বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

নিষেধাজ্ঞায়ও থেমে নেই ইলিশ ধরা

  •    
  • ২৩ অক্টোবর, ২০২১ ০৯:২০

চাঁদপুরে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন জেলে জানান, অভাবের তাড়নায় অনেক জেলে জেল-জরিমানার ঝুঁকি নিয়েও নদীতে নামছে ইলিশ ধরতে। এ কাজে অভিযানে জড়িত কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশ রয়েছে। তা ছাড়া নিষেধাজ্ঞার সময়ে নিবন্ধিত জেলেদের ২০ কেজি করে চাল দেয়ার কথা থাকলেও দেয়া হয়েছে ১৪-১৫ কেজি করে।

মা ইলিশ রক্ষায় গত ৪ অক্টোবর থেকে ২২ দিন সরকার সারা দেশে ইলিশ মাছ আহরণ, পরিবহন, মজুত, বাজারজাতকরণ, ক্রয়-বিক্রয় ও বিনিময় নিষিদ্ধ করলেও তা খুব একটা মানছেন না অনেক জেলে।

নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে চাঁদপুরে দিন-দুপুরে চলছে ইলিশ ধরা এবং কেনা-বেচা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ফাঁকি দিয়ে ইলিশ ধরা হচ্ছে ভোলা, বরগুনা ও ঝালকাঠিতেও।

নিষেধাজ্ঞার মধ্যে চাঁদপুরে পদ্মা-মেঘনায় জেলেদের ইলিশ ধরার দৃশ্য দেখা যাচ্ছে নিয়মিত। মা ইলিশ রক্ষায় প্রশাসন জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করলেও তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে চলছে ইলিশ ধরার মহোৎসব। নিষেধাজ্ঞায় দাম কম থাকায় ইলিশ কিনতে নদীতীরে প্রতিদিনই ভিড় করেন ক্রেতারা।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ইলিশ রক্ষায় তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। দিন-রাত অভিযান চালানো হচ্ছে নদীতে। আর সচেতন জেলেরা বলছেন, এভাবে মা ইলিশ নিধন করা হলে ভবিষ্যতে ইলিশ সংকট আরও প্রকট হবে।

চাঁদপুর নদী কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ইলিশ গবেষক ড. আনিছুর রহমান জানান, আশ্বিন মাসের অমাবস্যা ও ভরা পূর্ণিমায় মা ইলিশ ডিম ছাড়তে সমুদ্র ছেড়ে নদীর মিঠা পানিতে ছুটে আসে। ইলিশের ডিমের পরিপক্বতা ও প্রাপ্যতার ভিত্তিতে এবং আগের গবেষণার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে মা ইলিশ রক্ষা কার্যক্রম কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়।

তিনি বলেন, এ বছর ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা নদীর ৭০ কিলোমিটারসহ দেশের উপকূলীয় জেলার নদ-নদীতে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সময়ে যদি মা ইলিশকে নির্বিঘ্নে ডিম ছাড়তে দেয়া যায়, তবে আগামী বছর ইলিশের উৎপাদন আরও বৃদ্ধি পাবে।

চাঁদপুর সদরের পুরানবাজার থেকে হরিণা পর্যন্ত, রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের পুরো এলাকা, সদর উপজেলার আনন্দ বাজার, মতলব উত্তরের মোহনপুর এখলাসপুর, ষাটনল এলাকায় এবং হাইমচর উপজেলার কাটাখালী, গাজীনগর এবং চরভৈরবী এলাকায় বিকেল থেকে ভোর পর্যন্ত মা ইলিশ ধরার মহোৎসব চলে। মা ইলিশ রক্ষায় প্রতিদিন প্রশাসন, কোস্ট গার্ড, নৌপুলিশ ও মৎস্য বিভাগের লোকজন অভিযান চালাচ্ছে, কিন্তু কিছুতেই নিভৃত করা যাচ্ছে না অসাধু জেলেদের।

নিউজবাংলার প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, নিষেধাজ্ঞার মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে ইলিশ ধরা চলছে ভোলা, বরগুনা ও ঝালকাঠিতেও। ভোলার মনপুরা, মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে রাতের আঁধারে ইলিশ ধরছেন অনেক জেলে। লুকিয়ে লুকিয়ে ইলিশ শিকার চলছে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদী, বিষখালী নদী এবং বরগুনার নদীগুলোতেও।

কোথাও কোথাও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে জেলেদের সংঘর্ষেরও খবর পাওয়া যাচ্ছে। সম্প্রতি মুন্সিগঞ্জ সদরের মেঘনায় মা ইলিশ রক্ষা অভিযানে গিয়ে জেলে ও এলাকাবাসীর হামলায় আহত হয়েছেন নৌপুলিশের পাঁচ সদস্য।

তবে নিষেধাজ্ঞার মধ্যে বেশি ইলিশ ধরা হচ্ছে চাঁদপুরে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন জেলে জানান, অভাবের তাড়নায় অনেক জেলে জেল-জরিমানার ঝুঁকি নিয়েও নদীতে নামছে ইলিশ ধরতে। এ কাজে অভিযানে জড়িত কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশ রয়েছে। তা ছাড়া নিষেধাজ্ঞার সময়ে নিবন্ধিত জেলেদের ২০ কেজি করে চাল দেয়ার কথা থাকলেও দেয়া হয়েছে ১৪-১৫ কেজি করে।

এভাবে চলতে থাকলে অভিযানে সফলতা আসবে না বলেও মনে করছেন অনেকে।

সদর উপজেলার হরিণা ফেরিঘাট এলাকার জেলে মোহাম্মদ হোসেন বলেন, ‘আমরা যারা প্রকৃত জেলে রয়েছি, তারা ইলিশ না ধরলেও অনেকেই পেটের দায়ে মাছ ধরতে যায়। তাদের অনেকে আবার ধরাও পড়েছে। জেলেদের চাল দেয়ার পাশাপাশি নগদ অর্থ সহায়তা দেয়া হলে তারা মাছ ধরতে যেত না। অভিযান সফল করতে জেলেদের সহায়তা বৃদ্ধি করতে হবে। তাহলেই অভিযানের সময়ে জেলেরা নদীতে মাছ ধরতে নামবে না।’

চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা গোলাম মেহেদী হাসান বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময়ে জেলেরা যাতে ইলিশ শিকার করতে না পারে, সে জন্য সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আমরা পুলিশ, কোস্ট গার্ড, নৌপুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে দিন-রাত অভিযান পরিচালনা করছি। আমরা ইলিশ রক্ষায় সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি।’

জেলা মৎস্য থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন ৪৪ হাজার ৩৫ জেলেকে ২০ কেজি করে চাল দেয়া হচ্ছে। তা ছাড়া নিষেধাজ্ঞার পর থেকে এ পর্যন্ত বিপুল পরিমাণ কারেন্ট জাল ও ইলিশ জব্দ করা হয়েছে। দুই শতাধিক জেলেকে অর্থদণ্ডের পাশাপাশি বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।

চাঁদপুর অঞ্চরের নৌপুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘মা ইলিশ রক্ষায় আমরা নিয়মিতভাবে নদীতে টহল দিয়ে যাচ্ছি। কোনো অবস্থায় যেন জেলেরা ইলিশ নিধন করতে না পারে সে ব্যাপারে কঠোর নজরদারি করছি। তার পরও অনেক সময় কিছু অসাধু জেলে নদীতে নেমে মাছ ধরার চেষ্টা করে। তাদের বিরত রাখতেও আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’

এ বিভাগের আরো খবর