ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিভাগের শিক্ষক সামিয়া রহমান ও ক্রিমিনোলজি বিভাগের প্রভাষক সৈয়দ মাহফুজুল হক মারজানের যৌথভাবে লেখা ‘এ নিউ ডাইমেনশন অব কলোনিয়ালিজম অ্যান্ড পপ কালচার: এ কেস স্ট্যাডি অব দ্য কালচারাল ইমপেরিয়ালিজম’ শিরোনামে লেখা প্রবন্ধটি মানহীন ও দুর্বল বলে উল্লেখ করেছে ট্রাইব্যুনাল।
তাদের বিরুদ্ধে চৌর্যবৃত্তির প্রমাণ না পেলেও তাদের প্রবন্ধটি গবেষণা প্রবন্ধ হিসেবে বিবেচনা না করে বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নাল সোশ্যাল সাইন্স রিভিউ থেকে বাতিলের সুপারিশ করেছে ট্রাইব্যুনাল।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. রহমত উল্লাহর নেতৃত্বে গঠিত চার সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এমনটি বলেছে।
সামিয়া রহমানের গবেষণা জালিয়াতি সংক্রান্ত তদন্ত কমিটির রিপোর্ট, গঠিত ট্রাইব্যুনালের নথিসহ সব কাগজপত্র ৩ সপ্তাহের মধ্যে আদালতে জমা দিতে গত ৫ সেপ্টেম্বর আদেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। ওই আদেশের পর সব নথি বৃহস্পতিবার হাইকোর্টে এসে পৌঁছে। যার একটি প্রতিবেদন নিউজবাংলার কাছে আসে।
এ বিষয়ে আগামী রোববার হাইকোর্টে শুনানি হতে পারে।
সামিয়াদের প্রবন্ধকে একটি দুর্বল ও মানহীন উল্লেখ করে গবেষণা জালিয়াতি নিয়ে গঠিত ট্রাইব্যুনালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রবন্ধটি জমা দেয়া থেকে শুরু করে রিভিউ, চূড়ান্তভাবে গ্রহণ ও ছাপানোর প্রক্রিয়াতে অসচ্ছতা ও অদক্ষতা রয়েছে বলে প্রত্যক্ষভাবে প্রতীয়মান হয়েছে।
২০১৬ সালের ডিসেম্বরে সামিয়া রহমান ও মারজানের যৌথভাবে লেখা ‘এ নিউ ডাইমেনশন অব কলোনিয়ালিজম অ্যান্ড পপ কালচার: এ কেস স্ট্যাডি অব দ্য কালচারাল ইমপেরিয়ালিজম’ শিরোনামের আট পৃষ্ঠার একটি গবেষণা প্রবন্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সোশ্যাল সায়েন্স রিভিউ’ জার্নালে প্রকাশিত হয়।
প্রবন্ধটি নিয়ে অভিযোগ উঠলে প্রথমে একটি কমিটি গঠন করা হয়। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. রহমত উল্লাহকে আহ্বায়ক করে চার সদস্যের ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। এই ট্রাইব্যুনালের সদস্য করা হয় ঢাবির সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা, গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. শরীফ উল্লাহ মজুমদার (অভিযুক্ত সৈয়দ মাহফুজুল হক মারজানের মনোনীত প্রতিনিধি) ও সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী মিনহাজুল হক চৌধুরী (অভিযুক্ত মিসেস সামিয়া রহমানের মনোনীতি প্রতিনিধি)।
ট্রাইব্যুনালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, (১) অভিযুক্ত প্রবন্ধটিতে ৬০টি অনুচ্ছেদের মধ্যে প্রায় ৪৮টি অনুচ্ছেদ কপি করা হয়েছে। তন্মধ্যে কমিউনালিজম টু কালচারাল ইম্পেরিয়ালিজম: এডওয়ার্ড সাঈদ (পৃষ্ঠা: ৮৭-৯১) অংশে এডওয়ার্ড সাঈদ রচিত কালচার অ্যান্ড ইম্পেরিয়ালিজম বইয়ের বিভিন্ন অংশ থেকে প্রবন্ধটিতে ২৭ শতাংশ কপি করা হয়েছে। এছাড়াও ফরাসী দার্শনিক মিশেল ফুকোর দ্য সাবজেক্ট অ্যান্ড পাওয়ার প্রবন্ধ থেকেও আনুমানিক পাঁচ পৃষ্ঠা (৩০ শতাংশ) কপি করা হয়েছে।
এমনকি, ফুকো-কে নিয়ে রায়ান জেকবসের লেখা থেকেও কোন রেফারেন্স ছাড়াই নিজেদের লেখায় (৫ শতাংশ) কপি করা হয়েছে। টিউমোটিন পদ্ধতির মাধ্যমে দেখা যায় এই প্রবন্ধটিতে বিভিন্ন সোর্স থেকে আনীত প্রায় ৭০ শতাংশ টেক্সটের মিল আছে।
২. এই দুই লেখক এডওয়ার্ড সাঈদ ও মিশেল ফুকোর লেখাকে সরাসরি নিজেদের বলে দাবী করেননি সত্য। তবে, সাইটেশনের নিয়মানুযায়ী সরাসরি উদ্ধৃতির ক্ষেত্রে শব্দসীমা থাকে, কিন্তু তারা সেটা অনুসরণ করেননি। যদিও লেখকরা তাদের লিখিত বক্তব্যে বলছেন, প্রবন্ধটি মিশেল ফুকো এবং এডওয়ার্ড সাঈদের তাত্ত্বিক কাজের একটি তুলনামূলক বিশ্লেষণ, প্রবন্ধটির কোথাও সাঈদ বা ফুকোর বক্তব্যকে নিজেদের বক্তব্য বলে দাবি করেননি।
প্রবন্ধটির শেষের দিকে সাঈদ ও ফুকোর রেফারেন্সও দেয়া হয়েছে। আর্টিকেলটিতে সাইটেশনের ভুল আছে, তবে সম্পূর্ণ অনিচ্ছাকৃত এবং সাইটেশন ত্রুটি বলে বিবেচনা করা যায়। অভিযুক্ত আর্টিকেলটি ২০১৬ সালে সাবমিট করা হয়। সেই সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে টারনিটিন সফটওয়্যারের সুবিধা ছিলো না। যদি থাকতো তাহলে এই অনিচ্ছাকৃত ভুলগুলো ধরা পড়ত।
এমন একটি দুর্বল ও মানহীন প্রবন্ধ কীভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নালে ছাপা হলো তা ট্রাইব্যুনালের কাছে বোধগম্য নয়। রিভিউয়ার ও এডিটরিয়াল বোর্ড অবশ্যই তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে ব্যর্থ হয়েছেন এবং এজন্য তারা দায় এড়াতে পাবেন না। এধরনের ভুলের জন্য এডিটর ও এডিটোরিয়াল বোর্ডকে অভিযুক্ত করা উচিত ছিল বলে ট্রাইব্যুনাল মনে করে।