দেশের দক্ষিণাঞ্চলে সড়ক যোগাযোগের নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। খুলে দেয়া হয়েছে পটুয়াখালীর লেবুখালীতে পায়রা নদীর ওপর বহুল প্রতিশ্রুত সেতুটি। এতে শেষ হলো বরিশাল-কুয়াকাটা রুটে ফেরির দিন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার সকাল ১১টায় গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সেতুটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বরিশাল-পটুয়াখালীর একটা সংযোগ সৃষ্টি করবে এই পায়রা সেতু। কারণ পায়রা নদীর ওপর সেতু। নদীর নামে সেতুর নামটা হলে নদীটারও একটা পরিচয় পাওয়া যাবে। এজন্য আমি নামটা পছন্দ করেছি। আর পায়রা তো শান্তির প্রতীক, কাজেই এ অঞ্চলে এই সেতু হবার পর মানুষের যে আর্থিক উন্নতিটা হবে, তার ফলে মানুষের মনে একটা শান্তি আসবে, মানুষ সুন্দরভাব বাঁচতে পারবে।’
উদ্বোধনের সময় সেতুর দক্ষিনপাড়ে উপস্থিত ছিলেন পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক, বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাদেক আবদুল্লাহ, বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার, ডিআইজি, পটুয়াখালীর পাঁচজন সংসদ সদস্যসহ জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
পায়রা সেতু চালু হওয়ায় বরিশাল থেকে বাসে কুয়াকাটা যেতে এখন সময় লাগবে আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা। মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার বা মোটরসাইকেলে আরও দ্রুত যাওয়া যাবে এই অঞ্চলের পর্যটন স্পটগুলোতে।
প্রকল্প অফিস সূত্রে জানা যায়, পটুয়াখালীর লেবুখালী নদীর ওপর পায়রা সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ৪৪৭ কোটি টাকা, যার ৮২ ভাগ অর্থ বহন করেছে কুয়েত ফান্ড ফর আরব ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট এবং অ্যাপেক ফান্ড।
১ হাজার ৪৭০ মিটার দীর্ঘ এবং ১৯ দশমিক ৭৬ মিটার প্রস্থের এ সেতুর উভয় পাড়ে প্রায় সাত কিলোমিটার অ্যাপ্রোচ সড়ক রয়েছে।
পায়রা সেতু প্রকল্পের পরিচালক আব্দুল হালিম জানান, এই সেতুতে হেলথ মনিটরিং সিস্টেম ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে ভূমিকম্প, বজ্রপাতসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ অথবা অতিরিক্ত ওজনবাহী গাড়ির কারণে ক্ষতি এড়াতে পূর্বাভাস মিলবে মনিটরিং সিস্টেম থেকে। পায়রা সেতু নির্মাণে নদীর তলদেশে বসানো হয়েছে ১৩০ মিটার দীর্ঘ পাইল, যা দেশে সর্ববৃহৎ।
৩২টি স্প্যানের মূল সেতুটি বিভিন্ন মাপের ৫৫টি টেস্ট পাইলসহ ১০টি পিয়ার, পাইল ও পিয়ার ক্যাপের ওপর নির্মিত। এ ছাড়া ১৬৭টি বক্স গার্ডার সেগমেন্ট রয়েছে এটিতে, যার ফলে দূর থেকে সেতুটিকে ঝুলন্ত মনে হবে। জোয়ারের সময় নদী থেকে সেতুটি ১৮ দশমিক ৩০ মিটার উঁচুতে থাকবে।
মামার সঙ্গে পায়রা সেতু দেখতে আসা শিশু আদিবা। ছবি: নিউজবাংলাপায়রার উড়াল দেখতে ভিড়
নিউজবাংলার বরিশাল ব্যুরো প্রধান তন্ময় তপু জানান, পায়রা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে লেবুখালীতে সকাল থেকেই মানুষের ভিড় জমেছে। সেতুটিকে তারা দেখছেন যাতায়াতে দীর্ঘদিনের দুঃখ, দুর্দশার সমাপ্তি হিসেবে।
মামার সঙ্গে সেতু দেখতে এসেছে ৪ বছর বয়সী আদিবাও। সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে উৎসবের আমেজ দেখে আনন্দের শেষ নেই তার।
কী দেখছো, এমন প্রশ্নে সেজেগুজে রঙিন ছাতা মাথায় আদিবা আধো আধো বলে, ‘সেতু দেখতে এসেছি। অনেক মানুষ, ভালো লাগছে। এখন একটু গাড়িতে চড়ব সেতুতে।’
লেবুখালি এলাকার বাসিন্দা আদিবার মামা মো. নাসির বলেন, ‘আমি পিকআপ ড্রাইভার। কাল রাত থেকে আদিবা কান্নাকাটি শুরু করেছে সেতু দেখবার জন্য। কী করব, বাধ্য হয়ে গাড়ি রেখে আদিবাকে নিয়ে বের হয়েছি। সকাল থেকেই সাজগোজ শুরু করেছে। কাজ রেখে এখন ওকে সেতু ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখাচ্ছি।
‘আমারও ভালো লাগছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করছেন পায়রা সেতু। দিনটি বহুল আকাঙ্ক্ষিত, সেতুতে আসতে পেরে আমিও খুশি।’