বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

৪৫ মাস ধরে ঝুলছে ষোড়শ সংশোধনী মামলার রিভিউ

  •    
  • ২৪ অক্টোবর, ২০২১ ০৯:৪৭

এ রিভিউ নিষ্পত্তির ওপর নির্ভর করছে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল ব্যবস্থা থাকা না থাকার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিশিষ্টজনরা বলছেন, রাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়টি দ্রুত মীমাংসা হওয়া উচিত।   

দেশের সর্বোচ্চ আদালতে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় প্রায় চার বছর ধরে পড়ে আছে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন। এ রিভিউ নিষ্পত্তির ওপর নির্ভর করছে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল ব্যবস্থা থাকা না থাকার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

বিশিষ্টজনরা বলছেন, রাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়টি দ্রুত মীমাংসা হওয়া উচিত।

মামলাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে এলে স্বাভাবিক কোর্ট চালু হলেই মামলাটি শুনানি হতে পারে।

তবে রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, রিভিউ শুনানির জন্য আদালতের তালিকায় এলে শুনানি হবে। কবে নাগাদ তালিকায় আসবে সেটি দিনক্ষণ দিয়ে বলতে পারছেন না কেউই।

উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের কাছে ফিরিয়ে নিতে ২০১৪ সালে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী আনা হয়। সেই সংশোধনীকে চ্যালেঞ্জ করে রিট করা হলে হাইকোর্ট রুল জারি করে। এরপর রুলের চূড়ান্ত শুনানি করে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয় হাইকোর্ট।

এ রায়ের বিপক্ষে আপিল করা হলে আপিল বিভাগও হাইকোর্টের রায় বহাল রাখে। এরপর রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। কিন্তু রিভিউ আবেদনের পর প্রায় চার বছর কেটে গেলেও নিষ্পত্তি হয়নি আবেদনটির।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রিভিউ নিষ্পত্তি করবেন আদালত। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আমরা আবেদন করে রেখেছি। এখন আদালত শুনানির জন্য তালিকায় আনলে অবশ্যই আমরা শুনানি করব।’

রাষ্ট্রপক্ষ দ্রুত শুনানির উদ্যোগ নেবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘রিভিউ শুনানির জন্য আমরা তো প্রস্তুত আছি। এখন আদালত যখন শুনানির জন্য তালিকা দেবেন, তখন শুনানি হবে। আদালত না দিলে আমরা তো আর তালিকায় আনতে পারি না।’

তিনি বলেন, ‘অন্য একটি মামলার রিভিউ শুনানির জন্য আমি আদালতকে বলেছিলাম। আদালত বলেছে, রিভিউগুলো একসঙ্গে শুনানি করবে। সপ্তাহে এক দিন আদালত রিভিউগুলো শুনবে। এখন আদালতের তালিকায় এলেই শুনানি হবে।’

এ মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নিয়মিত আদালত ছাড়া এ মামলার শুনানি সম্ভব নয়। এখন তো আপিল বিভাগ ভার্চুয়ালি চলছে। ভার্চুয়াল কোর্টে এ মামলার শুনানি করা কষ্টসাধ্য হবে। তার কারণ এটি দীর্ঘদিন শুনানি হবে, অনেক ডকুমেন্ট, পেপারস লাগে, অনেক রেফারেন্স লাগে। কাজেই ভার্চুয়াল কোর্টে এ মামলার শুনানি প্রায় অসম্ভব হবে। তবে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে শুনানির উদ্যোগ নেয়া হলে আমাদের কোনো অসুবিধা নাই। আমরাও চাই এটাকে পেন্ডিং না রেখে যত দ্রুত সম্ভব শেষ করা হোক।’

বহুল আলোচিত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে আপিল বিভাগের দেওয়া রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) জন্য সর্বোচ্চ আদালতে ২০১৭ সালের ২৪ ডিসেম্বর আপিল বিভাগে আবেদনটি করে রাষ্ট্রপক্ষ। ৯৪টি সুনির্দিষ্ট যুক্তি তুলে ধরে ৯০৮ পৃষ্ঠার রিভিউ আবেদনে রাষ্ট্রপক্ষ পুরো রায় বাতিল চায়।

রিভিউয়ে যুক্তি তুলে ধরে প্রয়াত অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সে সময়ে জানিয়েছিলেন, “সংবিধানের তফসিলে সন্নিবেশিত ১৯৭১-এর ১০ এপ্রিল প্রণীত ‘স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র’ উল্লেখ করে রিভিউ আবেদনে বলা হয়েছে, একমাত্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই বাংলাদেশের ফাউন্ডিং ফাদার রূপে স্বীকৃত। আপিল বিভাগ ‘ফাউন্ডিং ফাদার্স’ বহুবচন শব্দ ব্যবহার করে ভুল করেছেন। তাই এর পুনর্বিবেচনা প্রয়োজন। রায়ের একটি অংশে পর্যবেক্ষণে ‘আমিত্ব’ ধারণা থেকে মুক্তি পেতে হবে বলে যা উল্লেখ আছে, সে প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপক্ষ রিভিউ আবেদনে যুক্তি দেখিয়ে বলেছেন, ‘আদালতের এই পর্যবেক্ষণ ভিত্তিহীন ও অপ্রত্যাশিত, যা আমাদের এই মামলার বিবেচ্য বিষয় নয়। এটি সংশোধনযোগ্য'।”

ষোড়শ সংশোধনীর আপিলের রায়ের আরেকটি পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, ‘১. আমাদের নির্বাচনপ্রক্রিয়া ও সংসদ এখনও শিশুসুলভ; ২. এখনও এই দুটি প্রতিষ্ঠান মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারেনি।’

এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি হচ্ছে, এই পর্যবেক্ষণ আদালতের বিচার্য বিষয় নয়। বিচারিক শিষ্টাচারের বাইরে গিয়ে এই পর্যবেক্ষণ দেয়া হয়েছে, যা সংশোধনযোগ্য।

ষোড়শ সংশোধনীর আপিলের রায়ের আরেকটি পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, ‘সংসদীয় গণতন্ত্র অপরিপক্ব। যদি সংসদের হাতে বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা দেয়া হয়, তবে তা হবে আত্মঘাতী।’

এর সুরাহা চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, আদালতের এই পর্যবেক্ষণ শুধু অবমাননাকরই নয়, বরং ভিন্ন রাজনৈতিক প্রশ্ন। আদালতের বিচারিক এখতিয়ারের বাইরে গিয়ে এই মন্তব্য করা হয়েছে। রাষ্ট্রের একটি অঙ্গ অন্য একটি অঙ্গের বিরুদ্ধে এরূপ মন্তব্য করতে পারে না। এটা বিচারিক মন্তব্য নয়, এ মন্তব্য করে আদালত ভুল করেছেন, যা সংশোধনযোগ্য ও বাতিলযোগ্য।

রাষ্ট্রপক্ষ তাদের রিভিউ আবেদনে আরও যুক্তি দেখিয়ে বলেছে, আপিলের রায় প্রদানকারী আদালত মার্শাল ল জারির মাধ্যমে প্রণীত কোনো আইনকে বৈধ হিসেবে বিবেচনা করেনি; অথচ বিপরীতে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধান গ্রহণ করে ভুল করেছেন, যা সংশোধনযোগ্য।

রাষ্ট্রপক্ষ তাদের রিভিউ আবেদনে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের উদ্দেশ্য বিবেচনা না করে আদালত ভুল করেছে বলে উল্লেখ করে আদালতের এ ধরনের পর্যবেক্ষণ অপ্রত্যাশিত ও বাতিলযোগ্য অভিহিত করা হয়েছে।

রাষ্ট্রপক্ষ পাকিস্তান আমলে মুসলিম পারিবারিক অধ্যাদেশটি তৎকালীন রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ দ্বারা গঠিত এবং মার্শাল ল-এর অধীনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি উল্লেখ করে যুক্তি দেখিয়েছে যে, এ কারণে এই অধ্যাদেশটি দেশে বর্তমানে আইন হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। এ কারণে মার্শাল ল অধ্যাদেশটি ষোড়শ সংশোধনীর সঙ্গে তুলনা করা যাবে না, যা আদালত তুলনা করে ভুল করেছেন এবং তা সংশোধনযোগ্য।

রিভিউ আবেদনে আরও বলা হয়, সংবিধানের ৭ অনুচ্ছেদকে কার্যকর ও অর্থপূর্ণ করার জন্য সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ পুনর্বহাল করার মাধ্যমে সরকার কোনো বিচারকের বিরুদ্ধে অসদাচরণ প্রমাণিত হলে আইন অনুসারে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংবিধানে সংশোধনী আনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। কিন্তু আপিল বিভাগ সেই সংশোধনীকে একটি ‘কালারেবল অ্যামেন্ডমেন্ট’ মন্তব্য করেন এবং প্রেক্ষাপট বিবেচনায় না নিয়ে এই সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করার মাধ্যমে ভুল করেছেন, যা সংশোধন হওয়া প্রয়োজন।

উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছে ফিরিয়ে নিতে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী আনা হয়। ২২ সেপ্টেম্বর তার গেজেট হয়।

এরপর ষোড়শ সংশোধনী চ্যালেঞ্জ করে ২০১৪ সালের ৫ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের ৯ আইনজীবী হাইকোর্টে একটি রিট করেন। পরে ৯ নভেম্বর হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ ওই রিটে রুল জারি করেন। এরপর ২০১৬ সালের ৫ মে তিন বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি বিশেষ বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ, বাতিল ও সংবিধানপরিপন্থি বলে রায় ঘোষণা করেন।

একই বছরের ১১ আগস্ট পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। এরপর রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিলের শুনানি নিয়ে ২০১৭ সালের ৩ জুলাই ঐকমত্যের ভিত্তিতে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ।

এরপর ওই বছরের ১ আগস্ট ৭৯৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়। যেখানে মুক্তিযুদ্ধ, গণতন্ত্র, সংসদসহ বিভিন্ন ইস্যুতে পর্যবেক্ষণ রাখা হয়। রায়ের পর্যবেক্ষণে ‘বঙ্গবন্ধুকে খাটো করা হয়েছে’ অভিযোগ তুলে বিচারপতি সিনহার পদত্যাগের দাবিতে সরব হয়ে ওঠে সরকারদলীয় আইনজীবীসহ নেতারা।

জাতীয় সংসদেও এ রায় ও প্রধান বিচারপতির অনেক সমালোচনা করা হয়। এরপর ওই বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর সংসদে রায় পুনর্বিবেচনার জন্য আইনি পদক্ষেপ নেয়ার প্রস্তাব গৃহীত হয়। তারই প্রেক্ষাপটে রিভিউ আবেদন দায়ের করা হয়। এ রায় নিয়ে তুমুল আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে ২০১৭ সালের ৩ অক্টোবর ছুটিতে যান তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। পরে ১৩ অক্টোবর তিনি বিদেশে চলে যান। ১০ নভেম্বর তিনি সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশনারের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি বরাবর নিজের পদত্যাগপত্র জমা দেন।

আপিল বিভাগের যে সাত বিচারপতি ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় দিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা পদত্যাগ করেন। বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার স্বাভাবিকভাবে অবসরে যান এবং বিচারপতি আব্দুল ওয়াহ্‌হাব মিঞা পদত্যাগ করেন।

বাকি তিন বিচারপতি বর্তমানে আপিল বিভাগে আছেন। তারা হলেন বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন (বর্তমান প্রধান বিচারপতি), বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।

সম্প্রতি কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের (ইসি) বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়ম ও অসদাচরণের অভিযোগ তোলেন দেশের ৪২ জন নাগরিক। তারা ‘সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের’ মাধ্যমে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে দুই দফায় রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করেন। এরপর আবার সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল ও ষোড়শ সংশোধনীর বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে।

এ বিভাগের আরো খবর