জলবায়ুজনিত ক্ষতির প্রভাব কমিয়ে আনতে প্রতিশ্রুত অর্থ দিচ্ছে না শিল্পোন্নত দেশগুলো। এ জন্য আসন্ন কপ-২৬ সম্মেলনে জলবায়ু তহবিল বা গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ডে পর্যাপ্ত অর্থ সরবরাহ নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন এ খাতের বিশেষজ্ঞরা।
শনিবার ডেইলি স্টার সেন্টারের আজিমুর রহমান কনফারেন্স হলে ‘সেন্টার ফর পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপম্যান্ট’ (সিপিআরডি) আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা এই দাবি করেন।
ইউএনসিসিসি’র ২৬তম জলবায়ু সম্মেলন অর্থাৎ ‘কপ-২৬’ উপলক্ষ্যে ‘বাংলাদেশের নাগরিক সমাজের প্রত্যাশা এবং প্রস্তাবনা’ শীর্ষক ওই সভায় কয়েকটি বেসরকারি উন্নয়ন সহযোগী সংগঠন অংশ নেয়।
সভায় অংশ নেয়া সংগঠনগুলোর মধ্যে সিপিআরডি-এর প্রধান নির্বাহী মো. শামসুদ্দোহা বলেন, ‘জলবায়ুর নেতিবাচক প্রভাবের জন্য শিল্পোন্নত দেশগুলো দায়ী হলেও এর ক্ষতির শিকার হচ্ছে অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলো। এ ক্ষতি কমাতে শিল্পোন্নত দেশগুলো গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ডে প্রতিবছর ১০০ বিলিয়ন ডলার অর্থায়ন করার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা রাখছে না। আগামী কপ-২৬ সম্মেলনে এই তহবিলে ১০০ বিলিয়ন ডলারের প্রবাহ অব্যাহত প্রতিশ্রুতির বাস্তয়নে জোর দিতে হবে।’
ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হিসাবে বাংলাদেশকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘শিল্পোন্নত দেশগুলোতে ২০৩০ সালের মধ্যে এবং উন্নয়নশীল বিশ্বকে ২০৪০ সালের মধ্যে গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমণ শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে হবে। কপ-২৬ সম্মেলনেই এ বিষয়ে প্রতিশ্রুতি নিতে হবে।’
শামসুদ্দোহা জানান, করোনার কারণে ২০২০ সালে কপ সম্মেলন অনুষ্ঠিত না হওয়ার এবারের সম্মেলনটি গুরুত্বপূর্ণ। এই সম্মেলনে কার্বন নিঃসরণ কমাতে রাষ্ট্রগুলোকে একটি লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিবে হবে বলেও মনে করেন তিনি।
জলবায়ু পরিবর্তন ও বন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ধরিত্রী সরকার বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবেলায় সরকার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে ১.৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার কথা থাকলেও উন্নত বিশ্ব তা প্রাক-শিল্প বিপ্লব সময়ের তুলনায় ২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার কথা বলছে। বিশ্ব সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে যথাযথ সঠিক এনডিসি ডকুমেন্টই পারে এই বৈশ্বিক তাপমাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে আনতে।’
জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে সরকার, গবেষক, নীতি-নির্ধারক এবং নাগরিক সমাজকে যৌথভাবে কাজ করতে হবে বলেও মনে করেন তিনি।
কোস্ট ফাউন্ডেশনের পরিচালক সৈয়দ আমিনুল হক বলেন, ‘অসছে সম্মেলনে শিল্পোন্নত দেশগুলো ক্ষতিগ্রস্তদের পাশ কাটিয়ে নিজেদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের চেষ্টা করতে পারে। এ জন্য ক্ষতিগ্রস্থ দেশের প্রতিনিধি ও নাগরিক সমাজকে এই অপচেষ্টাকে মোকাবিলা করতে হবে।’
সিডিপির নির্বাহী পরিচালক জাহাঙ্গির হাসান মাসুম বলেন, ‘উন্নত বিশ্ব কার্বন নির্গমণ কমানোর বিষয়টিকে পাশ কাটিয়ে বিভিন্ন ইস্যুকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে সামনে নিয়ে আসে। ক্ষতিগ্রস্থ দেশগুলো যদি কার্বন নির্গমন কমানোর উপরই মূল চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রাখতো তাহলে এখন পরিস্থিতি ভিন্ন রকম থাকত।’