সিরাজগঞ্জের রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয় দিনের অনশনে বগুড়া-নগরবাড়ি মহাসড়ক অবরোধের চেষ্টা করেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষক ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনের বহিষ্কারের দাবিতে চলা এই কর্মসূচিতে এক শিক্ষার্থী ‘বিষপানে’ আত্মহত্যার চেষ্টা করলে সড়ক অবরোধে একজোট হন আন্দোলনকারীরা।
তবে স্থানীয়দের অনুরোধে তারা সড়ক থেকে সড়ে যান।
বিশ্ববিদ্যালয়ে বিসিক বাসস্ট্যান্ড এলাকার একাডেমিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে রোববার সকাল থেকে এই কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।
দুপুরের দিকে অনশনে বক্তব্য দেয়ার সময় পকেট থেকে ছোট বোতল বের করে তরল জাতীয় কিছু পান করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মো. শামীম। তিনি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগে পড়েন।
এর পরপরই শিক্ষার্থীরা বগুড়া-নগরবাড়ি মহাসড়ক অবরোধের চেষ্টা করেন।
আন্দোলনরত আরেক শিক্ষার্থী সোহেল মাহমুদ জানান, শামীকে সঙ্গে সঙ্গে শাহজাদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়।
হাসপাতালের চিকিৎসক সোহেল রানা নিউজবাংলাকে জানান, শামীমকে ২৪ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। তিনি শঙ্কামুক্ত।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী আবু জাফর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা শনিবার সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের সামনে আমরণ অনশন শুরু করেছি। শিক্ষক ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনকে বহিষ্কার করা না পর্যন্ত এই আন্দোলন চলিয়ে যাব।’
এদিকে রোববার সকালে তদন্ত কমিটির প্রধান সহ অন্যান্য শিক্ষকেরা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কাছে যান, তাদের বোঝানোর চেষ্টা করেন। সিন্ডিকেট সভায় আইনী প্রক্রিয়ায় এ সমস্যার সমাধান হবে বলেও মনে করেন তারা। তবে তাদের কধায় শিক্ষার্থীরা আশ্বস্ত না হয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।
রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪ শিক্ষার্থীর চুল কেটে দেয়ার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি গত বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার দিকে রবীন্দ্র উপাচার্য ও ট্রেজারার আব্দুল লতিফের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। এরপর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে শুক্রবার বিকেলে ঢাকা অফিসে সিন্ডকেট বৈঠক ডাকেন ভিসি। বৈঠক হলেও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
এ বিষয়ে আন্দোলনকারীদের পক্ষে শিক্ষার্থী শামীম হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শুক্রবারের সিন্ডিকেট বৈঠকে শিক্ষিকা ফারহানা ইয়াসমিনকে স্থায়ীভাবে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত আশা করেছিলাম, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়ে আমাদের পরীক্ষার হলে ফিরে যেতে বলে। আমরা তাদের এ আদেশ গ্রহণ না করে শিক্ষিকা ফারহানার বহিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত আবারও আন্দোলন শুরু করেছি।’
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (দায়িত্বপ্রাপ্ত) ও কোষাধ্যক্ষ আব্দুল লতিফের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি।
২৬ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষার হলে ঢোকার সময় বিভাগের চেয়ারম্যান ও সহকারী প্রক্টর ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন দরজায় কাঁচি হাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন। শিক্ষার্থীরা হলে ঢোকার সময় যাদের মাথার চুল হাতের মুঠোর মধ্যে ধরা যায়, তাদের সামনের অংশের বেশ খানিকটা কেটে দেন তিনি। এভাবে ১৪ শিক্ষার্থীর চুল কেটে দেন ওই শিক্ষক।
ওই ঘটনা নিয়ে শিক্ষার্থীরা ফেসবুকে পোস্ট দিলে বিষয়টি ভাইরাল হয়। বিষয়টি নিয়ে দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। শিক্ষক ফারহানার শাস্তির দাবিতে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে দফায় দফায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বৈঠক হয়। মীমাংসা না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা বর্জনের সিদ্ধান্ত নেন।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, ফারহানা ইয়াসমিন শিক্ষার্থীদের গালাগালি করে পরীক্ষার হলে যেতে বাধ্য করেন। এর প্রতিবাদ করলে নাজমুল হাসান তুহিন নামের প্রথম বর্ষের এক শিক্ষার্থীকে নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে গালাগালি করেন এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ী বহিষ্কারের হুমকি দেন।
ওই ঘটনার পর ‘অপমান সইতে না পেরে’ তুহিন রাতে দ্বারিয়াপুরের শাহ মখদুম ছাত্রাবাসের নিজ কক্ষে দরজা আটকে ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। সহপাঠীরা বিষয়টি টের পেয়ে তাকে অচেতন অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করেন।
এ ঘটনার পর থেকে শিক্ষক ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনের শাস্তির দাবিতে দফায় দফায় আন্দোলন করেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা।