কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন রাখার জেরে দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দুদের ওপর সহিংসতার বিচার বিভাগীয় তদন্তসহ আট দফা দাবি জানিয়ে শাহবাগে অবস্থান ছেড়েছে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ।
সংগঠনটি একই সঙ্গে তিন কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে।
শাহবাগ মোড় ছেড়ে শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের দিকে যায় হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের নেতা-কর্মীরা।
এর আগে সকাল ছয়টায় শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে ‘গনঅনশন ও গণঅবস্থান’ করে সংগঠনটি।
গণঅবস্থান চলাকালে শাহবাগ মোড় অবরোধ করে সংগঠনটির নেতা-কর্মীদের একটি অংশ।
দুপুর সাড়ে ১২টার আগে মানবাধিকারকর্মী খুশী কবির পানি পান করিয়ে আন্দোলনকারীদের অনশন ভাঙ্গান।
আট দফা
গণঅনশন ও গণঅবস্থানে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ সংগঠনের পক্ষে আট দফা দাবি উত্থাপন করেন।
১. শারদীয় দুর্গোৎসবের মধ্যে ও পরবর্তী সময়ে সারা দেশের বিভিন্ন জেলায় সংঘটিত সাম্প্রদায়িক সহিংসতার তদন্তে সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারকের নেতৃত্বে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন।
২. সাম্প্রদায়িক হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত সব মন্দির, বাড়িঘর পুনর্নির্মাণ, গৃহহীনদের পুনর্বাসন, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেয়া ছাড়াও আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। স্বজন হারানো প্রতিটি পরিবারকে কমপক্ষে ২০ লাখ টাকা দেয়া অথবা প্রতিটি পরিবারের সদস্যদের একজনকে যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরিতে নিয়োগ দেয়া।
৩. নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক হামলাকারী ও তাদের পেছনে থাকা চক্রান্তকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে শাস্তি নিশ্চিত করা।
৪. হামলা রোধে প্রধানমন্ত্রীর স্পষ্ট নির্দেশনা সত্ত্বেও প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে দায়িত্ব পালনে গাফিলতি ও অবহেলা প্রদর্শনকারীদের চিহ্নিত করে দ্রুত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া।
৫. বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ধর্মীয় বিদ্বেষ ছাড়াও সাম্প্রদায়িক উসকানিদাতাদের চিহ্নিত করে বিশেষ ক্ষমতা আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা।
৬. প্রধানমন্ত্রীর স্পষ্ট নির্দেশনা সত্ত্বেও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসীদের মোকাবিলায় যেসব জনপ্রতিনিধি এগিয়ে আসেনি, তাদেরও চিহ্নিত করে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেয়া।
৭. ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত সংগঠিত সাম্প্রদায়িক ঘটনাগুলো তদন্তে হাইকোর্টের নির্দেশনায় গঠিত সাহাবুদ্দিন কমিশনের সুপারিশ সংবলিত রিপোর্ট অনতিবিলম্বে জনসমক্ষে প্রকাশ এবং সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া।
৮. ১৯৭২ সালের সংবিধান পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে সরকারি দলের নির্বাচনি ইশতেহারে প্রতিশ্রুত সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন, বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়ন, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনের দ্রুত বাস্তবায়নসহ ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের কাছে দেয়া অঙ্গীকার দ্রুত বাস্তবায়ন।
তিন কর্মসূচি
মনীন্দ্র কুমার নাথ তিনটি কর্মসূচির ঘোষণা দেন।
১. আট দফার সমর্থনে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে চট্টগ্রামসহ সারা দেশে প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ‘চল চল ঢাকায় চল’ স্লোগানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে পদযাত্রা।
২. আটটি দাবি বাস্তবায়নে ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর প্রতিটি সংগঠন আলাদা ও যৌথভাবে জনসংযোগ ও প্রতিবাদী কর্মসূচি এগিয়ে নেবে।
৩. আগামী ৪ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় শ্যামাপূজায় দীপাবলী উৎসব বর্জন, সন্ধ্যা ৬টা থেকে সোয়া ৬টা পর্যন্ত কালো কাপড়ে মুখ ঢেকে মন্দিরে নীরবতা পালন এবং মন্দির/মণ্ডপের ফটকে কালো কাপড়ে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বিরোধী স্লোগান সংবলিত ব্যানার টাঙানো হবে।