কুমিল্লার ঘটনাকে কেন্দ্র করে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় একাধিক মণ্ডপে ভাঙচুর হলেও সব ঘটনায় মামলা না নেয়ার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে।
মণ্ডপ কমিটির অভিযোগ, উপজেলায় ১৩ তারিখ রাতে পাঁচটিসহ মোট ১৪টি মণ্ডপে হামলা চালানো হয়। তবে পুলিশ মামলা নিয়েছে মাত্র দুটি। আরও চারটি লিখিত অভিযোগ দেয়া হলেও তা মামলা হিসেবে নেয়া হয়নি। বারবার চেষ্টা করেও মামলা করতে পারেনি মণ্ডপ কমিটি।
আর পুলিশের দাবি, হামলা হয়েছে আটটি মণ্ডপে। এর মধ্যে যে দুটি মণ্ডপে প্রতিমা ভাঙচুর হয়েছে সেখানকার মামলা নেয়া হয়েছে। অন্য মণ্ডপগুলোতে ছোটখাটো হামলা হয়েছে। এ জন্য জিডিগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।
কমলগঞ্জ উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল চন্দ্র দাস জানান, ভাঙচুর করতে গিয়ে অনেক জায়গায় প্রতিরোধের মুখে পড়ে হামলাকারীরা। এ জন্য সব জায়গায় সমান ক্ষতি হয়নি। দুটি মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়েছে এবং বাকিগুলোতে মণ্ডপ, গেট, ডেকোরেশনসহ বিভিন্ন ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
তার দাবি, প্রতিরোধের কারণে হামলা হলেও সব মণ্ডপে মূর্তি ভাঙতে পারেনি দুর্বৃত্তরা। আবার ঘটনার দিন ভয়ে অনেকে হামলার কথা প্রকাশও করেনি। তাদের হিসাবে, ১৩ তারিখ রাত থেকে দশমীর পরদিন পর্যন্ত ১৪টি মন্দিরে হামলা হয়েছে। এর মধ্যে ছয়টিতে অভিযোগ দেয়া হলেও পুলিশ মামলা নিয়েছে দুটি। অন্য মণ্ডপসংশ্লিষ্টরা ভয়ে মামলা করতে চাইছে না।
পূজা উদযাপন পরিষদের এই নেতা বলেন, ‘আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম, কিন্তু তারা যখন দেখছে অভিযোগ দিলেও তা মামলা হিসেবে নেয়া হচ্ছে না, তখন তারা আরও উৎসাহ হারাচ্ছে। আর পুলিশ কেন এমন করছে, তা আমরা বুঝে উঠতে পারছি না।’
কুমিল্লার ঘটনার পর গত ১৩ অক্টোবর সন্ধ্যার পর কমলগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন স্থানীয়রা। সেই মিছিল থেকে মইদাইল সর্বজনীন পূজামণ্ডপ ও কামারছড়া চা-বাগান পূজামণ্ডপের প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়।
এ ছাড়া বৃন্দাবনপুর জগন্নাথ জিউর আখড়া পূজামণ্ডপ, বৈরাগির চক সর্বজনীন পূজামণ্ডপ, রামপুর সর্বজনীন পূজামণ্ডপ, নারায়ণক্ষেত্র শব্দকর একাডেমি পূজামণ্ডপ, রহিমপুর ইউনিয়নের শ্রীঘর পূজামণ্ডপ ও রানীরবাজারের সর্বজনীন পূজামণ্ডপের গেটে ভাঙচুর চালানো হয়। পরে পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
ওই ঘটনায় হওয়া দুটি মামলায় এজাহারভুক্ত ও অজ্ঞাতপরিচয়সহ প্রায় ৩০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মন্সিবাজার ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সুনিল মালাকার জানান, তার ওয়ার্ডে পড়েছে রামপুর ও নারায়ণক্ষেত্র মণ্ডপ দুটি। এখানে হামলা হলেও মামলা নেয়নি পুলিশ। মামলা দিতে কয়েকবার থানায় গেলেও ফিরে আসতে হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা বারবার গিয়েছি, কিন্তু আমাদের অভিযোগকে কেন মামলা হিসেবে নেয়া হলো না, তা আমরা বুঝতে পারিনি।
‘ওসি সাহেব বলেছেন, ক্ষতি বেশি হয়েছে যে দুইটার, তার মামলা নিয়েছি। আমরা প্রতিরোধ করার কারণে আমাদের এখানে ক্ষতি কম হয়েছে, কিন্তু মামলা নেয়ার ব্যাপারে ক্ষয়ক্ষতির হিসেবটা বুঝিনি। আমাদের বড় ক্ষতি হলে মামলা নিয়ে কী হতো?’
বাসুদেবপুর সর্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি মলয় মালাকার জানান, ১৩ অক্টোবর তাদের মন্দিরে হামলা ও ভাঙচুর হয়। পরদিন থানায় অভিযোগ দেন। তবে শনিবার পর্যন্ত মামলা রেকর্ড হয়নি। বারবার তাগাদা দিলেও কাজ হচ্ছে না।
কমলগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সোহেল রানা বলেন, ‘মইদাইল সর্বজনীন দুর্গামন্দির ও কামারছড়া চা-বাগান পূজামণ্ডপে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে। এখন পর্যন্ত তিনজনকে আটক করা হয়েছে। আমাদের জানামতে, কমলগঞ্জ উপজেলায় মোট আটটি পূজামণ্ডপে হামলা ও ভাঙচুর হয়।’
অভিযোগগুলো কেন মামলা হিসেবে নেয়া হচ্ছে না, জানতে চাইলে কমলগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়ারদৌস হাসান বলেন, ‘বাকিগুলোতে তেমন বড় কোনো হামলা হয়নি। আসা-যাওয়ার পথে গেট ভাঙচুর করা হয়েছে। এগুলো জিডি আকারে আছে, আমরা খতিয়ে দেখছি।’