বিমানের টিকিট বিক্রির নামে প্রতারণা করে প্রায় ৫০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে অনলাইন এজেন্সি টোয়েন্টিফোর টিকিট ডটকমের বিরুদ্ধে দুটি মামলার পর গ্রেপ্তার হয়েছেন প্রতিষ্ঠানের দুই পরিচালক মিজানুর রহমান সোহেল এবং রাকিবুল হাসান।
সিআইডির রিমান্ড শেষে দুজনই এখন কারাগারে। তবে সোহেলের পরিবারের দাবি, তিনি কোনো অনিয়মে জড়িত নন, বরং কয়েক মাস আগে তিনি প্রতিষ্ঠানের বাকি চার পরিচালকের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের মামলা করেছিলেন।
পাঁচজনের মালিকানায় ২০১৯ সালের জুলাইয়ে অনলাইনে বিমানের টিকিট বিক্রির প্রতিষ্ঠান টোয়েন্টিফোর টিকিট লিমিটেডের যাত্রা শুরু হয়। ২০ ভাগ শেয়ার নিয়ে পাঁচজনের মধ্যে এক পরিচালক হিসেবে ছিলেন মিজানুর রহমান সোহেল।
সোহেলের স্ত্রী সুমাইয়া শিমু নিউজবাংলার কাছে দাবি করেন, গ্রাহকদের সঙ্গে কোম্পানিটির কোটি কোটি টাকা লেনদেন হলেও এর কোনো হিসাব পাচ্ছিলেন না তার স্বামী। এ বিষয়ে দফায় দফায় প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান, ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও ফাইন্যান্স ডিরেক্টরের কাছে তথ্য চেয়েও কাজ হয়নি।
এরপর গত ১০ মে মহাখালী নিউ ডিওএইচএসে টোয়েন্টিফোর টিকিট লিমিটেডের অফিসে যান সোহেল। এ সময় প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান নাসরিন সুলতানা, ম্যানেজিং ডিরেক্টর আব্দুর রাজ্জাক ও রাজ্জাকের বন্ধু ফাইন্যান্স ডিরেক্টর আসাদুল ইসলাম হিসাব না দিয়ে সোহেলকে উল্টো ভয়ভীতি দেখান।
এই প্রতিষ্ঠানে সিইও হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন পাঁচ পরিচালকের আরেকজন প্রদ্যোত বরণ চৌধুরী। তিনি গত বছরের ডিসেম্বরে পদত্যাগ করেন।
শিমু জানান, হিসাব চাইতে গিয়ে হুমকি পাওয়া সোহেল ১৯ মে কাফরুল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। এরপর গত ১ জুন ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে ১৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তিনি চার পরিচালকের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলাটির তদন্ত করছে পিবিআই।
চলতি বছরের এপ্রিল থেকে প্রতিষ্ঠানে আর্থিক সংকট শুরু হয়, বাড়তে থাকে গ্রাহকের দেনার পরিমাণ। এ অবস্থায় গত ৩ অক্টোবর টোয়েন্টিফোর টিকিট ডটকমের বিরুদ্ধে উত্তরা পশ্চিম থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন একজন গ্রাহক।
এ মামলায় ৫ সেপ্টেম্বর টোয়েন্টিফোর টিকিটের পরিচালক রাকিবুল হাসানকে চুয়াডাঙ্গা থেকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। মামলা তদন্ত করতে গিয়ে অর্থ পাচারের তথ্য পায় তারা। কাফরুল থানায় পরে অর্থ পাচারের অভিযোগে আরেকটি মামলা করে সিআইডি। এ মামলায় প্রতিষ্ঠানের মালিকদের একজন হিসেবে ১০ অক্টোবর গ্রেপ্তার করা হয় মিজানুর রহমান সোহেলকে।
সোহেলের স্ত্রী শিমুর অভিযোগ, তার স্বামী প্রতিষ্ঠানের অংশীদার ছিলেন কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে কোনো হিসাব পাচ্ছিলেন না। এমডি রাজ্জাক, তার বোন চেয়ারম্যান নাসরিন সুলতানা, রাজ্জাকের বন্ধু ফাইন্যান্স ডিরেক্টর আসাদুল ইসলামই প্রতিষ্ঠান পরিচালনা ও লেনদেন করেছেন। সোহেল এসব বিষয়ে কিছুই জানতেন না। যখন তিনি বুঝতে পারেন, গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণা হচ্ছে তখনই তিনি জিডি ও মামলা করেন।
সুমাইয়া শিমু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার স্বামী নির্দোষ। তার মালিকানা ছিল কিন্তু তাকে কোনো হিসাব না দিয়ে অন্ধকারে রাখা হয়েছিল। আমি নিজেই ভুক্তভোগী। যারা মূল প্রতারক তারা আত্মগোপনে রয়েছে, আর আমার স্বামী কারাগারে। আমি ন্যায়বিচার চাই।’
টোয়েন্টিফোর টিকিটের কাণ্ডে মিজানুর রহমান সোহেলের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে সুস্পষ্ট কিছু জানাতে পারেনি সিআইডি। অর্থপাচারের মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সাগর আলী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তিনি (সোহেল) কোম্পানির মালিকদের একজন। যে মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে সেটি তদন্তাধীন। তার সংশ্লিষ্টতা কতটা, সেটি এখনই বলা সম্ভব না, তদন্ত শেষ হলে বলা যাবে। মামলার তদন্ত এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে আছে।’
এদিকে মিজানুর রহমান সোহেলের করা মামলাটিও তদন্ত পর্যায়ে রয়েছে বলে জানান পিবিআই প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার। তিনি বলেন, ‘মামলার অভিযোগের বিষয়ে আমরা তথ্য সংগ্রহ করছি। তদন্ত শেষে বলা যাবে কী হয়েছে।’