পূজামণ্ডপে হামলায় উসকানি দেয়ার অভিযোগে মাওলানা আব্দুর রহিম বিপ্লবীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
বৃহস্পতিবার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যা ইউনিয়ন থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সিআইডির সাইবার ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড রিস্ক ম্যানেজমেন্ট বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রেজাউল মাসুদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গত ১৩ অক্টোবর দুর্গাপূজার মহাষ্টমীর দিন ভোরে কুমিল্লা শহরের নানুয়ার দিঘির পাড়ে একটি পূজামণ্ডপে কোরআন পাওয়া যায়। পরে একদল লোক কোরআন শরিফ অবমাননার অভিযোগ তুলে মণ্ডপে হামলা ও ভাঙচুর চালায়। এই ঘটনার জের ধরে সেদিনই চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে কিছু মন্দিরে হামলা চালানো হয়। সহিংসতায় কয়েকজন নিহত হয়।
সিআইডি জানায়, ওই দিনই দেশের একজন ইসলামি বক্তা মাওলানা আব্দুর রহিম বিপ্লবী একটি ওয়াজ মাহফিলে বক্তব্য দেয়ার সময় উসকানিমূলকভাবে বলেন, ‘মূর্তির পায়ে যারা পবিত্র কুরআন শরিফ রেখেছে তাদেরকে ১৪ অক্টোবর, বৃহস্পতিবারের মধ্যে গ্রেপ্তার না করলে ১৫ অক্টোবর শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে বাংলাদেশের প্রত্যেকটি মসজিদ থেকে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে এবং বাংলাদেশে একটি পূজামণ্ডপও রাখব না।’
এ ছাড়া তিনি কুমিল্লার পূজাকে কেন্দ্র করে চাঁদপুরে নিহতের ঘটনায় পুলিশকে দায়ী এবং দোষী করে অপমানজনক, তুচ্ছতাচ্ছিল্য, অবজ্ঞা এবং উগ্র বক্তব্য প্রচার করে বলে সিআইডি জানায়।
সিআইডির কর্মকর্তারা জানান, এই বক্তব্য বিভিন্নভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে নেটিজেন ও জনগণের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। এই বক্তব্য ছড়িয়ে পড়লে সারা দেশেই আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটতে থাকে।
দেশের বিভিন্ন জায়গায় হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ও উপাসনালয়ে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। ফলে অনেকেই তাকে গ্রেপ্তারের দাবি জানান। বিষয়টি সিআইডির সাইবার মনিটরিং সেলের নজরে এলে তারা দ্রুত সেই আব্দুর রহিম বিপ্লবীকে শনাক্ত করে।
পরবর্তীতে অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহমুদুল ইসলাম তালুকদারের তত্ত্বাবধানে পুলিশ পরিদর্শক মোসাম্মৎ শাজেনা লতার নেতৃতে সাইবার মনিটরিং সেলের একটি টিম মাওলানা আব্দুর রহিম বিপ্লবীকে গ্রেপ্তার করে। আব্দুল রহিমের বিরুদ্ধে পল্টন মডেল থানায় মামলা হয়েছে।
সিআইডি জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পূজামণ্ডপ সম্পর্কিত উসকানিমূলক বক্তব্য দেয়ার কথা আব্দুর রহিম স্বীকার করেছেন। তার এই বক্তব্য সিআইডি পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য সংরক্ষণ করেছে।
এ ধরনের বক্তব্য প্রদানকারীদের তথ্য সিআইডিকে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন মুহাম্মদ রেজাউল মাসুদ। তিনি বলেন, ধর্মীয় উসকানিমূলক বক্তব্য দেয়ার মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটাবার চেষ্টা করা একটি ফৌজদারি অপরাধ। এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য থাকলে সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করা হলো।