কুমিল্লায় মণ্ডপে পবিত্র কোরআন রাখাকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতার প্রতিবাদে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ।
এতে সংহতি জানিয়েছেন রাজনীতিক, শিক্ষক, অধিকারকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
ঐক্য পরিষদের নেতা-কর্মীরা শনিবার বেলা ১১টার দিকে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন। এর আগে সকাল ছয়টা থেকে জাতীয় জাদুঘরের সামনে গণঅনশন, গণঅবস্থান ও বিক্ষোভ মিছিল হয়।
কী বলছেন অংশগ্রহণকারীরা
সকাল ৭টার দিকে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশের জন্য উপস্থিত হন সাবেক তথ্যমন্ত্রী ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু।
সংহতি জানিয়ে দেয়া বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘এই হামলা শুধু হিন্দুদের ওপর হামলা নয়; গোটা বাঙালির ওপর হামলা। প্রশাসনের গাফিলতির কারণে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হয়েছে। হামলা ঠেকাতে না পারার জন্য দায়ী প্রশাসনের একটি অংশ।
‘এই হামলার প্রতিবেদন দেখে আমার মনে হয়েছে, হামলা ঠেকাতে কিছু ক্ষেত্রে ব্যর্থতা আছে, কিছু ক্ষেত্রে অদক্ষতা আছে, কিছু ক্ষেত্রে গাফিলতি আছে। নোয়াখালীসহ বেশ কয়েক জায়গায় আমি দেখেছি প্রশাসনের উদ্দেশ্যমূলক নিষ্ক্রিয়তা। এটা খুবই ভয়াবহ ঘটনা। এই ধরনের হামলা ঠেকাতে সাম্প্রদায়িক জঙ্গি গোষ্ঠীকে আর ছাড় দেয়া যায় না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, ‘কোরআন অবমাননার জন্য হিন্দুদের ওপর হামলা চালানো হয়নি; বরং তাদের ওপর হামলা চালানোর উদ্দেশ্যেই কোরআনকে তাদের মন্দিরে রেখে আসা হয়।
‘হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতি পুনরুদ্ধারের জন্য রাজনৈতিক নেতাদের ভূমিকা রাখতে হবে। এবারের এই ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছে, শুধু প্রতিবাদ করলে হবে না; প্রতিরোধও গড়ে তুলতে হবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক রঞ্জন কর্মকার বলেন, ‘এ দেশের হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টানদের মানবাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। এটি করা না হলে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে যাবে।’
মহিলা ঐক্য পরিষদের সভাপতি সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য বলেন, ‘সারা দেশে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ওপর যে হামলা ও নির্যাতনের ঘটনা চলছে, তার সুষ্ঠু বিচার চাই।’
এ কর্মসূচির সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি অধ্যাপক নিমচন্দ্র ভৌমিক।
শারদীয় দুর্গোৎসব চলাকালে কুমিল্লা শহরে একটি মণ্ডপে পবিত্র কোরআন রাখাকে কেন্দ্র করে হিন্দুদের ওপর হামলা হয়। এর রেশ ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। বিভিন্ন স্থানে হিন্দুদের ঘরবাড়ি ও মন্দিরে হামলা করে দুর্বৃত্তরা।
এসব ঘটনার প্রতিবাদে রাজধানীসহ সারা দেশে প্রতিবাদ জানাচ্ছে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।