সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া ভিডিও ছড়িয়ে সাম্প্রদায়িক উসকানির অভিযোগে গ্রেপ্তার বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের সহকারী অধ্যাপক রুমা সরকারকে দুই দিনের রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ।
ঢাকার মহানগর হাকিম মাসুদ-উর-রহমান বৃহস্পতিবার শুনানি শেষে তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দেন।
এর আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রমনা মডেল থানার উপপরিদর্শক (নিরস্ত্র) মো. শফিকুল ইসলাম এ রুমাকে আদালতে হাজির করে সংশ্লিষ্ট থানায় করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন।
আবেদনে বলা হয়, রুমা সরকার সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নোয়াখালীর যতন সাহার হত্যার শিরোনামে একটি অন্য ঘটনার ভিডিও আপলোড করে কিছু স্বার্থান্বেষী মহল দ্বারা গুজব সৃষ্টির করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের অপপ্রয়াস চালান, যা বিভ্রান্তিমূলক।
এতে বলা হয়েছে, প্রকৃতপক্ষে ভিডিওটি ১৬ মে বিকেল ৪টার সময় ঢাকার পল্লবী থানার ডি-ব্লকের শাহিন উদ্দিন নামে এক ব্যক্তিকে হত্যার ভিডিও। এ সময়ে সনাতন ধম্বালম্বীদের শারদীয় দুর্গাপূজাকেন্দ্রিক সহিংসতাকে ঘিরে সারা দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের ঘটনা ঘটানো হচ্ছিল।
রিমান্ডের আবেদনে বলা হয়, দেশের এ সময়ে এ ধরনের স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে রুমা সরকার ১৯ অক্টোবর দুপুর ২টা ৩৫ মিনিট থেকে ২টা ৪২ মিনিট পর্যন্ত ফেসবুক লাইভে আসেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘আমি ভুল করে যতন সাহার মৃত্যুর দৃশ্য দেখে ফেলেছিলাম। গরুর মাংস যে ভাবে কুপিয়ে বানায়, আহা হিন্দুদের প্রতি তোর এত ক্ষোভ। তোরা অমানুষ, হত্যার পর এই ভাবে কুপালি ক্যান?’
আবেদনে আরও বলা হয়, দেশের সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপটে নাজুক পরিস্থিতিতে তার লাইভ ভিডিওটি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় এবং সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে গুজব ও ভয়ভীতি ছড়াতে সাহায্য করে।
এতে বলা হয়, প্রাথমিক তদন্তে জানা যায় রুমা সরকার রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি বা সুনাম বিনষ্ট করার অভিপ্রায়ে ফেসবুকে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে, মিথ্যা অপপ্রচার, হিন্দু সম্প্রদায়কে উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান করে দেশে বিরাজমান পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটানোর সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছিল।
কী উদ্দেশ্যে, কার ইন্ধনে, কোন পরিকল্পনা সামনে রেখে কার পরামর্শে ফেসবুক লাইভে রুমা এ ভিডিওর মাধ্যমে অপপ্রচার চালিয়েছেন সেটি যাচাই এবং ওই ঘটনার অন্য কোনো গভীর ষড়যন্ত্র লুকিয়ে আছে কি না সেটি উদঘাটনের লক্ষ্যে তার সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা।
আসামির পক্ষে লিটন কুমার সাহা ও সুব্রত বিশ্বাস শুভ্র রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে এর বিরোধিতা করা হয়।
উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত রুমা সরকারের দুই দিনের রিমান্ড অনুমোদন দেন বলে জানান সংশ্লিষ্ট থানার আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা এসআই নিজাম উদ্দিন ফকির।
বুধবার সকালে রাজধানীর বেইলি রোডের বাসা থেকে রুমা সরকারকে আটক করে র্যাব।
রাজধানী পল্লবীর সাহিনুদ্দীন হত্যাকাণ্ডের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নোয়াখালীর যতন সাহা হত্যাকাণ্ডের বলে অপপ্রচারের অভিযোগে তাকে আটক করে বাহিনীটি। পরে রুমাকে র্যাব সদর দপ্তরে নিয়ে যাওয়া হয়।
বুধবার র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ব্যবহার করে একটি ভিডিও ভাইরাল করেন রুমা সরকার, যে ভিডিও অনেক আগের এবং সাম্প্রতিক কোনো ঘটনার সঙ্গে মিল নেই।
‘এ ছাড়া তিনি ফেসবুক লাইভে এসে উসকানিমূলক তথ্য ছড়িয়েছেন। এতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হতে পারে বলে আশঙ্কা ছিল। এ জন্য তাকে আমরা হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছি।’
জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে রুমার নামে মামলা করে র্যাব।