চাঁদপুরের শাহরাস্তিতে স্বামী হত্যার পাঁচ বছর পর এক নারীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। একইসঙ্গে ওই নারীকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও তিন মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক বেগম ফারহানা ইয়াসমিন আসামির উপস্থিতিতে রোববার এ রায় দেন।
সাজা পাওয়া আসামির নাম ফাতেমা আক্তার। আর হত্যার শিকার জামাল হোসেনের বাড়ি শাহরাস্তি উপজেলার মেহের উত্তর ইউনিয়নের নয়নপুর গ্রামে।
নিউজবাংলাকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বদিউজ্জামান কিরণ।
মামলায় আসামিপক্ষের আইনজীবী ছিলেন সেলিম আকবর, কাজী জুম্মান ও ইয়াসিন আরাফাত ইকরাম।
আইনজীবী বদিউজ্জামান জানান, ২০১৬ সালে ১৪ এপ্রিল ফাতেমা আক্তারের সঙ্গে তার স্বামী জামাল হোসেনের কথা কাটাকাটি হয়। তখন সন্তানদের সামনেই জামাল মারধর করেন ফাতেমাকে। জামাল তখন জন্ডিসে আক্রান্ত ছিলেন।
পরদিন রাতে জন্ডিসের তরল ওষুধের সঙ্গে আটটি ঘুমের ট্যাবলেট মিশিয়ে রাখেন ফাতেমা। জামাল বাজার থেকে ফিরে ওই ওষুধ পান করে ঘুমিয়ে পড়েন। রাত আনুমানিক ৩টার দিকে জামাল অচেতন হয়ে পড়লে তার মুখে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধে মৃত্যু নিশ্চিত করেন ফাতেমা।
আইনজীবী আরও জানান, এ ঘটনা গোপন করার জন্য ফাতেমা পাশের ঘর থেকে থেকে তার ছেলে জাহিদুল ইসলাম ফাহিমকে ঘুম থেকে তুলে তার বাবার মৃত্যুর সংবাদ দেন। পরে মা ও ছেলে একসঙ্গে বাড়ির পাশে জামালকে মাটি চাপা দেন।
সকালে ফাতেমা বাড়ির অন্যদের জানান জামাল ঢাকায় গিয়েছেন চাকরির জন্য। তবে বিষয়টিতে জামালের পরিবারের অন্য সদস্যদের সন্দেহ হয়। বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ করে জামালের কোনো সন্ধান পাওয়া যায় না।
২৮ এপ্রিল শাহরাস্তি মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন ফাতেমা। ৩০ এপ্রিল দুপুরে ফাতেমা তার আত্মীয় অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য মো. আমির হোসেনকে পুরো ঘটনা বর্ণনা করেন।
আমির হোসেন ঘটনাটি শাহরাস্তি থানায় জানালে ফাতেমা ও ফাহিমকে থানায় নিয়ে যায়। ফাতেমার দেয়া তথ্যমতে জামালের অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় ৩০ এপ্রিল আমির হোসেন শাহরাস্তি থানায় ফাতেমা ও তার ছেলে ফাহিমের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
শাহরাস্তি থানা পুলিশ ওই দিনই ফাতেমা আক্তার ও তার ছেলেকে আদালতে পাঠায়। আদালত ফাতেমাকে কারাগারে ও ফাহিমকে শিশু-কিশোর সংশোধনাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তৎকালীন শাহরাস্তি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সমির মজুমদার তদন্ত শেষে ২০১৭ সালের ৩১ জানুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন।
আইনজীবী বদিউজ্জামান জানান, পাঁচ বছর চলতে থাকা এ মামলায় ২০ জনের সাক্ষ্য নেয়া হয়। সাক্ষ্যগ্রহণ ও নথিপত্র পর্যালোচনা শেষে আসামির উপস্থিতিতে বিচারক রোববার রায় দেন।