ফরিদপুরের সালথায় আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের সময় পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
সালথা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে শনিবার রাত থেকে রোববার এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুর বর মোল্যা ও দলের বিদ্রোহী প্রার্থী রফিক মোল্যার সমর্থকদের মধ্যে শনিবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কয়েক দফা সংঘর্ষে পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে মামলা করেন সালথা থানার পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. হান্নান।
শনিবারের সংঘর্ষের জেরে রোববার সকালেও বেশ কয়েকটি ঘরবাড়ি ভাঙচুর করা হয়। হামলা ও গ্রেপ্তারের ভয়ে এলাকার অনেক পুরুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে গেছেন।
সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আশিকুজ্জামান নিউজবাংলাকে জানান, পুলিশের করা মামলায় ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দুই পক্ষের সংঘর্ষে একজন নিহতের ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। এলাকায় এখনও উত্তেজনা চলায় মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ।
উপজেলার যদুনন্দী ইউনিয়নের খারদিয়া এলাকার আরিফুল ইসলাম শনিবার নিউজবাংলাকে জানান, আসন্ন যদুনন্দী ইউপি নির্বাচনে গত ১৮ অক্টোবর আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আব্দুর বর মোল্যা মনোনয়নপত্র জমা দেন। আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেন রফিক মোল্যা ও নুরুজ্জামান টুকু ঠাকুর।
বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিলেও রফিকের সঙ্গে বিরোধের জেরে টুকু আব্দুর বর মোল্যা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর মিয়ার সমর্থক হিসেবে কাজ করেন।
নির্বাচন নিয়ে পূর্ববিরোধের জেরে শনিবার সকাল থেকে খারদিয়া এলাকায় রব ও রফিকের সমর্থকরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে জড়ো হতে থাকেন। বেলা ২টার দিকে শুরু হয় সংঘর্ষ। কয়েক দফা সংঘর্ষে আহত প্রায় ৩০ জনকে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকেল ৪টার দিকে রফিক মোল্যার সমর্থক মারিজ শিকদারের মৃত্যু হয়।
তার মৃত্যুর সংবাদে রফিক মোল্যার অনুসারীরা আব্দুর রব মোল্যার সমর্থকদের প্রায় ৫০টি বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট চালান।
স্থানীয় জালাল শেখ বলেন, ‘শুধু বাড়িঘর ভাঙচুরই নয়, গরু-ছাগলসহ বিভিন্ন মাল লুটপাট করা হয়েছে। এলাকার নারী ও শিশুরা আতঙ্কের মধ্যে দিন পার করছে। পুরুষরা বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন।’
মারিজের বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, রোববার বিকেলে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে।
তার বোন শিল্পী আকতার জানান, মারিজ অন্যের জমিতে কাজ করে সংসার চালাতেন। তার দুই বছরের একটি মেয়ে আছে। পরিবারের পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি চলছে। তারা এই হত্যার সঠিক বিচার চান।
সংঘর্ষ ও হামলার ঘটনার পর থেকে আব্দুর রব মোল্যা, রফিক মোল্যা, নুরুজ্জামান টুকু ঠাকুর ও আলমগীর মিয়ার সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তারা কেউ ফোন ধরেননি।