বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পীরগঞ্জে সহিংসতার ‘হোতা’ সৈকত ছাত্রলীগ নেতা

  •    
  • ২৩ অক্টোবর, ২০২১ ১৬:৫৯

সৈকত রংপুরের কারমাইকেল কলেজের দর্শন বিভাগের যে কমিটিতে ছিলেন, সেটি ২০১৭ সালের ৮ আগস্ট অনুমোদন দেন কারমাইকেল কলেজ শাখার সভাপতি সাইদুজ্জামান সিজার ও সাধারণ সম্পাদক জাবেদ আহমেদ। এ-সংক্রান্ত সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পেয়েছে নিউজবাংলা। সাইদুজ্জামান সিজারও বিষয়টি স্বীকার করেছেন।

রংপুরের পীরগঞ্জে হিন্দুপল্লিতে সহিংসতার ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত হিসেবে র‍্যাব যাকে আটকের কথা জানিয়েছে, সেই মো. সৈকত মণ্ডল ছাত্রলীগ নেতা বলে নিশ্চিত হয়েছে নিউজবাংলা।

তিনি রংপুরের কারমাইকেল কলেজে সংগঠনটির দর্শন বিভাগের কমিটির ১ নম্বর সহসভাপতি। তবে পীরগঞ্জ সহিংসতার পর তাকে অব্যাহতি দেয়ার কথা জানায় কলেজ ছাত্রলীগ।সৈকত দর্শন বিভাগের যে কমিটিতে ছিলেন, সেটি ২০১৭ সালের ৮ আগস্ট অনুমোদন দেন কারমাইকেল কলেজ শাখার সভাপতি সাইদুজ্জামান সিজার ও সাধারণ সম্পাদক জাবেদ আহমেদ। এ-সংক্রান্ত সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পেয়েছে নিউজবাংলা।

সাইদুজ্জামান সিজারও বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সৈকত মণ্ডল দর্শন বিভাগের কমিটিতে ছিলেন। ফেসবুকে কমেন্ট করার কারণে রোববার তাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়।’

রাজধানীর কারওয়ান বাজার মিডিয়া সেন্টারে শনিবার দুপুরে পীরগঞ্জে হিন্দুপল্লিতে হামলার বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। এ সময় তিনি বলেন, ‘সৈকত মণ্ডলই এ ঘটনার হোতা। শুক্রবার রাতে টঙ্গী থেকে সৈকত ও তার সহযোগী রবিউল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।’খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘গ্রেপ্তারকৃতরা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অরাজকতা তৈরি এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের লক্ষ্যে হামলা-অগ্নিসংযোগ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচার এবং মাইকিং করে হামলাকারীদের জড়ো করেন বলে জানিয়েছেন। গ্রেপ্তার সৈকত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উসকানিমূলক, বিভ্রান্তিকর ও মিথ্যাচারের মাধ্যমে স্থানীয় জনসাধারণকে উত্তেজিত করে তোলেন। এ ছাড়া তিনি ওই হামলা ও অগ্নিসংযোগে অংশগ্রহণে জনসাধারণকে উদ্বুদ্ধ করেন।’

নিউজবাংলার অনুসন্ধানে জানা গেছে, সৈকতের বাবা রাশেদুল ইসলাম রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয় না থাকলেও দাদা আবুল হোসেন মণ্ডল রামনাথপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এবং তার চাচা রেজাউল করিম রামনাথপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ৬ নম্বর ইউনিটের সভাপতি।

নিউজবাংলার প্রতিনিধি শনিবার বিকেলে সৈকত মণ্ডলের বাড়িতে গিয়ে তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় সৈকতকে নির্দোষ দাবি করেন তারা।

সৈকতের চাচা রেজাউল করিম বলেন, ‘আমার ভাতিজা সৈকত মণ্ডল ঘটনার দিন দক্ষিণ পাড়ায় হিন্দুপল্লিতে অবস্থান করছিল। ওই সময় পুলিশ ও রামনাথপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাদেকুল ইসলাম ছিলেন।

‘পুলিশ যখন বলছিল পরিতোষকে (ফেসবুকে যার একটি কমেন্ট নিয়ে উত্তেজনার শুরু) গ্রেপ্তার করা হবে, তখন সৈকত প্রশ্ন করেছিল কতক্ষণের মধ্যে গ্রেপ্তার করা হবে। পুলিশ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের আশ্বাস দিলে সৈকত হাত উঁচিয়ে সবাইকে বাড়ি যেতে বলে এবং এ নিয়ে বাড়াবাড়ি না করতে অনুরোধ করে।’

রাজধানীর কারওয়ান বাজার মিডিয়া সেন্টারে সৈকত ও তার সহযোগী

রেজাউল দাবি করেন, সৈকত যখন পীরগঞ্জের রামনাথপুর ইউনিয়নের বড় করিমপুর গ্রামের দক্ষিণ পাড়ায় পুলিশের সঙ্গে ছিলেন, তখন উত্তর পাড়ায় আগুন লাগে। তিনি নির্দোষ ও নিরপরাধ। তার পুরো বংশ আওয়ামী লীগ করে।

সৈকতের মা আঞ্জুয়ারা বেগম বলেন, ‘চেয়ারম্যান সাদেকুল পরে আমাদের কইছে বাড়ি থাকি সরি যাও। আমি আমার স্বামী আর সৈকতকে নিয়ে পলাশবাড়ি যাই। সেখান থেকে তিন বাড়ি চেঞ্জ করি। তারপর বোনের বাড়ি থেকে অন্য বাড়িতে আসি। সেখানে র‍্যাব আমাদের ধরে ফেলে। তখন সৈকতের ঠিকানা বলি। তারা সৈকতকে ধরে।’

নির্দোষ হলে বাড়ি থেকে পালালেন কেন, জানতে চাইলে সৈকতের মা আঞ্জুয়ারা বলেন, ‘চেয়ারম্যান আমাদের সরতে কইছে। রেকর্ড করার ফোন থাকলে রেকর্ড করলেম হয়।’

সৈকত মণ্ডলের দাদা আবুল হোসেন মণ্ডল বলেন, ‘আমি বঙ্গবন্ধুর আমল থেকে আওয়মী লীগ করি। যখন এলাকায় কেউ আওয়ামী লীগ করার সাহস পায় নাই, তখন আমরাই আওয়ামী লীগ করেছি। আমরা কেমন করি জামায়াত শিবির হই।’

এ ঘটনায় যারা জড়িত তদন্ত করে তাদের গ্রেপ্তার এবং সৈকতের মুক্তি দাবি করেন তিনি।

ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে গত রোববার রাতে পীরগঞ্জের রামনাথপুর ইউনিয়নের উত্তর পাড়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্তত ২৩টি বাড়িঘরে হামলা চালানো হয়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৬০টি পরিবার।

এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত তিনটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে মঙ্গলবার সকালে দুটি মামলা করেন পীরগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ইসমাইল হোসেন। ৪১ জনের নামসহ অজ্ঞাতপরিচয় অনেককে আসামি করে হিন্দুদের বাড়িঘরে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটের ঘটনায় একটি মামলা করেন। আরেকটি মামলা করেছেন একজনকে আসামি করে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে।

এরপর বুধবার রাতে পীরগঞ্জ থানার আরেক এসআই সুপথ হালদার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দুজনকে আসামি করে তৃতীয় মামলাটি করেন।

পীরগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাহবুবুর রহমান জানান, এখন পর্যন্ত তিন মামলায় ৫৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এ বিভাগের আরো খবর