সন্ধ্যার পর ভাসানচরের সঙ্গে মূল ভূখণ্ডের নৌ-চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
সচিবালয়ে বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বলপ্রয়োগে বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের সমন্বয়, ব্যবস্থাপনা ও আইনশৃঙ্খলা-সম্পর্কিত জাতীয় কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
সভা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মাদক প্রবেশ ও মাদক ব্যবসা (কারবার) রোধে মনিটরিং বাড়ানো হবে। মাদকমুক্ত করতে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হবে।
‘ভাসানচর থেকে মূল ভূখণ্ডে সন্ধ্যার পর আর কোনো নৌকা চলবে না। সন্ধ্যার পর ভাসানচর থেকে নোয়াখালী বা হাতিয়ায় যে যাতায়াত, সেটি বন্ধ থাকবে।’
কক্সবাজারের পরিবেশে বিরূপ প্রভাব ফেলার কারণে নোয়াখালীর ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের সরিয়ে নেয়ার উদ্যোগ চলমান রেখেছে সরকার। বর্তমানে প্রায় ১৮ হাজার রোহিঙ্গাকে সেখানে রাখা হয়েছে। সরকারের লক্ষ্য আরও ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে পর্যায়ক্রমে সেখানে নেয়ার।
শুরুতে এতে আপত্তি জানালেও সম্প্রতি ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের মানবিক কর্মসূচি পরিচালনায় রাজি হয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক অঙ্গ সংস্থা ইউএনএইচসিআর।
এ ছাড়া টেকনাফ ও উখিয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য বৃদ্ধির কথা ভাবা হচ্ছে বলে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের জন্মহার নিয়ন্ত্রণের বিষয়টিও সভায় আলোচনা হয়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের জন্মহার আপনারা দেখেছেন। লাগামহীনভাবে এদের পরিবারের পরিসর বেড়ে যাচ্ছে। জন্মহার নিয়ন্ত্রণ ও নতুন জন্ম নেয়া রোহিঙ্গাদের তালিকাভুক্তির ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’
আগামী ডিসেম্বর থেকে আবারও ভাসানচরে রোহিঙ্গা স্থানান্তরের কাজ শুরু হবে বলে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমাদের যে লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ভাসানচরে ডিসেম্বর থেকে স্বল্প সময়ের মধ্যে এক লাখ রোহিঙ্গাকে নিয়ে যাওয়ার, সেটি আমরা জোরদার করব।
‘ডিসেম্বর থেকে শুরু করে এক লাখ রোহিঙ্গাকে আমরা সেখানে নিয়ে যাব। সে কারণে তাদের থাকার জন্য বা নিরাপত্তা ও যাওয়া-আসার জন্য যেকোনো লজিস্টিক সাপোর্ট নিয়ে আলাপ হয়েছে।’
এ সময় রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যা তদন্তের বিষয়ে সবশেষ তথ্য জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এত বড় একটি জনগোষ্ঠী; এখানে থাকলে সহিংসতা থাকতেই পারে, কিন্তু মুহিবুল্লাহ হত্যার বিষয়টি আমাদের আঘাত করেছে; আহত করেছে। সে সোচ্চার ছিল এদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে।
‘কী উদ্দেশ্যে তাকে হত্যা করা হলো, সেটা আমরা এখনও তদন্ত করছি। বেশ কয়েকজনকে আমরা এরই মধ্যে আটক করেছি। যাদের আটক করা হয়েছে, তারা এ হত্যার সঙ্গে জড়িত বলে আমরা নিশ্চিত। আমরা মনে করছি, এদের জিজ্ঞাসাবাদের পর সব ঘটনা আপনাদের জানিয়ে দেব।’
সীমান্তে গোলাগুলির কোনো উদ্দেশ্য নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সীমান্তে যদি কেউ অবৈধ অনুপ্রবেশ করে বা সীমান্তের নিয়ম কেউ ভঙ্গ করে, তখন বিজিবি ব্যবস্থা নেয়। কেউ ফায়ার ওপেন করলে বিজিবিও ফায়ার ওপেন করে। কোনো নিরপরাধ লোককে ফায়ার করা বিজিবির কাজ নয়।
‘এখানে ফায়ার করার উদ্দেশ্যে বিজিবি নয়, বিজিবি হলো সীমান্ত রক্ষার জন্য। এর জন্য যা যা করা প্রয়োজন, বিজিবিকে সে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।’