পদ্মা নদীতে প্রশাসনের অভিযানে জেল-জরিমানা ও অস্থায়ী বাজার উচ্ছেদের পরও থামেনি ইলিশ শিকারিদের দৌরাত্ম্য।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর স্থায়ী ক্যাম্প না থাকার সুযোগে মাদারীপুরের শিবচর, শরীয়তপুরের জাজিরা, মুন্সীগঞ্জের লৌহজং, ঢাকার দোহার, ফরিদপুরের সদরপুর অংশে পদ্মা নদী ও চরগুলোতে প্রকাশ্যেই বিক্রি হচ্ছে মা ইলিশসহ ছোট-বড় ইলিশ।
কাঁশবনের মাঝে অস্থায়ী তাবু টানিয়ে চলছে এসব ইলিশ কেনাবেচা। অনেক সময় মাছ চরে রেখেই মোবাইল ফোনের মাধ্যমে নদী পাড়ের প্রত্যন্ত বাজারে বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতারা নানা উপায়ে পৌঁছাচ্ছেন প্রত্যন্ত এসব এলাকায়।
প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানান, মা-ইলিশ রক্ষায় ৪ অক্টোবর থেকে সরকার ঘোষিত ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা কার্যকরে পদ্মা নদী ও সংলগ্ন চরগুলোতে প্রশাসন ব্যাপক অভিযান চালানো হচ্ছে। কয়েকটি হাট-বাজারের শতাধিক অস্থায়ী স্থাপনাও উচ্ছেদ করা হয়েছে। জেল-জরিমানা করা হয়েছে কয়েক শ জেলেকে।
তবে পদ্মাপাড়ের বিভিন্ন চর ঘুরে দেখা যায়, নদী ও চরগুলোতে স্থায়ীভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী না থাকায় সুযোগ পেলেই জেলেরা নদীতে নেমে পড়ছেন। মাদারীপুরের শিবচর, শরীয়তপুরের জাজিরা, মুন্সীগঞ্জের লৌহজং, ঢাকার দোহার, ফরিদপুরের সদরপুরসহ পদ্মা নদীর বিস্তীর্ণ জলরাশি ও চরগুলোতে চলছে ইলিশ নিধনের মহোৎসব।
ধরা পড়া এসব ইলিশের অধিকাংশের পেট ভরা ডিম। জাটকাও ধরা পড়ছে। ভাটি অঞ্চলে কোস্টগার্ড, নৌবাহিনী ও নৌপুলিশের টহল থাকলেও উজানে ইলিশ নিধনে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন জেলেরা। আর চরের যে স্থানগুলোতে সড়ক যোগাযোগ নেই, সেখানেই বসছে বাজার।
আরও দেখা যায়, চরের কাশবনগুলোতে গড়ে তোলা হয়েছে জেলেদের আবাসস্থল ও অস্থায়ী আড়ৎ। ইলিশের স্বাদ নিতে অনেকে আবার সেখানে আসছেন পিকনিকে।
পদ্মায় ইলিশ নিধন ঠেকাতে অন্য এলাকার চেয়ে শিবচরের প্রশাসন বেশি কড়া। এই এলাকার এরই মধ্যে প্রায় ২০০ জেলেকে ১ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
এ বিষয়ে জেলে সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় আমাদের শিবচরের প্রশাসন অনেক কড়াকড়ি থাকলেও মুন্সিগঞ্জ, জাজিরাসহ অন্য অঞ্চলে প্রশাসন ততটা কড়াকড়ি করে না। তাই আমরা ওইসব অঞ্চলে গিয়ে মাছ ধরে চরেই বিক্রি করি।
‘শহরের কোনো হাট-বাজারে যাই না। এখানে অনেক ধরনের ক্রেতা আসে। আমরাও তাদের একটু কম দামে মাছ দিয়ে থাকি।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ক্রেতা বলেন, ‘শুনেছি পদ্মার মাদবর চরের খাড়াকান্দি এলাকায় কম দামে ইলিশ মাছ পাওয়া যায়। তাই ট্রলারে ভেঙে ভেঙে এই চরে এসে কিছু মাছ কিনলাম।
‘তবে মাছের দাম বেশি মনে হচ্ছে। যে পরিমাণে দাম কম হওয়ার কথা, সেই পরিমাণে কম পাচ্ছি না। প্রশাসনেরও ভয় আছে। তবুও মাছ কিনলাম।’
চর জানাজাতের স্থানীয় বাসিন্দা আল আমিন শেখ বলেন, ‘মা-ইলিশ রক্ষায় প্রশাসনের লোকজন নদীতে দিনে দুইবার নাম মাত্র টহল দেয়। পাড়ে কেউ আসে না।
‘চরগুলোতে অস্থায়ী বাজার বসিয়ে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ইলিশ বেচাকেনা হয়। নিষেধাজ্ঞার সময় নদীতে যদি স্থায়ীভাবে টহলের ব্যবস্থা করা হয়, তাহলে মা ইলিশ নিধন বন্ধ করা সম্ভব।’
শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আমরা প্রতিনিয়ত দফায় দফায় পদ্মায় অভিযান পরিচালনা করছি। জেলেদের জেল-জরিমানা করা হচ্ছে। চরগুলোতে অভিযান চালিয়ে শতাধিক ইলিশ বিক্রির স্থাপনা উচ্ছেদও করা হয়েছে।
‘তবে মা ইলিশ রক্ষায় স্থায়ীভাবে নদী ও চরগুলোতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করা প্রয়োজন। তাহলে কার্যকরি ব্যবস্থা হবে। না হলে সুযোগ বুঝে অসাধু মাছ শিকারিরা ইলিশ নিধন করবেই।’
শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিরাজ হোসাইন বলেন, ‘আমরা মাঝে মাঝেই অসাধু ইলিশ শিকারিদের ধরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জেল-জরিমানা করাচ্ছি। তবে জেলেরা কৌশলে সন্ধ্যা বা গভীর রাতে ইলিশ ধরে ক্রেতাদের কাছে কাঁশবনে বসেই বিক্রি করছে।
‘আমাদের যাওয়া আগেই তারা সেখান থেকে সরে যায়। ট্রলার বা স্পিডবোট নিয়ে গেলে তারা দূর থেকে দেখে পালিয়ে যায়। যে কারণে ওদের ধরার কোনো সুযোগ নেই। আমরা বিভিন্ন পয়েন্টে টহল দিচ্ছি ইলিশ ধরা রোধ করতে।’