করোনার ঝুঁকি এবং যুগের চাহিদা মেটাতে স্কুল-কলেজের পাঠদান কার্যক্রমে আমূল পরিবর্তন আনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে স্কুল-কলেজে সরাসরি পাঠদানের সংখ্যা কমবে, বাড়বে অনলাইন ক্লাসের সংখ্যা।
এ ছাড়া পর্যায়ক্রমে ছাপা বইয়ের পরিবর্তে বিনা মূল্যে ট্যাবলেট কম্পিউটার (ট্যাব) বিতরণ এবং ‘শিক্ষা ইন্টারনেট প্যাকেজ’ চালুর কথা ভাবা হচ্ছে।
শিক্ষাবিদরা বলছেন, সরকারের এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে মহামারির ঝুঁকি বা এ ধরনের সংকটে ভবিষ্যতে দীর্ঘ সময় শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার বাইরে থাকবে না। আর এতে শিক্ষার্থীদের কোচিং এবং প্রাইভেট টিউটর নির্ভরতাও কমবে।
গত আগস্টে অনুষ্ঠিত এনসিটিবি প্রণীত পাঠ্যক্রম অনুসারে প্রাক-প্রাথমিক থেকে ১২তম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যক্রমসংক্রান্ত ভার্চুয়াল সভায় এসব সুপারিশ করা হয়।
জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ গোলাম ফারুক বলেন, ‘শ্রেণিকক্ষে সশরীরে ক্লাসের কোনো বিকল্প নেই। তবে ভবিষ্যতের সম্ভাব্য ঝুঁকির কথা বিবেচনায় নিয়ে সময়ের চাহিদা অনুযায়ী অনলাইনে ক্লাসের পরিধিও বাড়ানো প্রয়োজন। এতে কোনো শিক্ষার্থী সশরীরে একটি ক্লাস মিস করলে সে পরবর্তী সময়ে অনলাইনে ওই ক্লাসটি দেখে নিতে পারবে। এতে শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট টিউটরের কাছে যেতে হবে না। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের স্কুলে যাতায়াতের সময় নষ্ট হবে না।’
একই কথা বললেন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা। তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষের পাশাপাশি বাইরে থেকে যেন শিখতে পারে, সে বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা চলছে। শ্রেণিকক্ষ থেকেই যে শিক্ষার্থীরা সবকিছু শিখবে, সেটি আর থাকবে না ভবিষ্যতে। তাই ডিজিটাল ক্লাসের সংখ্যা বাড়বে, এটা নিঃসন্দেহে বলা যায়। তবে কী পরিমাণ বাড়বে তা এখনই বলা সম্ভব নয়।’
ডিজিটাল ক্লাস বাড়ার উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘করোনার সময়ে পৃথিবীর অনেক দেশেই অনলাইনে পুরোদমে ক্লাস হয়েছে। আমাদের পর্যাপ্ত সক্ষমতা না থাকায় আমরা শতভাগ সফল হতে পারিনি। ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে এ ধরনের উদ্যোগ ভালো। তবে এ কথাও ঠিক যে সশরীরে ক্লাসের কোনো বিকল্প নেই। তাই ডিজিটাল ক্লাস এবং সশরীরে ক্লাসের অনুপাত যে সঠিক হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।’
ডিজিটাল ক্লাসের পাশাপাশি সশরীরে ক্লাসেও সমান গুরুত্ব দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি মনে করেন, তাহলে শিক্ষার্থীরা উভয় ক্ষেত্র থেকেই লাভবান হবে।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর ২০২০ সালের ১৭ মার্চ সারা দেশে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়। এর প্রায় দেড় বছর পর গত ১২ সেপ্টেম্বর স্কুল-কলেজে ক্লাস শুরু হয়। তবে প্রতিদিন সব শ্রেণিতে ক্লাস হচ্ছে না।
শুধু চলতি বছরের ও আগামী বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থী এবং পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন ক্লাস নেয়া হচ্ছে। আর অন্যান্য শ্রেণির মধ্যে তৃতীয়, চতুর্থ, অষ্টম, নবম শ্রেণিতে দুই দিন এবং অন্যান্য শ্রেণির শিক্ষার্থীদের এক দিন ক্লাসে আসতে বলা হয়েছে।