বিশ্বে ৯০ শতাংশের বেশি ক্যানসার শনাক্ত হয় পরমাণু প্রযুক্তি পিইটি-সিটির (পজিট্রন ইমিশন টোমোগ্রাফি ও কম্পিউটেড টোমোগ্রাফি) মাধ্যমে। এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকায় ক্যানসার নির্ণয় সম্ভব বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের আওতাধীন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ নিউক্লিয়ার মেডিসিন অ্যান্ড অ্যালায়েড সায়েন্সেসেস (নিনমাস)।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে সাইক্লোট্রন সুবিধাসহ পিইটি-সিটি ল্যাব স্থাপনকালে রোববার দুপুরে এ তথ্য জানান পরমাণু শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. সানোয়ার হোসেন।
তিনি বলেন, ‘নিজস্ব সাইক্লোট্রন স্থাপনের ফলে ক্যানসার নির্ণয়ের খরচ কয়েক গুণ কমে আসবে। আগে রেডিও আইসোটোপ আমদানি বা বেসরকারি ল্যাব থেকে কিনতে হতো। ফলে খরচ বেশি হতো। আমরা এই ল্যাব থেকে এখন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের ল্যাবে রেডিও আইসোটোপ সরবরাহ করব।
‘এখন থেকে সরকারিভাবে পরমাণু কমিশনের ল্যাবে মাত্র ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকায় পিইটি-সিটির মাধ্যমে ক্যানসার নির্ণয় করা যাবে। এর আগে সরকারিভাবে ৩৫ হাজার ও বেসরকারিভাবে ৬০ হাজার টাকা খরচ হতো।’
সাইক্লোট্রন সুবিধাসহ পিইটি-সিটি ল্যাবের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান বলেন, ‘এই সুবিধাদির ফলে দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠী বিশেষভাবে উপকৃত হবে এবং পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার আরও শক্তিশালী হবে। পর্যায়ক্রমে এসব সুবিধাদি দেশের বিভিন্ন সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ক্যাম্পাসে অবস্থিত পরমাণু চিকিৎসা কেন্দ্রে স্থাপন করা হবে।
‘বর্তমানে ১৫টি পরমাণু চিকিৎসা কেন্দ্র চালু রয়েছে। নির্মাণ করা হচ্ছে আরও আটটি। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ নিউক্লিয়ার মেডিসিন অ্যান্ড অ্যালায়েড সায়েন্সেসেস (নিনমাস)।’
সাইক্লোট্রন ল্যাব কী?
এটি এমন একটি উদ্ভাবন, যার মাধ্যমে নিউক্লিয়ার বিক্রিয়ার সাহায্যে মানব চিকিৎসা এবং গবেষণার জন্য তেজস্ক্রিয় পদার্থ উৎপাদন করা যায়। নিনমাসে IBA Cyclone 18/9 MeV সাইক্লোট্রনটির মাধ্যমে তেজস্ক্রিয় পদার্থ 18F-FDG ব্যবহার করে বিভিন্ন রোগীদের ক্যানসার নির্ণয় করা হচ্ছে। সাইক্লোট্রনের মাধ্যমে আরও কিছু পদার্থ উৎপাদন করা যায়, যেগুলো ক্যানসারসহ অন্যান্য রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়।
পিইটি-সিটি স্ক্যানের কাজ কী
যেসব স্থানে কোষগুলো বেশি সক্রিয় থাকে, পিইটি স্ক্যান কেবল সেসব স্থানের তথ্যচিত্র দেয়। অন্যদিকে সিটি স্ক্যানের মাধ্যমে কোনো স্থানের গঠনগত এবং অবস্থানগত তথ্যচিত্র পাওয়া যায়।
এই দুটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয়ে গঠিত স্ক্যানারে একটি ফিউশন ইমেজ একই সময়ে পাওয়া যায়। এ দুটি ইমেজের সমন্বিত ইমেজটি দিয়ে একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক শরীরের যেসব স্থানে কোষগুলো অধিক সক্রিয় বা ক্যানসারে আক্রান্ত, তা সঠিকভাবে নির্ণয় করতে পারেন। তারা কোনো বেদনাদায়ক পদ্ধতি ছাড়াই রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা শুরু করেন।
ক্যানসার শনাক্তের সিংহভাগই করা হয় পিইটি-সিটি ব্যবহার করে। আর সাইক্লোট্রন মেশিনে উৎপাদিত আইসোটোপ পিইটি-সিটিতে ব্যবহার করেই পরীক্ষাটি সম্পন্ন হয়।
কমবে বিদেশনির্ভরতা
কিছুদিন আগেও ক্যানসার পরীক্ষা করতে বিদেশে যেতে হতো। ২০১০ সালের পর থেকে সীমিত পরিসরে এ রোগ নির্ণয় শুরু হয় বাংলাদেশে।
নিউক্লিয়ার প্রযুক্তির পদ্ধতির ব্যবহারে এগিয়ে আসে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন।
এ বিষয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ফলে এ খাতে এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার পথে বাংলাদেশ। এ ছাড়া চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণাতেও এই ল্যাব ভালো অবদান রাখবে।
তিনি বলেন, এই যন্ত্র ও ল্যাব স্থাপনের ফলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাত আরও এগিয়ে যাবে।
‘সাইক্লোট্রন ও পিইটি-সিটি’ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে খরচ হয়েছে ১৫০ কোটি টাকা।