দুর্গাপূজার সময় কুমিল্লায় সাম্প্রদায়িক সহিংসতার হোতাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী চিহ্নিত করেছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। বলেছেন, তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। গ্রেপ্তার করতে পারলেই খুলবে সব রহস্যের জট।
সচিবালয়ে বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
হোতার নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, ‘কুমিল্লার যে টার্গেট, আমি আগেই বলেছি, আমরা সুনিশ্চিত যে লোকটি করেছে, ভিডিও ক্যামেরার মাধ্যমে তাকে আমরা চিহ্নিত করেছি। একটি মাজারের সঙ্গে যে মসজিদ দেখা গেছে সেখানে সে গিয়েছে। একবার-দুবার নয়, তিনবার গিয়েছে। সেখানে মসজিদের দুজন খাদেম ছিল, তাদের সঙ্গে সে কথা বলেছে।
‘আমাদের অভিজ্ঞ টিম দীর্ঘক্ষণ এটা অ্যানালাইজ করে তারা সুনিশ্চিত হয়েছেন, মসজিদ থেকে যে কোরআন এনে রাখা হয়েছে, এটি তারই কর্ম।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যতটুকু দেখেছি সে (কোরআন) নিয়ে আসছে এবং মণ্ডপের মধ্যে রেখে মূর্তির গদাটি সে কাঁধে করে নিয়ে আসছে। এ ব্যক্তিটি কার প্ররোচনায়, কার নির্দেশে কীভাবে এ কাজ করল… সে তো প্ল্যানমাফিক করেছে, আপনারা দেখেছেন। এটা নির্দেশিত হয়ে বা কারো প্ররোচনায় এটি করেছে বলে আমরা মনে করি। তাকে ধরতে পারলে বাকি সবকিছুই আমরা উদ্ধার করতে পারব বলে মনে করছি।’
কুমিল্লায় সাম্প্রদায়িক সহিংসতার মূল হোতা কোনো মোবাইল ফোন ব্যবহার করছেন না বলে জানালেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। বলেছেন, এর ফলে তার অবস্থানও জানা যাচ্ছে না।
আসাদুজ্জামান বলেন, ‘সে কোনো মোবাইল ব্যবহার করছে না। যারা তাকে পাঠিয়েছিল তারাও লুকিয়ে রাখতে পারেন। আমরা তাকে বের করতে সর্বাত্মক ব্যবস্থা নিয়েছি।’
কুমিল্লা নগরীর নানুয়ার দিঘির পাড়ের পূজামণ্ডপে গত ১৩ অক্টোবর ভোরে হনুমানের মূর্তির ওপর পবিত্র কোরআন শরিফ পাওয়ার পর ছড়িয়ে পড়ে সহিংসতা।
ওই মণ্ডপের পাশাপাশি আক্রান্ত হয় নগরীর আরও বেশ কিছু পূজামণ্ডপ। পরে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে চাঁদপুর, নোয়াখালী, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায়।
সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ এবং তদন্তসংশ্লিষ্টদের তথ্যের ভিত্তিতে বুধবার জানা যায়, নানুয়ার দিঘির পাড়ের পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন শরিফ রেখেছিলেন ইকবাল হোসেন নামের স্থানীয় এক যুবক। সহিংসতার আগের রাতে তিনি কোরআনটি নিয়েছিলেন মণ্ডপের পাশের শাহ আবদুল্লাহ গাজীপুরি (রা.)-এর মাজারের মসজিদের বারান্দা থেকে।
ইকবাল রাত ২টা ১০ মিনিটের দিকে কোরআন শরিফটি হাতে নিয়ে মণ্ডপের দিকে রওনা হন। এরপর মূল মণ্ডপের বাইরে পূজার থিম হিসেবে রাখা হনুমানের মূর্তির ওপর কোরআন রেখে ফিরে আসেন। এসব দৃশ্য ধরা পড়েছে ওই এলাকার সিসিটিভি ক্যামেরায়।
ইকবালের সহযোগী হিসেবে অন্তত চারজন এরই মধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মনে করছে, ইকবাল গ্রেপ্তার হলেই এ ঘটনায় জড়িত সবাইকে চিহ্নিত করা সম্ভব হবে।
এর আগেও সারা দেশে যেসব সাম্প্রদায়িক সহিংসতা হয়েছে সেসব ঘটনার মামলার কার্যক্রম সাক্ষীর অভাবে শেষ করা যাচ্ছে না বলে ব্রিফিংয়ে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন। রামুর তদন্ত রিপোর্ট দেয়া হয়েছে, সেখানে কেউ সাক্ষ্য দিতে যাচ্ছেন না। নাসিরনগরে একটি ছাড়া সব মামলার চার্জশিট দেয়া হয়েছে, কিন্তু সেখানেও কেউ সাক্ষ্য দিতে যাচ্ছেন না। যেটুকু বাকি আছে সেটা খুব শিগগিরই শেষ হবে।
‘পুলিশ আমাকে রিপোর্ট করেছে, সাক্ষীরা এখন সাক্ষ্য দিতে যায় না। তারা অনীহা প্রকাশ করছে, এ জন্য বিচার হয়তো দেরি হতে পারে।’
দুর্গাপূজার সময়টায় সহিংসতার পর পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক আছে বলেও দাবি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর। তিনি বলেন, ‘আমি তো বলব, এখন আর আতঙ্ক নেই। ঢাকা শহরে কোথায় আতঙ্ক আছে, কুমিল্লাতেও কোনো আতঙ্ক নেই।
‘এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটিয়েছে। আমি বলব, উদ্দেশ্যমূলকভাবে ঘটিয়েছে এবং এরপরে আকস্মিকভাবে যেগুলো হয়েছে, হয়েছে। পরিবেশ এখন সম্পূর্ণ শান্ত আছে। যে যার যার কাজে চলে গিয়েছে।’