সশরীরে উপস্থিত থেকে পায়রা সেতুর উদ্বোধন করতে না পারায় আক্ষেপ করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। করোনা মহামারির প্রকোপ আরও কমে স্বাভাবিক দিন এলে সেতুটি দেখতে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।
পটুয়াখালীর লেবুখালীতে পায়রা নদীর ওপর পায়রা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রোববার সকালে গণভবন প্রান্ত থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে এ কথা বলেন সরকারপ্রধান।
তিনি বলেন, ‘আমি নিজে উপস্থিত থেকে যদি ওই সেতুর ওপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে একটু যেতে পারতাম বা একটু নেমে যদি দাঁড়াতে পারতাম, পায়রা নদীটা দেখতে পারতাম! যে নদীতে আমি সবসময় স্পিড বোটে চড়েছি। সেখানে যদি একটু ব্রিজের ওপর হাঁটতে পারতাম! সত্যি খুব ভালো লাগত।’
মহামারিকালে গণভবনের জীবনকে আবারও বন্দি দশা বললেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘করোনার কারণে আসলে একরকম বন্দিজীবন বলতে গেলে, সেজন্য আর সেটা হলো না। আমার আকাঙ্ক্ষা আছে, একদিন গাড়ি চালিয়ে এই নতুন সেতুটা, আধুনিক প্রযুক্তির দৃষ্টিনদন্দন একটা সেতু তৈরি হয়েছে, সেটা দেখতে যাব। আমি আসব, এটা হল বাস্তব।’
পায়রা সেতুর ফলে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে সড়ক যোগাযোগের নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। শেষ হয়েছে বরিশাল-কুয়াকাটা রুটে ফেরির দিন।
১ হাজার ৪৭০ মিটার দীর্ঘ এবং ১৯ দশমিক ৭৬ মিটার প্রস্থের এ সেতুর উভয় পাড়ে প্রায় সাত কিলোমিটার অ্যাপ্রোচ সড়ক রয়েছে। এটি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সেতু।
গণভবন প্রান্ত থেকে ভার্চুয়ালি পায়রা সেতুর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: টিভি ফুটেজ থেকে নেয়া
৮০-এর দশকের পটুয়াখালীর বেহাল যোগাযোগের বর্ণনা ওঠে আসে প্রধানমন্ত্রীর কণ্ঠে। তিনি বলেন, ‘৮০-এর দশকে একবার আমরা, আমার ছেলে-মেয়ে, রেহানা কুয়াকাটায় যাব রওনা হয়েছিলাম। একটার পর একটা ফেরি পার হতে হতে আমরা প্রায় ক্লান্ত হয়ে পটুয়াখালী পৌঁছালাম। কিন্তু পটুয়াখালী থেকে কিছুতেই কুয়াকাটা যেতে পারলাম না। কারণ ঘন কুয়াশার জন্য লঞ্চ পেলাম না। নদী পার হওয়া গেল না। যেতে পারিনি, পটুয়াখালী থেকে ফিরে আসি।’
আরও একবার কুয়াকাটা গিয়ে বৈশাখী পূর্ণিমার চাঁদ দেখতে ব্যর্থ হয়েছিলেন বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আরেকবার কুয়াকাটা গেলাম। অনেক কষ্ট করে। অনেকগুলো ফেরি পার হয়ে। ওই অঞ্চলে মিটিং করার জন্য গেলাম। শুরু হয়ে গেল ঝড়। খুব আকাঙ্ক্ষা ছিল, কুয়াকাটায় একই জায়গায় দাঁড়িয়ে সাগরের ভেতরে সূর্য ডোবা, সূর্য উদিত হয়…।
‘সূর্য যখন অস্ত যায়, তারপর দেখি আমরা চাঁদ উঠে আসে। বৈশাখী পূর্ণিমা দেখব, সেই আকাঙ্ক্ষা নিয়ে গেলাম। এরপর এমন ঝড় বৃষ্টি যে আমাদের কোনোমতে টিকে থাকাই মুশকিল ছিল। তেমন পাকা দালান টালান কোনো কিছুই ছিল না। ছোট্ট একটা ডাক বাংলো। ভাঙন শুরু হলো, ওখানে থাকাটাও দুঃসহ।’
নিজের অভিজ্ঞতার কারণেই প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, এই জনপদের যোগাযোগ ব্যবস্থাটা বদলে দিতে হবে।
তিনি বলেন, ‘তারপর থেকেই আকাঙ্ক্ষা ছিল যোগাযোগ ব্যবস্থাটা আমাদের করতে হবে। চমৎকার একটা জায়গা, আমাদের দেশের মানুষ দেখতে পাবে না, এটা হতে পারে না। তা ছাড়া, আসলে ওই অঞ্চলে কিচ্ছু ছিল না, কিছুই না।’