বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

অস্তিত্বসংকটে বনমানুষ

  •    
  • ২০ অক্টোবর, ২০২১ ০৯:১৬

গবেষক দলের প্রধান অধ্যাপক হাবিবুন নাহার জানান, ১৯৮০ সালের একটি গবেষণার সূত্রে জানা গেছে, দেশে ৩ হাজার উল্লুক ছিল। এখন আছে ৪৬৮টি। উন্নয়ন কর্মকাণ্ড, মানুষের আগ্রাসনসহ নানা কারণে গত দুই দশকে উল্লুক প্রায় ৯০ শতাংশ কমে গেছে।

বিশ্বে বিপন্ন এবং বাংলাদেশে মহাবিপন্ন উল্লুক। এলাকাভেদে এটিকে বনমানুষও ডাকা হয়। বাংলাদেশের সিলেট ও চট্টগ্রামে এদের বসবাস।

চলতি মাসের ৬ তারিখে ডাইভারসিটি জার্নালে প্রকাশিত বাংলাদেশের উল্লুকবিষয়ক একটি গবেষণায় বলা হয়েছে সারা দেশে ১৩৫টি গ্রুপে প্রায় ৪৬৮টি উল্লুক আছে। সবচেয়ে বেশি উল্লুক আছে মৌলভীবাজারের রাজকান্দি সংরক্ষিত বনে।

বন বিভাগের অনুমতি ও সহায়তায় আমেরিকার ইউএস ফিশ অ্যান্ড ওয়াইল্ডলাইফ সার্ভিসের অর্থায়নে এই গবেষণা হয়েছে। গবেষকরা দেশের মোট ২২টি বনে এই গবেষণা করেছেন।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. হাবিবুন নাহারের নেতৃত্বে হওয়া এই গবেষণায় জানা গেছে, গত দুই দশকে দেশে উল্লুক কমেছে ৯০ শতাংশ।

আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘের (আইউসিএন) তালিকায় বিপন্ন প্রাণী হিসেবে লাল তালিকায় আছে উল্লুক। এর ইংরেজি নাম Western Hoolock Gibbon ও বৈজ্ঞানিক নাম Hoolock hoolock।

গবেষণা সূত্রে জানা গেছে, সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজারের রাজকান্দি সংরক্ষিত বনে প্রায় ১২২টি, পাথারিয়া সংরক্ষিত বনে প্রায় ৯১টি, লাউয়াছড়ায় ৪০টি, সাগরনাল বনে ২টি, হবিগঞ্জের রেমা-কালেঙ্গা বন্য প্রাণী অভয়ারণ্যে ৫টি এবং সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে ৯টি উল্লুক পাওয়া গেছে।

বাংলাদেশে উল্লুকের সংখ্যা নির্ণয়, উল্লুকের বসবাসযোগ্য বনের অবস্থা ও সম্ভাব্য বনের তথ্য জানার উদ্দেশ্যে এই গবেষণা করা হয় ২০১৯ সালের মার্চ থেকে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।

অধ্যাপক ড. হাবিবুন নাহার ও সংযুক্ত আরব আমিরাত বিশ্ববিদ্যালয়ের (UAEU) জীববিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. সাবির বিন মুজাফফারের নেতৃত্বে এই গবেষণায় অংশ নেন বাংলাদেশের বন্য প্রাণী গবেষক হাসান আল রাজী চয়ন, তানভীর আহমেদ, সাবিত হাসান এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত বিশ্ববিদ্যালয়ের আরিজ জারাদাত।

গবেষক দলের সাবিত হাসান জানান, বাংলাদেশের সিলেট, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকার বন ছাড়াও ভারত (উত্তর-পূর্বাংশ), মিয়ানমার (পশ্চিমাংশ) এবং চীনে (দক্ষিণাংশে) উল্লুক দেখা যায়। নির্বিচারে বন ধ্বংসের কারণে উল্লুকের বাসস্থান, খাদ্যসংকট ও শিকার এদের সংখ্যা হ্রাসের প্রধান কারণ।

সাবিত আরও জানান, উল্লুকের খাবারের তালিকার বড় জায়গাজুড়ে রয়েছে ফল। তারা গাছের কচি পাতা, ফুল ও পোকামাকড় খেয়ে থাকে। গাছের ডালে ঝুলে ঝুলে চলতে পছন্দ করে। যেহেতু তাদের খাবারের বড় জায়গাজুড়েই রয়েছে নানান প্রজাতির ফল, সেহেতু তারা মনকালচার বা সমজাতীয় গাছের বনে থাকতে পারে না।

নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের অনেক প্রাকৃতিক বন কেটে একসময় সেগুন বাগান করা হয়েছে, যেসব বন থেকে উল্লুক হারিয়ে গিয়েছে। সরকারের উচিত এসব বনকে আবারও প্রাকৃতিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ নেয়া এবং যেসব জায়গায় এখনও উল্লুক টিকে আছে, সেসব জায়গাকে টিকিয়ে রাখা ও তদারকি করা।

‘এতে করে উল্লুকের সংখ্যা যেমন সারা দেশে বাড়বে, অন্য অনেক বন্য প্রাণীও সংরক্ষণের আওতায় আসবে।’

গবেষক দলের আরেক সদস্য বানর গবেষক তানভীর আহমেদ বলেন, ‘যেসব বনে উল্লুক আছে তার বেশির ভাগেই চশমাপরা হনুমান ও লজ্জাবতী বানরসহ নানা বিপন্ন প্রাণীর বসবাস রয়েছে। আমাদের গবেষণা উল্লুক বসবাসকারী বনগুলোকে চিহ্নিত করেছে। সেসব বনে কী পরিমাণ উল্লুক টিকে থাকতে পারে সেটারও একটা স্পষ্ট ধারণা দিয়েছে।

‘এখন ওই বনগুলোতে উল্লুক সংরক্ষণে সঠিক উদ্যোগ নেয়া হলে তা অন্য প্রাণীদের জন্যও আশীর্বাদ হবে। সে বিচারে সিলেট বিভাগের পাথারিয়া ও রাজকান্দি বনকে উল্লুক অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া জরুরি।’

এই গবেষণা প্রকল্পের ম্যানেজার ও গবেষক হাসান আল রাজি জানান, কিছু বনে উল্লুকের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে ভালো থাকা আপাতদৃষ্টিতে ভালো মনে হলেও তা আসলে খুব বেশি খুশির খবর না। উল্লুক পাওয়া যায় এমন সব বনই আসলে ছোট ছোট দ্বীপের মতো, একটি অন্যটি থেকে বিচ্ছিন্ন। এতে করে এক বনের উল্লুকের সঙ্গে অন্য বনের উল্লুকের কোনো রকম যোগাযোগ হয় না।

এ কারণে জিনগতভাবেও এক বনের উল্লুকেরা অন্যদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। জিন প্রবাহ না থাকায় টিকে থাকা উল্লুকদের মাঝে জিনগত বৈচিত্র্যতা কমে যাচ্ছে। এটি উল্লুকদের জন্য একসময় বড় ধরনের হুমকি হতে পারে।

হাসান জানান, জিনগত বৈচিত্র্যতা কম হলে যেকোনো ধরনের দুর্যোগে, যেমন রোগবালাই বা আবহাওয়ার পরিবর্তন হলে, সব প্রাণীর একসঙ্গে বিলুপ্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

তিনি বলেন, ‘এসব কারণে উল্লুকের জিনগত গবেষণা এখন সব থেকে জরুরি। সেই সঙ্গে আমাদের ভেবে দেখতে হবে কীভাবে এই বিচ্ছিন্ন উল্লুকের পপুলেশনের মাঝে একটা যোগাযোগ তৈরি করা যায়।’

গবেষক দলের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক হাবিবুন নাহার জানান, ১৯৮০ সালের একটি গবেষণার সূত্রে জানা গেছে, দেশে ৩ হাজার উল্লুক ছিল। এখন আছে ৪৬৮টি। একসময় সিলেট বিভাগের হাজারিখিলসহ কয়েকটি বনে উল্লুক থাকলেও এখন নেই। সবচেয়ে বেশি উল্লুক পাওয়া গেছে মৌলভীবাজারের রাজকান্দি এবং পাথারিয়া রিজার্ভ ফরেস্টে।

তিনি বলেন, ‘উন্নয়ন কর্মকাণ্ড, মানুষের আগ্রাসনসহ নানা কারণে উল্লুকগুলো হয় অন্যত্র চলে গেছে, নয়তো ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়েছে। তবে নিশ্চিত করে সেটা বলা কঠিন। নিশ্চিত করতে হলে আরেকটি দীর্ঘমেয়াদি গবেষণা প্রয়োজন। সবচেয়ে জরুরি এদের সংরক্ষণ, কারণ গত দুই দশকে এর সংখ্যা প্রায় ৯০ শতাংশ কমে গেছে।’

এই গবেষণা প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘মৌলভীবাজারের পাথারিয়া ও রাজকান্দিতে এত উল্লুক পাওয়া ভালো খবর। উল্লুক অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করা প্রয়োজন। আমার অফিস থেকে এর জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ নিয়ে আলাপ করা হবে।

‘আমরা উল্লুকের বিষয়ে সচেতন। কিছু দিন আগে লাউয়াছড়ায় উল্লুক চলাচলের জন্য বিশেষ ধরনের সেতু তৈরি করা হয়েছে। তাই উল্লুক রক্ষায় কাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।’

এ বিভাগের আরো খবর