কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে কোরআন শরিফ রাখা, তা নিয়ে হামলা ও সহিংসতার ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম।
দলীয় কার্যালয়ে শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি করেন তিনি। কুমিল্লার ঘটনার পর দেশের বিভিন্ন জেলায় সহিংসতার ঘটনা নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ইসলামী আন্দোলন।
চরমোনাই পীর বলেন, ‘কুমিল্লার ঘটনা ও তার পরের ঘটনা তদন্তে বিচার বিভাগীয় কমিটি করতে হবে। এখানে কুমিল্লায় কোরআন অবমাননা, বিভিন্ন স্থানে মন্দির ও প্রতিমা ভাঙা, রংপুরে বাড়িঘরে আগুন দেয়া এবং চাঁদপুরে বিক্ষোভে গুলি করা, সব ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করতে হবে। সে কমিটির তদন্ত রিপোর্ট নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জনসন্মুখে প্রকাশ করে অপরাধীদের কঠোর শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে।’
তিনি দাবি করেন, তার দল জনসম্পৃক্ত শান্তিকামী সংগঠন। তারা আলোচনার মাধ্যমে সবকিছুর সমাধান করতে চান। পেশীশক্তি নির্ভর হঠকারী রাজনীতি তারা করেন না। তারা জনগণের মতামতের ভিত্তিতে একটি সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ নির্মাণ করতে চান।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি যেসব দাবি করেন সেগুলো হলো, ধর্ম অবমাননার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট আইন করতে হবে। সেই আইনের যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে। তাহলে কোনো ধরনের ধর্ম অবমাননার ঘটনা ঘটলে জনতা আর সহিংস হয়ে উঠবে না।
রাজনৈতিক নেতা ও মন্ত্রীদের অতি বাচাল প্রবণতা বন্ধ করতে হবে। মানুষের আবেগ-অনুভূতির জায়গায় আঘাত করে মন্তব্য করার প্রবণতা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। তারই প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে অতি বাচাল তথ্য প্রতিমন্ত্রীকে মন্ত্রিসভা থেকে বহিষ্কার করতে হবে।
দেশের স্বাভাবিক রাজনৈতিক পরিবেশ ফেরাতে বিরোধী দলগুলোর ওপরে দমন-পীড়ন বন্ধ করতে হবে। আটক রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তি দিয়ে সুস্থ স্বাভাবিক রাজনৈতিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
শাসন ব্যবস্থায় জনতার মতামতের প্রতিফলন ঘটাতে এবং সহনশীল, বহুদলীয়, মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজন করতে হবে।
বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর রাজনৈতিক ব্যবহার বন্ধ করে এবং তাদের নিয়োগে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করে পেশাদারিত্বের ভিত্তিতে গড়ে তুলতে হবে।
গণবিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে গুলি করার মতো চরমপন্থা অবলম্বন করার প্রবণতা সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে।
ক্ষতিগ্রস্ত মন্দির ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি সরকারিভাবে নির্মাণ করে দিতে হবে। চাঁদপুরে পুলিশের গুলিতে যারা নিহত হয়েছেন, তাদের পরিবারসহ ক্ষতিগ্রস্ত সকল ব্যক্তি ও পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
দেশের একশ্রেণির মিডিয়া, রাজনৈতিক সংগঠন ও তথাকথিত সুশীল সমাজ এই ধরনেরর ঘটনায় যেভাবে ধর্মকে কেন্দ্র করে একচোখা বয়ান দাঁড় করায়, তা বন্ধ করতে হবে। বাঙালি জাতির ইতিহাস ও মনস্তত্ত্ব বিরোধী তাদের এই ধরনের বয়ান নির্মাণের পেছনে কোনো দুরভিসন্ধি আছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে হবে।
প্রতিবেশী দেশকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক না গলাতে সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর বার্তা দিতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বিষয়টি তুলে ধরেন তিনি। বলেন, ‘একদিকে করোনার কারণে মানুষের আয় কমে যাওয়া, অন্যদিকে দ্রব্যমূল্যের এই সীমাহীন বৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষ দিশেহারা।
‘নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করা সরকারের প্রধান কাজগুলোর একটি। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি বলে, সরকার এই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে।’
তিনি পণ্য উৎপাদন ও ভোক্তাদের কাছে পৌঁছে দেয়া পর্যন্ত সময়ে মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের দৌরাত্ম সরাতে সরকারকে কঠোর হওয়ার আহ্বান জানান।
আরও কর্মসূচি
আগামী ২৭ অক্টোবর দেশের চলমান সংকট ও তা থেকে উত্তরণের লক্ষে দেশের পীর-মাশায়েখ, বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদ, পেশাজীবী ও সমাজকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হবে বলে কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।