রাজশাহী মহানগরের নতুন বাস টার্মিনাল থেকে ভদ্রা এলাকা পর্যন্ত চার কিলোমিটার সড়কটি তৈরি হয় ১২ বছর আগে। শহরের যোগাযোগব্যবস্থা সহজ করতে সড়কটি তৈরি করে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ)।
রাজশাহী বাস টার্মিনাল থেকে রংপুর, বগুড়াসহ দূরপাল্লার বিভিন্ন রুটের বাস এই পথেই চলাচল করে। তবে দুই বছর যেতে না যেতেই সড়কের পিচ উঠে গর্ত হতে শুরু করে রাস্তায়। ওই গর্তে একটু বৃষ্টি হলেই জমে যায় পানি। তবে সেগুলো সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়নি এখনও।
স্থানীয়রা বলছেন, এভাবে বছরের পর বছর সংস্কার না হওয়ায় চলাচলের প্রায় অযোগ্য হয়ে পড়েছে শহরের গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটি। বর্ষাজুড়েই চরম ভোগান্তিতে পড়েন এই পথের যাত্রীরা।
২০০৯ সালের জুনে ৪.১ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটি নির্মাণ করে আরডিএ। দুই লেনের এই সড়ক নির্মাণে ব্যয় হয় প্রায় ২২ কোটি টাকা।
সড়কটি দিয়ে প্রতিদিনই বাস-ট্রাক ছাড়াও ছোট-বড় যানবাহন চলাচল করে।
রাজশাহী বাস টার্মিনালসহ নওদাপাড়া ও আশপাশের এলাকা থেকে ভদ্রায় যাওয়ার জন্যও সড়কটি ব্যবহার করেন স্থানীয়রা।
সিটি করপোরেশন ও আরডিএ কেউই দায়িত্ব না নেয়ায় সংস্কারের অভাবে খানাখন্দে ভরে ওঠে সড়কটি।
আরডিএ কর্মকর্তাদের দাবি, তারা রাস্তা নির্মাণের কাজ করেন। এটি চালু হওয়ার পর সংস্কারের দায়িত্ব ছিল সিটি করপোরেশনের। তবে সেই উদ্যোগ না নিয়ে এর দায় আরডিএর ওপরেই দিচ্ছিল সিটি করপোরেশন।
এই দোটানার মধ্যেই গত এক যুগে এই সড়কটিতে তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত। দেখে বোঝার উপায় নেই এটি পাকা রাস্তা।
রাজশাহী সড়ক পরিবহন গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন, ‘এই রাস্তায় বাস-ট্রাক চালানোতেই শুধু নয়, ছোট যানবাহন চালানোও অনেক কষ্টের। বাস চালাতে গিয়ে যন্ত্রপাতি নষ্ট হচ্ছে। সময় নষ্ট হচ্ছে। এটি সংস্কার করার জন্য অনেক দিন ধরেই আমরা সংশ্লিষ্টদের বলে আসছি।’
তিনি বলেন, ‘অনেক দিন ধরেই শুনছি সংস্কার হচ্ছে, হবে। এখন শুনছি খুব তাড়াতাড়িই এর কাজ শুরু হবে। দেখা যাক কবে নাগাদ শুরু হয়। এটি হলে আমাদের সবারই অনেক উপকার হবে।’
ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাচালক শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এই রাস্তা তো চলার মতো অবস্থায় নেই। এরপরও আমরা জোর করেই চলছি। অটো নষ্ট হয়ে যায়। উল্টে ভেঙে যাওয়ারও ভয় থাকে। যাত্রীদের চাহিদা থাকলে না চলেও পারি না।’
তিনি বলেন, ‘ভাড়া বেশি আদায় করি না। আমরা কষ্টের মধ্যে এই রাস্তায় চলছি। এটা বলেই যাত্রীদের কাছে একটু ভাড়া ধরিয়ে দিতে বলি। অনেকেই দেয়। আবার অনেকেই তর্ক করে।’
রিকশাচালক জহির উদ্দিন বলেন, ‘এটি কি রিকশা চলার রাস্তা? তার পরও আমরা চলি টাকার জন্য। মাঝেমধ্যেই কাদায় রিকশা আটকে যায়। গর্তে কখনও উল্টেও যায়। রাস্তাটা ঠিক হলে আমাদের খুব ভালো হয়।’
বনগ্রাম এলাকার বাসিন্দা সোহেল রানা বলেন, ‘এই রাস্তাটি ভাঙাচোরা হওয়ায় দুর্ভোগের শেষ নাই। রাস্তার ধুলা বাড়িতে ঢোকে, দোকানে ঢোকে। সবকিছু ময়লা করে দেয়। ভাঙা রাস্তায় যানবাহন চলাচল করে বিকট শব্দ হয়। ভাঙা রাস্তায় বাস-ট্রাক চলাচলের শব্দে রাতের বেলা অনেক সময় আঁতকে উঠতে হয়।’
তবে শিগগিরই এ দুর্ভোগ কেটে যাবে বলে জানিয়েছেন রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) অথরাইজড অফিসার আবুল কালাম আযাদ।
তিনি বলেন, ‘২০২০ সালের ডিসেম্বরে রাস্তাটি আনুষ্ঠানিকভাবে সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এখন তারা রাস্তাটির আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণের কাজ শুরু করবে।’
১২ বছরেই একটি রাস্তার এত খারাপ হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি এখন অনেক ব্যস্ত রাস্তা। এই রাস্তা দিয়ে সব সময়ই ভারী যানবাহন চলাচল করে। এটি একটি কারণ। তবে সময়মতো সংস্কার না হওয়ার কারণে দিন-দিন বেশি খারাপ হয়েছে। সংস্কার হলে এত খারাপ হতো না।’
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘এই রাস্তাটির উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ কাজ আরও আগেই হওয়ার কথা ছিল। তবে বিভিন্ন কারণে সেটি সম্ভব হয়নি। এখন এটির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘রাস্তাটি এরই মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করার পর আধুনিক একটি রাস্তা করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এটি দুই লেন থেকে বাড়িয়ে চার লেন করার কাজ শুরু হচ্ছে। রাস্তায় কিছু গাছ, বৈদ্যুতিক খুঁটি রয়েছে। সেগুলো সরানোর কাজ শুরু হয়েছে। প্রায় ৫৬ কোটি টাকা ব্যয়ে এই রাস্তাটির সম্প্রসারণ কাজ হবে।’
তিনি বলেন, ‘রাস্তার দুই পাশে থাকবে ফুটপাত। একই সঙ্গে সাইকেলসহ অযান্ত্রিক যানবাহন চলাচলের আলাদা রাস্তা থাকবে। ২২ ফুট করে দুই পাশে ৪৪ ফুটের চার লেনের রাস্তা হবে। মাঝখান দিয়ে থাকবে ডিভাইডার।’