চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে বাবা-ছেলে খুনের রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
ঘটনার প্রায় এক বছর পর দায়িত্ব পেয়ে পিবিআই মাত্র ২০ দিনে এই জোড়া খুনের রহস্য উন্মোচন করে। এ মামলায় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক কামাল আব্বাস বিষয়টি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন বৃহস্পতিবার।
জোড়া খুনের মামলায় গ্রেপ্তার তিনজন হলেন মো. ফিরোজ, মো. সালাহ উদ্দিন ওরফে মন্নান ও মো. এখলাস। তারা ফটিকছড়ির কাঞ্চননগর ইউনিয়নের বাসিন্দা।
এর মধ্যে মো. ফিরোজ বুধবার চট্টগ্রাম অ্যাডিশনাল চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফরিদা ইয়াসমিনের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। বাকি দুজনকে তিন দিন করে রিমান্ডে পাঠায় আদালত।
এর আগে মঙ্গলবার খাগড়াছড়ির লক্ষ্মীছড়ি থেকে মন্নানকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেয়া তথ্যানুযায়ী ভুজপুরের সুয়াবিল থেকে ফিরোজ এবং কাঞ্চননগর থেকে এখলাসকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক কামাল আব্বাস নিউজবাংলাকে জানান, ২০২০ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর উপজেলার কাঞ্চননগর ইউনিয়নে দুইদ্যা খাল থেকে ফকির আহমেদের গলা কাটা দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনার পরের দিন ফটিকছড়ি থানায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন নিহতের বাবা এজহার মিয়া।
খুনের ৯ মাসেও পুলিশ কাউকে শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করতে না পাড়ায় মামলাটির তদন্তের বিষয়ে পিবিআইয়ের সঙ্গে যোগাযোগের সিদ্ধান্ত নেন এজহার মিয়া। আসামিরা বিষয়টি জানতে পারেন।
পিবিআই জানায়, সংস্থাটি মামলার তদন্তের দায়িত্ব পেলে আর রক্ষা নেই, এই চিন্তা করে এজহার মিয়াকেও খুন করার সিদ্ধান্ত নেন ফকির আহমেদকে খুনের মামলার আসামিরা।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বলেন, সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০২১ সালের ২৪ জুন কাঞ্চননগর ইউনিয়নের খামারবাড়ির কাছাকাছি লাঙ্গল মেরামতের সময় এজহার মিয়াকেও খুন করেন আসামিরা। পরদিন দক্ষিণ কাঞ্চননগরের গরজইজ্ঞা থেকে এজহার মিয়ার গলা কাটা দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় ২৬ জুন নিহতের স্ত্রী নাছিমা বেগম ফটিকছড়ি থানায় আরেকটি হত্যা মামলা করেন।
ঘটনার পর এক বছর পেরিয়ে গেলেও বাবা-ছেলে হত্যার কোনো কূলকিনারা খুঁজে না পাওয়ায় মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পিবিআইকে দেয়া হয়।
পিবিআইয়ের উপপরিদর্শক কামাল আব্বাস বলেন, ‘মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর ওই এলাকার সোর্সকে কাজে লাগিয়ে খুনের সঙ্গে এজহারের মেয়ের জামাই এখলাসেরও জড়িত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হই। এরপর লিজ নেয়া ৯ একর জমি নিয়ে মান্নান নামের একজনের সঙ্গে নিহত ফকিরের বিরোধের তথ্য পাই। পরবর্তী সময়ে মান্নানের কাছ থেকে হত্যার পরিকল্পনাকারী ফিরোজের তথ্য পাই।’
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ফকির আহমেদকে খুনের কথা স্বীকার করে ফিরোজ আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন বলে জানান তদন্তকারী কর্মকর্তা।
ফিরোজের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি থেকে পিবিআই জানতে পারে তার সঙ্গে নিহত ফকিরের লিজ নেয়া ৯ একর জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল। এ নিয়ে ফকিরের সঙ্গে কয়েকবার কথা-কাটাকাটিও হয়েছে ফিরোজের। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ফিরোজ, এখলাস ও মান্নান মিলে ফকিরকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।
তদন্তকারী কর্মকর্তা জানান, ছেলে হত্যার মামলাটি নিয়ে এজহার মিয়া পিবিআইয়ের দ্বারস্থ হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ায় আসামিরা ভয় পেয়ে যান। তাই এজহার মিয়াকেও খুন করেন তারা।