ছিনতাই চক্রের সবাই ইয়াবা আসক্ত। ইয়াবার টাকা জোগাড় করতেই নিয়মিত ছিনতাই করে তারা।
গত ১৫ অক্টোবর রাতে গাজীপুরের কালীগঞ্জ পূর্বাচলের ফাঁকা রাস্তায় চালক সাইফুল ইসলামকে ধারালো ছুরি দিয়ে গলা কেটে হত্যা করে তার অটোরিকশা ও মোবাইল নিয়ে পালিয়ে যায় এই চক্রের সদস্যরা। পরে স্থানীয়রা নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই মারা যান সাইফুল।
এ ঘটনায় শনিবার রাতে ছিনতাই চক্রের ৬ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-১। এ সময় তাদের কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরি ও ছিনতাইকৃত অটোরিকশা সহ অন্যান্য আলামত উদ্ধার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- আজিজুল ইসলাম, মো. ইমন খান, মেহেদী হাসান হৃদয় প্রকাশ মাসুম, বিজয় আহম্মেদ, আলাউদ্দিন ও মো. আরজু মিয়া।
রোববার বিকেল পাঁচটায় কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-১-এর অধিনায়ক (সিও) লে. কর্ণেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন।
তিনি বলেন, ‘গত ১৫ অক্টোবর রাতে গাজীপুর কালীগঞ্জ পূর্বাচলের ২৬ নং সেক্টরের ২০২ নং সড়কের ৫৮ নং ব্রিজ এলাকায় সাইফুল ইসলাম খুন হন। পরে নিহতের বড় ভাই শাহ আলম গাজীপুরের কালীগঞ্জ থানায় একটি মামলা করেন। মামলার ছায়া তদন্ত শুরু করে র্যাব-১। এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার রাতে রাজধানীর উত্তরখান ও গাজীপুরের পূবাইল থেকে ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা জানান, গত ১৫ অক্টোবর বিকেলে আজিজুল ইসলাম, ইমন ও পলাতক আসামী জুয়েল অটোরিকশা চালকের হাত-পা বেঁধে ও মুখে কচটেপ লাগিয়ে ইজিবাইক ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করেন।
পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা সহযোগী বিজয় ও হৃদয় প্রকাশ মাসুমকে ফোন করে উত্তরখান ময়নারটেক এলাকায় আসতে বলেন। পরে একত্রিত হয়ে ময়নারটেক থেকে হরদি যাওয়ার জন্য সাইফুল ইসলামের অটোরিকশাটি দুইশ টাকায় ভাড়া করেন।
অটোরিকশাটি ঘটনাস্থলে পৌঁছামাত্রই জুয়েল ছুরি দিয়ে চালক সাইফুল ইসলামের গলায় পোচ দেন। পরে আজিজুল তার কাছে থাকা ছুরি দিয়ে এবং ইমন জুয়েলের ছুরি নিয়ে সাইফুলের শরীরের অন্যান্য স্থানেও আঘাত করেন। এসময় জুয়েল ভিকটিমের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন নিয়ে নেন এবং তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় রাস্তায় ফেলে দেন। ইমন অটোরিকশা চালিয়ে গাজীপুরের পুবাইল মিরের বাজারে দিকে পালিয়ে যান।
জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, গ্রেপ্তারকৃতরা একটি সংঘবদ্ধ অটোরিকশা ছিনতাই চক্রের সদস্য। এই চক্রের নেতা আলাউদ্দিন। অটোরিকশা চালক পরিচয়ের আড়ালে সংঘবদ্ধভাবে অটোরিকশা ছিনতাই করাই তার আসল কাজ। ১০-১২ জনের সংঘবদ্ধ দলটি রাজধানীর উত্তরখান, টঙ্গি ও গাজীপুর এলাকায় অটোরিকশা ছিনতাই করে আসছিল নিয়মিত।
চক্রের অন্যতম সদস্য আজিজুল ও আরজু ছিনতাইকৃত অটোরিকশা এবং অন্যান্য মালামাল বিক্রি করেন।
র্যাব-১ অধিনায়ক লে. কর্ণেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন বলেন, ‘অল্প টাকায় চক্রের সদস্যরা ছিনতাইয়ে ভাড়ায় অংশ নেয়। এই ঘটনার আগেও তারা ৪-৫টি ছিনতাই করেছে। চক্রের সবাই মাদকসেবী। তারা ইয়াবার টাকা ও হাত খরচ জোগাতেই নিয়মিত ছিনতাই করে।’
মোমেন জানান, খুব অল্প দামে কয়েক হাত বদলে ছিনতাই করা অটোরিকশা বিক্রি করে চক্রটি। সর্বশেষ অটোরিকশাটি তারা ৬০ হাজার টাকার চুক্তিতে ছিনতাই করলেও এটি বিক্রি করেছিল মাত্র ২০ হাজার টাকায়।
তিনি বলেন, ‘যেহেতু অটোরিকশার কোনো রেজিস্ট্রেশন নম্বর নেই। তাই ছিনতাই হলেও এই বাহন খুঁজে বের করা খুব কঠিন। অটোরিকশার ব্যাটারির দাম বেশি। চক্রের নেতা আলাউদ্দিন এসব ব্যাটারি বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে দেয়।’
গাজীপুর, টঙ্গি, পূবাইল ও পূর্বাচল এলাকায় এ ধরনের ৮-১০টি ছিনতাই চক্র সক্রিয় আছে বলেও জানান র্যাব অধিনায়ক। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।