বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

৬ দিন পর পুষ্প রানীর চুলায় হাঁড়ি চড়ালেন মন্ত্রী

  •    
  • ২৩ অক্টোবর, ২০২১ ১২:৪৬

পুষ্প রানী বলেন, ‘এত দিন তো মন্দিরের ওটে (ওখানে) পাকশাক (রান্না) হইছে, ওটে খাইচি। কাল আইতোত (রাতে) ওটে খাইচি। আইজ সবাই বাড়ি বাড়ি রান্না করোচি।’ 

সাম্প্রদায়িক হামলায় ৬ দিন পর চুলায় রান্না চড়িয়েছেন রংপুরের পীরগঞ্জের করিমপুরে হিন্দুপল্লির মানুষ।

শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পীরগঞ্জে হিন্দুপল্লি পরিদর্শনে যান ত্রাণ ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান। সেখানে ক্ষতিগ্রস্তদের খোঁজখবর নেন তিনি। পরে পুষ্প রানী নামের একজনের বাড়িতে গিয়ে তার চুলায় রান্নার হাঁড়ি তুলে দেন।

পুষ্প রানী বলেন, ‘এত দিন তো মন্দিরের ওটে (ওখানে) পাকশাক (রান্না) হইছে, ওটে খাইচি। কাল আইতোত (রাতে) ওটে খাইচি। আইজ সবাই বাড়ি বাড়ি রান্না করোচি।’

ভট্টু চন্দ্র বলেন, ‘শুকুরবার সন্ধের আগে মাইকিন (মাইকিং) করে বলচে, বাড়ি বাড়ি পাক করতে। আজ আমরা পাক করছি।’

মহাদেব চন্দ্র বলেন, ‘সংসার করি খাইতে যা কিছু নাগে সমস্ত কিচু দিচে। পাক করতে সমস্যা কী। টিওনও (ইউএনও) স্যার কইচে সোগ (সব) তো দিচি, পাক করি খাও। এলা সমস্যা নাই, তাই আইজ পাক করতে কইচি বাড়ি ওয়ালাক (স্ত্রী)।’

আরেক ক্ষতিগ্রস্ত কুসুম বালা বলেন, ‘আইজ একনা শান্তি নাগচে। বাড়িত চুলা জ্বালাইচি। সবাই মিলি খামো। এত দিন তো ওত্তি খাচি, ভয় নাগটিল এলা ভয়টয় নাগে না।’

মন্ত্রীর সঙ্গে জেলা প্রশাসক আসিব আহসানসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, ৬১ পরিবারকে ১০১ বান্ডেল ঢেউটিন দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া নগদ অর্থের পাশাপাশি দেয়া হয়েছে খাবার, দুটি কম্বল ও শাড়ি-লুঙ্গি।

ক্ষতিগ্রস্তদের সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

কীভাবে হামলা হলো হিন্দুপল্লিতে

স্থানীয়রা জানান, রোববার রাত সাড়ে ৯টার দিকে রামনাথপুরের করিমপুর দক্ষিণপাড়ায় (হাজিপাড়া) পরিতোষের বাড়িতে ছিল প্রশাসনের লোকজন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করে তাদের সঙ্গে কথা বলছিলেন তারা। এ সময় হঠাৎ উত্তরপাড়ার হিন্দুপল্লির দিকে আগুন দেখা যায়।

তারা জানান, বটতলা মসজিদের পাশে ব্রিজের কাছেই রুহিনী চন্দ্র দাসের বাড়িতে গিয়ে প্রথমে পরিবারের সদস্যদের মারধর করে ভাঙচুর করা হয়। এরপর ভাঙচুর করা হয় ভবেশ চন্দ্র দাসের বাড়িতে। অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরে অংশ নেয় শত শত হামলাকারী।

পীরগঞ্জ হামলার মাস্টারমাইন্ড কে?স্থানীয়রা জানান, প্রথমে ব্রিজের কাছে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ শুরু হলেও পরে একে একে সব বাড়িতে তাণ্ডব চলে। তবে কার নেতৃত্বে এই তাণ্ডব শুরু হয়, সেটি বোঝা যায়নি।

রুহিনী চন্দ্র দাস বলেন, ‘আমার বাড়িতে যখন ভাঙচুর করে তখন পালায়ে যাই। রাস্তাত দেখি শোঠা পীরের ওই দিক থেকেও লোক আসতেছে।’

করিমপুর দক্ষিণপাড়ায় (হাজিপাড়া) যেখানে প্রশাসনের কর্মকর্তারা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অবস্থান নিয়েছিল, সেখান থেকে ঘটনাস্থল উত্তরপাড়ার মধ্যে রয়েছে বিশাল ধানক্ষেত। এর দূরত্ব ২৫০ মিটার। পায়ে হেঁটে ঘটনাস্থলে আসতে সময় লাগবে অন্তত ৫ মিনিট।

প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক ব্যক্তি জানান, হিন্দুপল্লিতে আগুন দেয়ার পর দূর থেকেই রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পরে অতিরিক্ত পুলিশ, র‍্যাব ও বিজিবি গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

বিকেল থেকেই আসতে থাকে মোটরসাইকেল

রামনাথপুরে ঢোকার মুখে পীরগঞ্জের খেজমতপুরের ঘেগার তলে মুদি ব্যবসা করেন ফিরোজ কবির।

তিনি বলেন, ‘রোববার বিকেল হতে না হতে অনেক মোটরসাইকেল যাওয়া শুরু করে। আমরা বলি এত গাড়ি যায় কই। সন্ধ্যার পর আরও বেশি যাওয়া শুরু করে। আমি তো এই মোড়ে ব্যবসা করি। তিন গ্রামের মানষোক চিনি। তবে যারা গেছে তাদের চিনি নাই। যারা গেছে তারা আমাদের গ্রামের লোক নয়।’

বড় মজিদপুর দক্ষিণপাড়ার মুদি দোকানি মাহবুব রহমান বলেন, ‘এত মোটরসাইকেল সেই দিন কুটি থাকি আইচচে বলতে পারি না। লোকগুলোক আগে দেকিও নাই। কেম্বা অপরিচিত লাগছিল।’

বটতলা বাজারের হোটেল ব্যবসায়ী মোস্তফা বলেন, ওই দিন হাটের দিন হওয়ায় শত শত মানুষ ব্রিজের কাছে বটতলা বাজারে অবস্থান নেন।

তারা মোটরসাইকেল ও অটোরিকশায় এসেছিলেন। অনেকেই দোকানের সামনে মোটরসাইকেল রাখছিল।

হামলা ঠেকাতে পারেননি ইউপি চেয়ারম্যানও

রামনাথপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাদেকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি অসহায় ভাই। অনেক চেষ্টা করেছি যেন কোনো সমস্যা না হয়। তবে শেষ পর্যন্ত পারিনি।’

রিমান্ডে ৩৭ জন

পীরগঞ্জে সাম্প্রদায়িক হামলার তিন মামলায় এখন পর্যন্ত ৫৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের মামলায় ৩৭ আসামিকে বৃহস্পতিবার তিন দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।

বাহিনীটির একটি সূত্র জানিয়েছে, রিমান্ডে থাকা অনেকেই হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন।

এ বিভাগের আরো খবর