বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বিআরটিএ অফিসে শর্ষের মধ্যে ভূত: কাদের

  •    
  • ২২ অক্টোবর, ২০২১ ১৯:২৪

জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবসের আলোচনায় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘অনেকগুলো ত্রুটি আমাদের আছে, সেটা তো অস্বীকার করে লাভ নেই। সুন্দর সুন্দর ব্যানার পোস্টার করলেই আমাদের দায়িত্ব শেষ হয় না। নিরাপদ সড়ক দিবস করতে হবে প্রতিদিন।’

নিজের মন্ত্রণালয়ের বিস্তর উন্নয়নের পরও সড়ককে নিরাপদ না করতে পারায় স্বস্তিতে নেই বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবসের আলোচনায় ওই মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আমরা সড়কে শৃঙ্খলা কেন আনতে পারব না? সড়কে শৃঙ্খলা আনা বড় চ্যালেঞ্জ।’

শুক্রবার জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস-২০২১ উপলক্ষে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ওই আলোচনায় এবারের বিষয় ছিল ‘গতিসীমা মেনে চলি, সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করি।’

তার বক্তব্যের আগে হাইওয়ে পুলিশের আইজিপি মল্লিক ফখরুল ইসলাম গত ৯ মাসের জরিমানার পরিসংখ্যান তুলে ধরেন।

সে প্রসঙ্গ তুলে হাইওয়ে পুলিশের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, ‘কত টাকা জরিমানা তুলেছেন, এটার হিসাব দিয়ে কোনো লাভ নেই। এটা কোনো বিষয় নয়। আমার কাছে বিষয় সড়ক নিরাপদ আছে কি না। গাড়িগুলো নিয়মমতো চলছে কি না, গাড়ির ফিটনেস আছে কি না, চালকের ফিটনেস, গাড়ির চালক গাড়ি চালাবার যোগ্য কি না, গাড়ি ওভারলোডেড কি না, গাড়ি বেশি গতিতে চলছে কি না। আমি এটাই দেখব। আমার কাছে বিষয় দুর্ঘটনা কমেছে কি না।’

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘প্রতিদিনই দুর্ঘটনা ঘটছে। পাখির মতো মানুষ মরে, মাছির মতো মানুষ মরে। এ মর্মান্তিক দৃশ্যপট মানুষ হিসেবে সইতে পারি না। অনেক কষ্ট হয়।’

তিনি বলেন, ‘অনেকগুলো ত্রুটি আমাদের আছে, সেটা তো অস্বীকার করে লাভ নেই। সুন্দর সুন্দর ব্যানার পোস্টার করলেই আমাদের দায়িত্ব শেষ হয় না। নিরাপদ সড়ক দিবস করতে হবে প্রতিদিন।’

কাদের বলেন, ‘এত উন্নয়ন হলো, কিন্তু অনেকে বলেন এই কাজটি হয় না কেন। সড়কে শৃঙ্খলা কেন আনতে পারব না। এখন সংকট শৃঙ্খলা, পরিবহন ও সড়কের। এখানে ব্যর্থ হলে আমাদের উন্নয়ন ম্লান হয়ে যাবে। এটাই আমাদের চ্যালেঞ্জ।’

মন্ত্রী হলেও আমি তো মানুষ

বক্তব্যের শুরুতে প্রতিদিন সড়কে মৃত্যু নিজেকে কষ্ট দেয় বলে জানান মন্ত্রী। বলেন, ‘প্রতিদিন সকালটা আমার কাছে আসে ভিন্নভাবে, সবার দিন শুরু হয় একভাবে, আর আমার দিনটি শুরু হয় অন্যভাবে। কাগজের পাতার অপ্রত্যাশিত মর্মান্তিক দুর্ঘটনা খবর পড়ে আমার দিন শুরু হয়। মন্ত্রী হলেও আমি তো মানুষ। আমারও কষ্ট হয়। আমিও দগ্ধ হই অদেখা দহনে। মনে হয় আমিও সেই অসহায় পরিবারের একজন।’

আগামীতে তার মন্ত্রণালয়ের বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্প আসছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘অবকাঠামোগতভাবে পরিবর্তন দৃশ্যমান। আগামী বছর সড়কে আমি তো বলব বৈপ্লবিক পরিবর্তন পুরোপুরি দৃশ্যমান হবে। পদ্মা সেতু নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে, আমি গর্ব করে বলব, আমার মন্ত্রণালয়ে মেগা প্রকল্পগুলো আগামী বছর উদ্বোধন হবে। সেগুলো হলো পদ্মা সেতু, এমআরটি লাইন ৬, মেট্রোরেল, বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ও চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধু কর্ণফুলী টানেল।’

আগামীতে চট্টগ্রামের মিরসরাই থেকে আরেকটি মেরিন ড্রাইভ উদ্বোধন করা হবে বলেও এ সময় জানান তিনি।

মন্ত্রী বলেন, ‘আগামী ২৪ অক্টোবর পায়রা সেতুর উদ্বোধন হবে। আর দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা ঢাকা-সিলেট ও সিলেট-তামাবিল মহাসড়কের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।’

এত উন্নয়নমূলক কাজের পরও স্বস্তি পাচ্ছেন না বলে আলোচনায় জানান মন্ত্রী। বলেন, ‘এত কিছু করার পরও আমি স্বস্তি পাচ্ছি না।’

রাজনৈতিক তদবির বন্ধ করেছি

আলোচনায় তার মন্ত্রণালয়ে রাজনৈতিক তদবির বন্ধ করেছেন বলে দাবি করেন মন্ত্রী। বলেন, ‘আমার মন্ত্রণালয়ে রাজনৈতিক তদবির বন্ধ করে দিয়েছি। ইঞ্জিনিয়ার ট্রান্সফার, বিআরটিএ-এর অফিসার ট্রান্সফার, এসব তদবির শুরুতে আমার জন্য ছিল চ্যালেঞ্জিং। কিন্তু আমি কঠোর হয়েছি, প্রধানমন্ত্রী আমাকে সাপোর্ট দিয়েছেন, সচিবরা আমার সঙ্গে ছিল, যে কারণে আমি এসব প্র্যাকটিস বন্ধ করতে পেরেছি।

‘মন্ত্রীকে কিছু দিয়ে চিফ ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার একটা প্র্যাকটিস মন্ত্রণালয়ে আগে ছিল। কিন্তু আমি আসার পর তা বন্ধ করেছি। সেই প্র্যাকটিস এখন আর নেই। কাউকে টাকা দিয়ে যদি চিফ ইঞ্জিনিয়ার হতে হয়, ওই টাকা সে ওঠাবে যখন দায়িত্ব পাবে। এটাই তো স্বাভাবিক।’

বিআরটিএতে শর্ষের মধ্যে ভূত

নিজ বক্তব্যে টিআরটিএর দুর্নীতি নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন মন্ত্রী। বলেন, ‘রাজনৈতিক তদবির হয়, কারণ সবাই আসতে চায় মিরপুরে না হলে ইকুরিয়ায় (কেরানীগঞ্জ)। টাকার খনি আছে ওখানে। যেখানে গাড়ি বেশি সেখানে সবাই ট্রান্সফার হয়ে যেতে চায়। এসব অপকর্ম আমি বন্ধ করেছি।’

বিআরটিএ চেয়ারম্যানের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমি বলব, যা বন্ধ হয়নি সেটা বন্ধ করেন। এখনও বিআরটিএ অফিসগুলোতে শর্ষের মধ্যে ভূত। এই ভূত হলো দালাল।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভেতরের আশ্রয়-প্রশয় না পেলে কীভাবে বাইরে থেকে তারা দৌরাত্ম্য করে? এগুলো বন্ধ করতে হবে যেকোনো মূল্যে। আমি কোনো রাজনৈতিক সুবিধা কাউকে অ্যালাউ করি না।’

বিআরটিএ চেয়ারম্যানের উদ্দেশে হুঁশিয়ারি দিয়ে কাদের বলেন, ‘বিআরটিএতে অপকর্ম যারা করে, তাদের ভালো হয়ে যেতে বলুন চেয়ারম্যান সাহেব। এগুলো নিয়ে ডিসিপ্লিনারি অ্যাকশন নিন।’

এক পশলা বৃষ্টিতে রাস্তা উঠে যায়

এ সময় আলোচনায় উপস্থিত ইঞ্জিনিয়ারদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘অনেক ইঞ্জিনিয়ার ভালো কাজ করেন। কিন্তু কেউ কেউ যে কাজ করেন, এক পশলা বৃষ্টি হলেই সে রাস্তা ভেসে যায়। এ রাস্তা করার কোনো দরকার নেই। কাজের মান ঠিক রাখুন। যারা ভালো কাজ করে আমি তাদের প্রশংসা করব।’

মন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এক বছরের মধ্যে কিছু চার লেন রাস্তা এবড়োখেবড়ো হয়ে গেছে। দেশের টাকা খরচ করে এই রাস্তা করার দরকারটা কী?’

এ সময় উপস্থিত সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিবের উদ্দেশে মহাসড়কে চালকদের জন্য নির্মাণাধীন বিশ্রামাগার প্রকল্প দ্রুত শেষ করার নির্দেশ দেন মন্ত্রী।

সড়ক ও মহাসড়ক পরিবহনের সচিব নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের ইলিয়াস কাঞ্চন, সড়ক ও জনপদ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী আব্দুস সবুর ও হাইওয়ে পুলিশের আইজিপি মল্লিক ফখরুল ইসলাম।

এ বিভাগের আরো খবর