টাকা গোনার সময় বারবার কান্নায় চোখ ভিজে যাচ্ছিল রতনের। বিশ্বাস করতে পারেননি অল্প সময়ে আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন।
রংপুরের পীরগঞ্জে ভুক্তভোগী ২৬টি পরিবারের মধ্যে বুধবার সকালে ৩১ লাখ টাকা তুলে দিয়েছে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন।
স্থানীয় স্কুলমাঠে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি পরিবারকে ক্ষতির পরিমাণ যাচাই করে এ অর্থসহায়তা দেয়া হয়।
বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষ জানায়, যার যতটুকু ক্ষতি হয়েছে, তার চেয়ে বেশি দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। এমনকি ফার্নিচার পুড়ে গেছে এমন পরিবারকেও এক লাখ টাকা দেয়া হয়েছে।
বিভিন্ন সদস্যের দেয়া তথ্য বিবেচনা করে ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়। তিন দিন ঘটনাস্থলে থেকে নিজেদের বিবেচনায় প্রশাসনের সহায়তায় তারা সাহায্য করেছে।
কর্তৃপক্ষ আরও জানায়, এখনো অনেক টাকা উদ্বৃত্ত রয়েছে। যা তারা নিহতের পরিবার ও অন্য স্থানে ক্ষতিগ্রস্তদের দেবে।
বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের বোর্ড মেম্বার জামাল উদ্দিন বলেন, ‘সাম্প্রদায়িক হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর আর্থিক ক্ষতি হয়তো আমরা পুষিয়ে দিতে পারব। কিন্তু তাদের হৃদয়ে যে রক্তক্ষরণ হয়েছে, সেই ক্ষতি আমরা কোনো দিন পুষে দিতে পারব না।’
বিদ্যানন্দের হেড অফ কমিউনিকেশন সালমান খান ইয়াছিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আপনি একা নন, পুরো বাংলাদেশ আছে আপনার পাশে- এ বার্তাটিই আমরা পৌঁছে দিতে চেয়েছি। গত তিন দিন আমরা ঘরে ঘরে গিয়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ যাচাই করে ২৬ পরিবারকে ৩১ লাখ টাকা এবং রান্নার জন্য তৈজসপত্র ও কাপড় দিয়েছি।’
অর্থের জোগাড় কীভাবে হয়েছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সরকারি-বেসরকারি, দেশের ও প্রবাসী বাংলাদেশিরা মিলে পুরো টাকা দিয়েছে। বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন হামলার পরদিন থেকেই ক্রাউড ফান্ডিং করে। আগামী দুই দিন তাদের খাবারও দেয়া হবে।’
রংপুরের জেলা প্রশাসক আসিব আহসান বলেন, ‘সরকারের পাশাপাশি বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন যে বড় সহায়তা নিয়ে এগিয়ে এসেছে, তা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করবে। গ্রহীতা পরিবারগুলোর সঙ্গে কথা হয়েছে। এই টাকা কীভাবে খরচ করবে তার দিকনির্দেশনাও দেয়া হয়েছে।’
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন রংপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক গোলাম রব্বানী, পীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) বিরোদা রানী রায়, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বিদ্যানন্দের স্বেচ্ছাসেবকরা।
ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে রোববার (১৭ অক্টোবর) রাতে রংপুরের পীরগঞ্জে রামনাথপুর ইউনিয়নের উত্তরপাড়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্তত ২৩টি বাড়িঘরে হামলা চালানো হয়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৬০টি পরিবার।
এ ঘটনায় মঙ্গলবার সকালে দুটি মামলা করেন পীরগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ইসমাইল হোসেন। এর মধ্যে একটি মামলা হয়েছে হিন্দুদের বাড়িঘরে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটের ঘটনায়। এতে ৪১ জনের নামসহ অজ্ঞাতপরিচয় অনেককে আসামি করা হয়েছে।
আরেকটি মামলা একজনকে আসামি করে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে করা হয়েছে।
দুই মামলায় এখন পর্যন্ত ৫৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদের মধ্যে ৩৯ জনকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।