কুমিল্লায় সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বিচার হবে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক শনিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এক অনুষ্ঠানে এ কথা জানান।
দুর্গাপূজায় সারা দেশে উৎসবমুখর পরিবেশের মধ্যে গত ১৩ অক্টোবর ভোরে কুমিল্লার নানুয়ার দিঘির পাড়ের ওই মণ্ডপে পবিত্র কোরআন শরিফ পাওয়ার পর ছড়িয়ে পড়ে সহিংসতা।
ওই মণ্ডপের পাশাপাশি আক্রান্ত হয় নগরীর আরও বেশ কিছু পূজামণ্ডপ। পরে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে চাঁদপুর, নোয়াখালী, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায়।
এ ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত ইকবাল হোসেনসহ চারজনকে শনিবার সাত দিনের রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ। অন্য আসামিরা হলেন মণ্ডপে কোরআন পাওয়ার তথ্য ৯৯৯-এ কল করে জানানো ইকরাম হোসেন এবং নগরীর শাহ আবদুল্লাহ গাজীপুরি (রা.)-এর মাজারের সহকারী খাদেম হুমায়ুন আহমেদ ও ফয়সাল আহমেদ। এই মাজারের মসজিদ থেকেই কোরআন নিয়ে মণ্ডপে রাখেন ইকবাল। সিসিটিভির ফুটেজে তা ধরা পড়ে।
সিসিটিভির ফুটেজকে প্রমাণ দেখিয়ে কুমিল্লার ঘটনায় করা মামলার বিচার করা যাবে কি না, এমন প্রশ্নে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘এই মামলার যখন পুলিশ প্রতিবেদন পাওয়া যাবে, তখন এটাকে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে দায়ের করা হবে। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে ভিডিও ধারণ করার যে এভিডেন্স আছে সেটা গ্রহণ করার একটা ধারা আছে, সেই ধারায় কোনো অসুবিধা হবে না।’
তাহলে মামলাটি কী দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে যাচ্ছে? জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘জ্বি, জ্বি মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে যাবে।’
অভিযোগ উঠেছে, সাম্প্রতিক সময়ে যেসব সাম্প্রদায়িক হামলা হয়েছে, সেগুলোর বিচার বিলম্ব হওয়াতে এ ধরনের ঘটনা ফের ঘটছে।
এ প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমার যত দূর জানা আছে, নাসিরনগরের যে ঘটনা সেটার তদন্ত বোধহয় এখনও শেষ হয়নি। আমি আপনাদেরকে বিনয়ের সঙ্গে বলতে চাই, যতক্ষণ পর্যন্ত তদন্ত শেষ না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত কিন্তু আদালতের বিচারিক এখতিয়ার হয় না। আদালতের হয়তো অনেকগুলো ইন্টারিম অর্ডার দেয়ার ক্ষমতা থাকে, কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত পুলিশ প্রতিবেদন না আসে…আদালত কিন্তু বিচারিক কাজ শুরু করতে পারে না।
‘আমরা সেটার জন্য অপেক্ষা করছি। আমি সকলকে আশ্বস্ত করতে চাই, যে মুহূর্তে তদন্ত শেষ হয়ে এটা বিচারিক আদালতে আসবে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে সমাপ্তি করা হবে।’
দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে কোনো মামলা যাওয়ার অর্থ হলো এটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি হওয়া।
দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আইন, ২০০২-এর ১০ (১) ধারা অনুযায়ী, ওই ট্রাইব্যুনালে কোনো মামলা স্থানান্তরের তারিখ থেকে ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে।
আইনের ১০ (২) ধারা অনুযায়ী, কোনো অনিবার্য কারণে ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি করা সম্ভব না হলে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল কারণ লিপিবদ্ধ করে অতিরিক্ত ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে মামলাটি নিষ্পত্তি করতে পারবে। একই সঙ্গে এ সম্পর্কে সুপ্রিম কোর্টকে লিখিতভাবে অবহিত করবে, যার একটি অনুলিপি সরকারের কাছে পাঠাতে হবে।
১০ (৩) ধারা অনুযায়ী, উল্লিখিত বর্ধিত সময়ের মধ্যেও যদি যুক্তিসঙ্গত কোনো কারণে মামলা নিষ্পত্তি করা সম্ভব না হয়, তাহলে ট্রাইব্যুনাল কারণ লিপিবদ্ধ করে আরও ১৫ কার্যদিবস সময় নিতে পারবে। সময় বাড়ানোর বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টকে লিখিতভাবে অবহিত করতে হবে, যার একটি অনুলিপি সরকারের কাছে পাঠাতে হবে।