দেশের পণ্য প্রদর্শনী ও বাণিজ্য মেলার স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে রাজধানীর পূর্বাচলের বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে ১১ টার দিকে ভার্চুয়ালি সেন্টারটি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে গণভবন প্রান্ত থেকে যোগ দেন তিনি।
নির্মাণ কাজ শেষে এ বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি প্রদর্শনী কেন্দ্রটি সরকারের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করে চীন।
ঢাকার পূর্বাচলে ২০১৫ সালের জুলাইয়ে শুরু হয় প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৩০৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এর মধ্যে চীন সরকারের অনুদান ৬২৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা।
এটি নির্মাণ করেছে চীনের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান চায়না স্টেট কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন। এই প্রদর্শনী কেন্দ্রের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব থাকবে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর কাছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সভাপতি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশী বলেন, ‘এই এক্সিবিশন সেন্টারটিকে বিজনেস হাব হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।’
একটা স্থায়ী কাঠামো না থাকার কারণে পণ্য প্রদর্শনীতে যেমন জটিলতা হচ্ছিল তেমনি উন্মুক্তস্থানে মেলা অনুষ্ঠিত হওয়ায় আর্থিক ক্ষতিও হচ্ছিল বলে জানান মন্ত্রী।
এ সময় প্রকল্প বাস্তবায়নে চীন সরকারের ভূমিকায় ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান মন্ত্রী। বলেন, ‘চীন বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী। আগামীতেও এমন সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে এবং দুই দেশ বাণিজ্য খাতের উন্নয়নে একসঙ্গে কাজ করব।’
বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, ‘এখন থেকে প্রতিবছরের পয়লা জানুয়ারি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার উদ্বোধন করতে পারবেন।’
চীনের আর্থিক অনুদান ও কারিগরি সহায়তায় রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর মালিকানায় পূর্বাচলে ২০ একর জমিতে নির্মাণ করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু চায়না-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারটি।
আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের কাছে টানতে তৈরি এই কেন্দ্রটির নাম বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টার করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। তাতে সম্মতি দিয়েছে চীন।
এটির নির্মাণ শুরু হয় ২০১৭ সালের ১৭ অক্টোবরে। আর শেষ হয় গেল গত বছরের নভেম্বরে।
নির্মাণের কারণ ব্যাখ্যায় রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো বলছে, বাণিজ্য সম্প্রসারণে দেশি-বিদেশি পণ্য উৎপাদনকারী ও ক্রেতাদের বাংলাদেশে আর্ন্তজাতিক মানের একটি সাধারণ প্ল্যাটফর্মে নিয়মিত ও সরাসরি যোগাযোগের ক্ষেত্র তৈরি করা।
ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ তৈরিতেই প্রদর্শনী কেন্দ্র
ব্যবসা বাণিজ্যের মধ্য দিয়েই দেশের উন্নতি হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ব্যবসা বাণিজ্যের সুযোগ তৈরি করার জন্য আমরা এই সেন্টারটি তৈরি করেছি।’
তাই প্রদর্শনী কেন্দ্রটির সর্বোত্তম ব্যবহারের তাগিদ দিয়ে সরকার প্রধান বলেন, ‘এই এক্সিবিশন সেন্টারের মাধ্যমে বাংলাদেশের পণ্য নিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশের জন্য রপ্তানি মেলা, সোর্সিং ফেয়ার আয়োজন এবং ক্রেতা আকর্ষণের জন্য বছরব্যাপী বাণিজ্য প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সম্মেলন আয়োজনসহ দেশের বাণিজ্য প্রসারেও বিভিন্ন মেলা এখানে আয়োজন করতে পারবেন।’
সারা বছর প্রদর্শনী কেন্দ্রটি ব্যবসায়ীদের কাছে নানা আয়োজনের জন্য ভাড়া দিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আয় বাড়বে বলেও মনে করেন প্রধানমন্ত্রী।
করোনা মহামারিতে সারা বিশ্বে অর্থনীতির স্থবিরতা এসেছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই দেড় বছরে আমরা চেষ্টা করেছি, যাতে আমাদের ব্যবসাটা চলে। তবে আন্তর্জাতিক মেলার আয়োজন আমরা করতে পারিনি। তবে সীমিত পরিসরে ডিজিটাল রপ্তানি মেলা বা সোর্সিং ফেয়ারের আয়োজন করা হয়েছে। বিশালাকারে যে রপ্তানি মেলা আমরা করতাম সেটা করা সম্ভব হয়নি।’
প্রধানমন্ত্রীর কথায় উঠে আসে এই প্রদর্শনী কেন্দ্র নির্মাণের প্রেক্ষাপট।
তিনি বলেন, ‘রপ্তানি মেলাটা আমরা খোলা জায়গায় করতাম। সেখানে ব্যবসায়ীরা নিজেরা নিজেদের মত অবকাঠামো গড় তুলতেন। আবার সেটা ভাঙতে হত। এমন কিছু ঝামেলা ছিল। আর জায়গাটাও ছিল সীমিত। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, ভালো বড় জায়গায় সেন্টার তৈরি করার, যেখানে ১২ মাস মেলা চলতে পারে।’
প্রদর্শনী কেন্দ্রটি নির্মাণে সহায়তা করায় চীনকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।
যা থাকছে এক্সিবিশন সেন্টারে
এক্সিবিশন সেন্টারের মোট ফ্লোরের আয়তন ৩৩ হাজার বর্গমিটার। ভবনের ফ্লোরের আয়তন ২৪ হাজার ৩৭০ বর্গমিটার। এক্সিবিশন হলের আয়তন ১৫ হাজার ৪১৮ বর্গমিটার।
এক্সিবিশন হলে ৮০০টি বুথ রয়েছে। প্রতিটি বুথের আয়তন ৯ দশমিক ৬৭ বর্গমিটার।
দোতলা পার্কিং বিল্ডিংয়ের মোট পার্কিং স্পেস ৭ হাজার ৯১২ বর্গমিটার যেখানে ৫০০টি গাড়ি রাখা যাবে। আর এক্সিবিশন বিল্ডিংয়ের সামনের খোলা জায়গায় আরও ১ হাজার গাড়ি পার্কিং করার সুযোগ আছে।
এতে রয়েছে ৪৭৩ আসনের একটি মাল্টি ফাংশনাল হল, ৫০ আসনের একটি কনফারেন্স রুম, ছয়টি নেগোসিয়েশন/মিটিং রুম, ৫০০ আসনের ক্যাফেটরিয়া/রেস্টুরেন্ট, শিশুদের খেলার স্পেস, নামাজের কক্ষ, অফিস রুম দুইটি, মেডিক্যাল রুম, ডরমিটরি-গেস্ট রুম, ১৩৯টি টয়লেট, বিল্ট ইন পাবলিক অ্যাড্রেস সিস্টেম।
এ ছাড়াও রয়েছে নিজস্ব ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট, স্টোর রুম, সিএটিভি কন্ট্রোল রুম, অটোমেটেড সেন্ট্রাল এসি সিস্টেম, ইনবিল্ট ইন্টারনেট/ওয়াইফাই, আধুনিক অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা, আলাদা রেজিস্ট্রেশন হল, আধুনিক ফোয়ারা, ইন বিল্ট পতাকা স্ট্যান্ড, রিমোট কন্ট্রোলড-ইলেকট্রনিক প্রবেশ গেইট।