বিদেশ থেকে পণ্য আনতে জাহাজ মিলছে না। ফলে বিভিন্ন দেশে আটকা পড়ে আছে আমদানি পণ্য। এতে ব্যাংক লোনের সুদসহ আমদানি খরচ বাড়ছে।
অন্যদিকে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় গত এক মাসে জাহাজ ভাড়া বেড়েছে পাঁচ গুণের বেশি। এতে হুমকিতে পড়েছে পণ্য আমদানি। এর প্রভাব পড়ছে উৎপাদনসহ নানা খাতে।
জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির কয়লা তোলা বন্ধ আছে অ্যামোনিয়ার অভাবে। জাহাজের অভাবে মধ্যপ্রাচ্য থেকে কেনা এই গ্যাস আনতে পারছে না খনি কর্তৃপক্ষ।
অন্যদিকে কাতারসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা লিকুইড ন্যাচারাল গ্যাস বা এলএনজি আমদানিতে বড় ধরনের ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে সরকারকে। যে এলএনজি কেনা হয়েছে, তা পরিবহনের জাহাজ মিলছে এক থেকে দেড় মাসের মাথায়।
কয়লা পরিবহনেও একই ধরনের ঝক্কি পোহাতে হচ্ছে জ্বালানি বিভাগকে। কয়লাবাহী জাহাজগুলোর বহর গত কয়েক মাস ধরে দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া বা ইন্দোনেশিয়া থেকে চীনের দিকে যাতায়াত করছে।
মন্ত্রণালয় বলছে, তেল, গ্যাস, কয়লার মতো জ্বালানি পরিবহনকারী সমুদ্রগামী জাহাজগুলো বিশেষভাবে তৈরি। করোনার ঢেউ নিয়ন্ত্রণের পর জ্বালানী মজুত ও ব্যবহারে চীনের আগ্রাসী ভূমিকার ফলে অন্য দেশগুলো বিপদে পড়েছে। জ্বালানিবাহী জাহাজগুলো এখন চীনের পণ্য পরিবহনেই ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে।
একই অবস্থা দেখা যাচ্ছে অন্যান্য খাতেও। খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার নিউজবাংলাকে বলেন, গত এক মাসে জাহাজ ভাড়া বেড়েছে পাঁচ গুণ।
তিনি বলেন, ‘সেপ্টেম্বর মাসে আমরা রাশিয়া থেকে ২ লাখ টন গম সরকারিভাবে ক্রয় করি। তখন টন প্রতি দর ছিল ২৫০ ডলার। এক সপ্তাহের মধ্যে আমরা আরও ২ লাখ টন গম আনার সিদ্ধান্ত জানাই। কিন্তু তখন জাহাজ মিলছিল না। দুই সপ্তাহ পর যখন জাহাজ মিলল, তখন দর বেড়ে দাঁড়িয়েছে টন প্রতি ৩৬৬ ডলার।
‘আমরা তখন ইউক্রেনে যোগাযোগ করি। তারা কিছুটা কম দরে আমাদের গম দিতে রাজি হলেও শর্ত হিসেবে নিজেদের জাহাজে করে তা পরিবহনের কথা বলে। কিন্তু আমরা সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করি।’
তিনি বলেন, বেসরকারি খাতের চিত্রও একই। কেবল ট্যাংকার, বাল্ক জাহাজই নয়, কন্টেইনার জাহাজের ক্ষেত্রেও একই চিত্র দেখা যাচ্ছে।
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি আমিনুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ভাড়া নির্ধারণ করে ভেসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন। বিভিন্ন খাতে তাদের খরচ বেড়েছে। জ্বালানি তেলসহ নানা খরচ বাড়ায় গত কয়েক মাসে ভাড়া বেড়েছে চার থেকে ছয় গুণ।’
তিনি বলেন, ‘বাল্ক ও ট্যাংকারের ক্ষেত্রে যে সংকট, তার পেছনে রয়েছে চীন। তারা খাদ্যপণ্য, কেমিক্যাল ও জ্বালানি ভেসেলগুলোকে ব্যস্ত রেখেছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে তেল, গ্যাস ও কয়লা আমদানি করে মজুদ গড়ে তোলার কথা শোনা যাচ্ছে দেশটির বিরুদ্ধে। অন্যদিকে বিভিন্ন দেশে কেমিক্যাল ও পণ্য রপ্তানি বাড়াতেও তারা আগ্রাসী।
‘প্যানডেমিক নিয়ন্ত্রণে আসার পর অনেক দেশে রপ্তানি বেড়ে গেছে। বিশেষ করে কন্টেইনারের ক্ষেত্রে। এখন সব কন্টেইনার ইউরোপ-আমেরিকামুখী। ফলে কলম্বো ও সিঙ্গাপুর থেকে কন্টেইনার ভাড়া বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। কেউ তো খালি কন্টেইনার আনবে না।’
এদিকে সংগঠনের বর্তমান সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাল্ক জাহাজের ভাড়া বেড়েছে সার্বিকভাবে চার গুণ। ফলে দেশে চাল, সার, গম, পাথর, কেমিক্যাল, অ্যাশ আসা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। এর প্রভাব পড়ছে নানা ক্ষেত্রে।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, বিশ্বের বিভিন্ন বন্দরে জাহাজ-জট এবং খালি কন্টেইনারের ঘাটতির কারণে সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহন ভাড়া (ফ্রেইট চার্জ) বাড়িয়েছে শিপিং লাইনগুলো। এতে আমদানি-রপ্তানি খরচ বেড়ে যাওয়ায় দেশের পাইকারি ও খুচরা বাজারে বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়ছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, শ্রীলঙ্কার কলম্বোসহ কয়েকটি বন্দরে জাহাজ ও কন্টেইনারের তীব্র জট তৈরি হয়েছে। ফলে বিশ্বব্যাপী আমদানি-রপ্তানির কন্টেইনার সংকট দেখা দিয়েছে। যার কারণে ফ্রেইট চার্জ বাড়িয়ে দিয়েছে শিপিং লাইনগুলো।
ফিডার জাহাজ অপারেটররা চট্টগ্রাম থেকে কলম্বো, সিঙ্গাপুরসহ আশপাশের বন্দরে পণ্য বোঝাই প্রতিটি কন্টেইনার পরিবহনে ফ্রেইট চার্জ ৭০ ডলার পর্যন্ত বাড়িয়েছে। এ ছাড়া প্রতিটি খালি কন্টেইনার পরিবহনে চার্জ বাড়ানো হয়েছে ৪০ ডলার পর্যন্ত।