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম জানান, নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন এ পর্যন্ত নদীতে ২৫৫টি অভিযান পরিচালনা করে ১৭ জন জেলেকে জেল-জরিমানা করা হয়েছে। জব্দ করা হয়েছে ৩ লাখ মিটার জাল।

আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘অভিযান সফল হওয়ায় গত বছরের চেয়ে পাঁচ হাজার টন ইলিশ উৎপাদন বেশি হবে। এবারের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৫ হাজার টন।’

লক্ষ্মীপুরের জেলা প্রশাসক আনোয়ার হোছাইন আকন্দ বলেন, ‘প্রশাসন, পুলিশ, কোস্ট গার্ড ও মৎস্য বিভাগের যৌথ অভিযানে এবারের অভিযান সফল হয়েছে। আশা করছি, এবার ইলিশের উৎপাদন বেশি হবে।’

সাধারণত আশ্বিনের ভরা পূর্ণিমার আগে-পরে প্রায় ১৫ থেকে ১৭ দিনের মধ্যে ইলিশ মাছ ডিম ছাড়ে। এই সময়ে সাগরের নোনা জল ছেড়ে নদীমুখে ছুটে আসে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ।

মা ইলিশ রক্ষায় ৪ থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন সারা দেশে ইলিশ শিকার বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। এ সময় সারা দেশে ইলিশ আহরণ, বিপণন, ক্রয়-বিক্রয়, পরিবহন, মজুত ও বিনিময়ও নিষিদ্ধ রাখার সিদ্ধান্ত জানানো হয়।

এ বিভাগের আরো খবর