ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলাজুড়ে, বিশেষ করে শহরে যেদিকেই তাকানো হোক শুধু ব্যানার-পোস্টার আর ফেস্টুন। সে সঙ্গে জেলার মহাসড়ক থেকে শুরু করে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক, তৈরি করা হয়েছে বড় বড় তোরণ।
শনিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা যুবলীগের বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হবে। সে সভাকে ঘিরেই এমন সাজ সাজ অবস্থা।
১৭ বছর পর যুবলীগের কমিটি গঠনের যে গুঞ্জন সেটি এই বর্ধিত সভায় আলোচনা হবে। এ জন্য সম্ভাব্য পদপ্রত্যাশীরা কেন্দ্রীয় নেতাদের স্বাগত জানিয়ে ব্যানার, ফেস্টুন ও তোরণে শহর ছেয়ে ফেলেছেন।
সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নাঈম। জেলা শহর ঘুরে দেখা যায়, ঢাকা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার প্রবেশপথ আশুগঞ্জ থেকে শুরু শহরের কাউতলী, টিএ রোড, কালীবাড়ির মোড়, কুমাড়শীল মোড়, কোর্ট রোড, সাবরেজিস্ট্রার অফিসসহ বিভিন্ন সরকারি স্কুল-কলেজের ভবনে লাগানো হয়েছে ব্যানার, ফেস্টুন।
একইভাবে সার্কিট হাউস এলাকায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কেও লাগানো হয়েছে ব্যানার ও তোরণ।
এ ছাড়া জেলার বিভিন্ন পর্যায়ের যুবলীগের নেতা-কর্মীদের নামে শুভেচ্ছাবার্তার ফেস্টুন ও তোরণ দেয়া হয়েছে। বর্ধিত সভাকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও সরব যুবলীগের নেতা-কর্মীরা।শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভাষা চত্বর এলাকায় তোরণ লাগিয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের সভাপতি ভিপি হাসান সারোয়ার। তিনি যুবলীগের সভাপতি প্রার্থী।
শুক্রবার বিকেলে মুঠোফোনে তিনি বলেন, ‘১৭ বছর পর বর্ধিত সভা হচ্ছে। তা নিয়ে খুবই ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছি। তা ছাড়া কমিটি নিয়েও জরুরি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন কেন্দ্রীয় নেতারা। নেতাদের আগমনকে কেন্দ্র করে আশুগঞ্জ থেকে শুরু করে জেলা শহরের প্রধান সড়ক পর্যন্ত ২৬টি তোরণ বসিয়েছি। তা ছাড়া শহরজুড়েই টাঙিয়েছি ব্যানার ফেস্টুন।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিন বছরের জন্য ২০০৪ সালের ২৮ জুন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা যুবলীগের বর্তমান কমিটি গঠন হয়েছিল। ১৭ বছর পার হলেও নতুন কমিটি হয়নি। এরই মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রলীগের কমিটি ৪ বার হয়েছে। তাতে সাবেক ছাত্রলীগের নেতারাও পদহীন আছেন দীর্ঘদিন।
২০০৪ সালে অ্যাডভোকেট মাহবুবুল আলম খোকনকে সভাপতি ও অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম ফেরদৌসকে সাধারণ সম্পাদক করে ৭১ সদস্যবিশিষ্ট জেলা যুবলীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়।
সে কমিটি ঘোষণার প্রায় এক বছর পর ২০০৫ সালের ১৮ জুন কেন্দ্রীয় যুবলীগের তৎকালীন চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির নানক ও সাধারণ সম্পাদক মির্জা আজম তিন বছর মেয়াদে এই কমিটির অনুমোদন দেন।
তবে সে কমিটি তিন বছরের জন্য অনুমোদন দেয়া হলেও ১২ বছর পার হয়। পরে জেলা যুবলীগের কমিটির সভাপতি মাহবুবুল আলম খোকন জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদে চলে যান।
এরপর সিনিয়র সহসভাপতি অ্যাডভোকেট শাহনুর ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করা হয়।এদিকে যুবলীগের কমিটির অপেক্ষায় বসে ছিলেন ছাত্রলীগের সাবেক নেতা-কর্মীরা। এবার নতুন কমিটিতে তারা পদ পাবেন বলে প্রত্যাশার কথা জানান।
সে জন্য বর্ধিত সভাকে কেন্দ্র করে জেলা যুবলীগের সভাপতি পদে প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছেন ১৪ জন প্রার্থী।নতুন কমিটিতে সিরাজুল ইসলাম ফেরদৌস, সৈয়দ এহতেশামুল বারী তানজিল, হাজি মাহমুদুল হক ভূইয়া,হাসান সারোয়ার, জাহাঙ্গীর আলম, আলী আজম, শাহসুদ আলম, হাবিবুর রহমান পারভেজ, মাসুম বিল্লাহসহ সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদে বিভিন্ন প্রার্থীরা প্রচারণা চালাচ্ছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা যুবলীগের বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম ফেরদৌস বলেন, ‘নানা কারণে ২০১৪ সালের পর আর সম্মেলন হয়নি। আমরা যেসব কমিটি দিয়েছিলাম সবগুলোর মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা, আখাউড়া ও আশুগঞ্জ উপজেলায় আহ্বায়ক কমিটি দেয়া হয়েছিল তিন মাসের জন্য। তারও মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে।’
তিনি জানান, জেলায় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড গতিশীল করার লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী সভা আহ্বান করা হয়েছে। সভায় কমিটি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে।