বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পঞ্চগড়ের মোটা বালু, অব্যবস্থাপনায় রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার

  •    
  • ২৩ অক্টোবর, ২০২১ ০৯:১৮

পঞ্চগড় জেলার প্রায় ২০০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে রয়েছে প্রাকৃতিক এই সম্পদের ক্ষেত্র। করতোয়া, মহানন্দা, ডাহুক, চাওয়াই, করুম, ভেরসাসহ অন্যান্য নদীর বিশাল এলাকা থেকে তোলা হচ্ছে মোটা ও সিলিকা বালু। এসব বালু বিভিন্ন স্থাপনা, সড়ক, বহুতল ভবনসহ অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যবহার করা হচ্ছে।

সীমান্তবর্তী জেলা পঞ্চগড়ের ওপর দিয়ে বয়ে চলেছে ছোট-বড় অর্ধশতাধিক নদ-নদী। এসব নদ-নদীতে উজান থেকে আসে মূল্যবান নুড়ি পাথর, সিলিকা ও মোটা দানার বালু।

গুণগত মানের কারণে পঞ্চগড়ের সিলিকা ও মোটা দানার বালুর চাহিদা এখন দেশজুড়ে। তবে সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে। পাশাপাশি বালু সংরক্ষণ ও বিপণনে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকায় পরিবেশেরও ক্ষতি হচ্ছে।

পঞ্চগড় জেলার প্রায় ২০০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে রয়েছে প্রাকৃতিক এই সম্পদের ক্ষেত্র। করতোয়া, মহানন্দা, ডাহুক, চাওয়াই, করুম, ভেরসাসহ অন্যান্য নদীর বিশাল এলাকা থেকে তোলা হচ্ছে মোটা ও সিলিকা বালু। এসব বালু বিভিন্ন স্থাপনা, সড়ক, বহুতল ভবনসহ অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যবহার করা হচ্ছে।

স্থানীয় লোকজন জানান, পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলা থেকে ভজনপুর-তেঁতুলিয়া বাংলাবান্ধা এলাকা পর্যন্ত করতোয়াসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পাড়ে প্রায় হাজারখানেক স্থান থেকে বালু তোলা হয়। সারা বছর এসব স্থান থেকে দিন-রাত চলে বালু উত্তোলনের কর্মযজ্ঞ।

স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে প্রতিদিন এসব বালু শত শত ট্রাকে ঢাকা, বগুড়া, রাজশাহী, চাঁপাই, পাবনা, কুষ্টিয়া, মাগুরা, খুলনাসহ পাঠানো হয় দেশের বিভিন্ন জেলায়।

নদী থেকে বালু উত্তোলন, পরিবহন ও বালু ব্যবসায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত দুই লাখের বেশি মানুষ। একজন বালুশ্রমিক সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত আয় করেন ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত।

পরিবেশ ও প্রকৃতি নিয়ে কাজ করা ব্যক্তিরা বলছেন, জেলার ভূগর্ভস্থ নুড়ি পাথর এবং বিভিন্ন নদ-নদীর সিলিকা ও মোটা দানার বালু উত্তোলন, বিপণন ও সরবরাহের ক্ষেত্রে সরকারি কোনো নীতিমালা নেই। এতে কিছু মানুষ বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে নামমাত্র মূল্যে ইজারা দিয়ে লাভবান হচ্ছে।

এতে রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। আর পরিবেশ বিপর্যয় করে অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে এসব সম্পদ আহরণ করায় জেলার জীববৈচিত্র্যে নানা প্রভাব পড়ছে।

পঞ্চগড় জেলা আইনজীবী সমিতির জ্যেষ্ঠ সদস্য আবু বক্কর সিদ্দীক বলেন, ‘পঞ্চগড় জেলায় ভূগর্ভস্থ সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণে সরকারের সুষ্ঠু কোনো পরিকল্পনা নেই। বর্তমানে জমি যার, খনি তার এই নীতিতেই চলছে। পরিকল্পিতভাবে এসব সম্পদের ব্যবহার করতে না পারলে ভবিষ্যতে পরিণতি খারাপ হবে।’

অ্যাডভোকেট আবুল খায়ের বলেন, ‘নদীকেন্দ্রিক এই জনপদের বালু, পাথরসহ অন্যান্য সম্পদ সংরক্ষণ, বিপণন যেভাবে চলছে, তাতে সম্ভাবনার জায়গাগুলো অতি দ্রুতই বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে।

প্রতিদিন শত শত ট্রাকে করে অতিরিক্ত লোড নিয়ে বালু-পাথর পরিবহন করায় গ্রামীণ জনপদের রাস্তাঘাট ভেঙে মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে। আর লাভবান হচ্ছে একটি মহল। জাতীয় স্বার্থে সরকারের এ বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন।’

তবে বালু ব্যবসায়ীদের দাবি, সব খরচ বাদ দিয়ে তাদের খুব বেশি লাভ থাকে না।

পঞ্চগড় সদর উপজেলার বটতলীর বালু ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন বাবলু জানান, ১০ চাকার একটি ট্রাকে মান অনুযায়ী ৮ হাজার থেকে ১৩ হাজার টাকার বালু বিক্রি হয়। এ ক্ষেত্রে ইজারাদারকে দিতে হয় ৮০০ টাকা।

নিজের নৌকার খরচসহ শ্রমিকদের আনুষাঙ্গিক উপকরণ সরবরাহ করতে হয়। ট্রাকপ্রতি বালু শ্রমিকদের দিতে হয় পাঁচ হাজার টাকা। সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের ট্যাক্স।

ইজারাদার আব্দুর রহমান জানান, চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় প্রতিবছর বালুমহালের ডাক বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে ব্যবসায় তেমন লাভ আর হয় না। তবে এলাকার শ্রমিকরা খেয়ে-পরে জীবন চালাতে পারছেন।

জেলা পাথর-বালু ব্যবসায়ী সমিতির যুগ্ম সম্পাদক আবু সালেক বলেন, ‘জেলার ১৫টি বালুমহাল থেকে চলতি বছরে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৪ কোটি ৩১ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। এ ছাড়া স্থানীয় অর্থ বাণিজ্যে এই শিল্প ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। সঠিক নীতিমালা অনুসরণ করে এই সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা করতে পারলে অর্থ বাণিজ্যে এই জেলা স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে।’

পঞ্চগড় জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ার সাদাত সম্রাট জানান, এখানকার বালুর গুণগত মান উন্নত। দেশে চাহিদা রয়েছে প্রচুর। সঠিক ব্যবস্থাপনায় সুষ্ঠু বিপণনে সরকার কাজ করছে। দেশের কংক্রিট শিল্পে বড় ধরনের অবকাঠামো উন্নয়নে এই বালুর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে।

পঞ্চগড় সড়ক ও জনপদের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মনিরুজ্জামান বলেন, এই জেলার মোটা দানার বালু দেশের বিভিন্ন মেগা প্রকল্পে চলে যাচ্ছে। সরবরাহ ও বন্দোবস্তের ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল হতে পারলে সরকার লাভবান হবে।

এ বিভাগের আরো খবর