বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ঋণের টাকা পরিশোধে শিশু অপহরণ

  •    
  • ২৪ অক্টোবর, ২০২১ ২১:১১

প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব-৪ টানা দুই দিন অভিযান পরিচালনা করে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের চরাঞ্চলে একটি বাসা থেকে অপহৃত শিশু আফিয়াকে উদ্ধার করে। এ সময় অপহরণকারী রানা আহমেদ বাকিকে গ্রেপ্তার করা হয়।

২০০৯ সালে জমি বিক্রি ও ঋণের টাকা দিয়ে দুবাই যান রানা আহমেদ বাকি। সঠিক কাগজপত্র না থাকায় ২৩ দিন জেল খেটে দেশে ফিরে আসেন তিনি। দেশে আসার পর রিকশা চালিয়ে ঋণের টাকা পরিশোধ করতে পারছিলেন না। শিশু আফিয়াকে অপহরণ করে মুক্তিপণের টাকা দিয়ে ঋণের ৩-৪ লাখ টাকা পরিশোধের পরিকল্পনা করেন তিনি।

আফিয়া অপহরণের পর তার বাবা-মা প্রথমে থানায় গেলে থানা থেকে পাঠানো হয় র‌্যাব-৪ এ। তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে র‌্যারের একটি আভিযানিক দল টানা দুই দিন অভিযান চালিয়ে রোববার ভোর ৬টায় সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের চরাঞ্চলে একটি বাসা থেকে অপহৃত শিশু আফিয়াকে উদ্ধার করে।

এ সময় অপহরণকারী রানা আহমেদকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-৪।

রোববার বিকেলে কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-৪ এর অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক।

তিনি বলেন, গত বৃহস্পতিবার আনুমানিক দুপুর ১টার সময় আশুলিয়া পল্লীবিদ্যুৎ, কবরস্থান রোড এলাকা থেকে তিন বছর ছয় মাস বয়সী শিশু আফিয়া অপহৃত হয়। ওই ঘটনার দিনই অপহরণকারী মোবাইল ফোনে শিশুটির বাবা-মার কাছে চার লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবী করে। টাকা না দিলে শিশুটিকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। এই অভিযোগের ভিত্তিতে র‌্যাব-৪ এর একটি গোয়েন্দা দল অপহরণকারীর অবস্থান শনাক্তে ছায়া তদন্ত শুরু করে। প্রথমে অপহরণকারীর নিজ জেলা পাবনা এবং শ্বশুড় বাড়ি নাটোরের বড়াই গ্রামে অভিযান পরিচালনা করে তথ্য সংগ্রহ করে।

অপহরণকারী রানা আহমেদকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-৪। ছবি: নিউজবাংলা

সর্বশেষ গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায় যে, অপহরণকারী সিরাজগঞ্জ জেলার শাহাজাদপুরে দুর্গম চরাঞ্চলে অবস্থান করছে।

তিনি আরও বলেন, প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব-৪ টানা দুই দিন অভিযান পরিচালনা করে সিরাজগঞ্জ শাহজাদপুর ১০ নং কৈজুরি ইউপি ৭ নং ওয়ার্ডের বাঁধের স্লুইসগেট এলাকার একটি বাসা থেকে অপহৃত শিশু আফিয়াকে উদ্ধার করে। এ সময় অপহরণকারী রানা আহমেদ বাকিকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার আসামিকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, অপহরণকারী রানা আহমেদ বাকি ২ বছর ধরে আশুলিয়া পল্লীবিদ্যুৎ কবরস্থান রোড এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করে আসছে। অপহরণকারী পেশায় একজন রিকশাচালক। সে বেশিরভাগ সময় রাত্রে রিকশা চালাত, দিনে বাসায় থাকত এবং মাঝে মাঝে স্থানীয় একটি কয়েল ফ্যাক্টরিতে কাজ করত বলে জানা যায়।

সে বাসা ভাড়া নেয়ার সময় সে ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে তার বাড়ি মানিকগঞ্জ জেলায় এবং নানির বাড়ি ধামরাই থানায় বলে জানায়। সে নিজেকে অবিবাহিত বলে পরিচয় দিত। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সে বিবাহিত এবং দুই সন্তানের বাবা। তার বড় মেয়ের বয়স ৯ বছর এবং ছোট ছেলের বয়স ১০ মাস। তার বাড়ি পাবনা ভাউডাঙ্গা গ্রামে।

কীভাবে অপহরণ হলো আফিয়া

র‌্যাব জানায়, ভিকটিম শিশুটির বাবা আবুল কালাম আজাদ ও মা সোনিয়া বেগম দুজনই গার্মেন্টসে চাকরি করার কারণে মেয়েকে দীর্ঘ দিনের পরিচিত আনোয়ারা নামের বৃদ্ধার বাসায় রেখে অফিসে যেতেন। এই বৃদ্ধা তাদের সম্পর্কে নানি হন। এই বৃদ্ধার পাশের রুমে অপহরণকারী রানা এক হাজার টাকা ভাড়ায় বসবাস করতেন।

সেই সুবাদে প্রায় সময়ই ভিকটিম শিশুটি তার কাছে যাতায়াত করত। পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক অপহরণকারী রানা ভিকটিম শিশু আফিয়াকে মাঝে মাঝে চকলেট, চিপস্ ও খেলনা কিনে দিয়ে সখ্যতা গড়ে তোলে এবং শিশু আফিয়া তাকে মামা বলে ডাকে।

অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক বলেন, এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে চার লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায়ের জন্য রানা শিশুটিকে অপহরণের পরিকল্পনা করে। অপহরণকারী রানা আহমেদ ২০০৯ সালে জমি-জমা বিক্রি ও ঋণ করে দুবাই যায়। কিন্তু সঠিক কাগজপত্র না থাকায় ২৩ দিন জেল খেটে দেশে ফেরত আসেন। দেশে আসার পর থেকে সে রিকশা চালিয়ে ঋণের টাকা পরিশোধ করতে পারছিলেন না।

ঋণের ৩-৪ লাখ টাকা পরিশোধের জন্য সে এই অপহরণের পরিকল্পনা করে বলে স্বীকার করেছেন। পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক, শিশুটির বাবা-মা দুজনেই বাসায় না থাকায় শিশুটিকে অপহরণ করার উদ্দেশ্যে প্রথমে তাকে একটি চিপস্ কিনে দিয়ে পল্লীবিদ্যুৎ থেকে রিকশা করে বলিভদ্র বাজারে যায়। সেখান থেকে শিশুটিকে গেঞ্জি ও সেন্ডেল কিনে দেয়। পরবর্তীতে বলিভদ্র থেকে বাসে করে চন্দ্রা যায়।

তিনি আরও বলেন, চন্দ্রা বাসষ্ট্যান্ড থেকে বাসে করে সিরাজগঞ্জ শাহজাদপুরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। সিরাজগঞ্জ শাহজাদপুর এলাকায় তার এক বন্ধু রবিউলের বাড়ীতে পৌঁছে। তার বন্ধুকে সে শিশুটি তার নিজের মেয়ে বলে পরিচয় দেয় এবং বন্ধুকে জানায় তার স্ত্রীর সঙ্গে বনিবনা হচ্ছে না বিধায় কিছুদিন থেকে চলে যাবে।

এ বিভাগের আরো খবর