পটুয়াখালীতে ‘জোর করে তুলে নিয়ে’ বিয়ে করার ঘটনায় পাত্রী ইশরাত জাহান পাখির বিরুদ্ধে বেপরোয়া আচরণের অভিযোগ তুলেছেন ভুক্তভোগী নাজমুল আকন। তার অভিযোগ, মেয়েটি এখন তার বাসায় গিয়ে অবস্থান করছেন। এ কারণে তার বাবা-মা বাসায় থাকতে পারছেন না।
স্ত্রীর ‘স্বীকৃতির দাবিতে’ তিন দিন ধরে পাত্রের বাড়িতে অবস্থান করছেন পাখি। কিন্তু নাজমুল এতে কোনোভাবেই রাজি নন। তিনিও বাবা-মায়ের মতোই বাসায় থাকছেন না।
এ ঘটনায় অপহরণ ও জোর করে বিয়ে করার অভিযোগে নাজমুলের করা মামলাটির তদন্ত করছে সদর থানার পুলিশ।
তবে মেয়েটির দাবি, তিনি তুলে নিয়ে বিয়ে করেননি। বিয়ে হয়েছে দুজনের সম্মতিতে। ঝামেলা হয়েছে দেনমোহরের টাকা নিয়ে। এখন নাজমুল উল্টো কথা বলছেন।
নাজমুল পটুয়াখালী সরকারি কলেজের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী। আর ইশরাত জাহান পাখি একই উপজেলার গাজীপুর গ্রামের বাসিন্দা।
নাজমুল যা বলছেন
এই তরুণ জানান, কয়েক মাস ধরে তাকে মেসেঞ্জারে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন পাখি। কিন্তু রাজি হননি তিনি। একপর্যায়ে তাকে বিয়ের প্রস্তাবও দেয়া হয়। তাতেও রাজি ছিলেন না নাজমুল।
একপর্যায়ে গত ২৭ সেপ্টেম্বর সাত থেকে আটজন পুরুষ শহরের লঞ্চঘাট এলাকা থেকে নাজমুলকে তুলে নিয়ে যান। অজ্ঞাত এক স্থানে নিয়ে জোর করে কাবিননামায় সই রেখে দেন।
নাজমুল বলেন, ‘আমাকে জোর করে মিষ্টি খাওয়ানোর চেষ্টা করা হয়। পরে সেখান থেকে ছেড়ে দেয়া হয়। কিছুদিন পরে মিষ্টি খাওয়ানো আর সই নেয়ার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছেড়ে দেয়া হয়। এতে আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়ি। একপর্যায়ে আইনের আশ্রয় গ্রহণ করি।’
গত ৩ অক্টোবর পটুয়াখালীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে পাখির বিরুদ্ধে অপহরণ ও জোর করে সই রাখার অভিযোগ এনে মামলা করেন এই তরুণ। মামলায় ইশরাতসহ আরও ৬ থেকে ৭ জনকে আসামি করা হয়।
নাজমুল বলেন, ‘বর্তমানে আমি পালিয়ে বেড়াচ্ছি। বাড়িতেও যেতে পারছি না। ইশরাত গত কয়েক দিন ধরে আমার বাড়িতে অবস্থান করে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করায় আমার মা-বাবাও সেখানে থাকতে পারছেন না।
‘সামাজিকভাবে আমি হেয় হচ্ছি। সামনে আমার পরীক্ষা, ঠিকভাবে পড়াশোনাও করতে পারছি না। ক্রমশই আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়ছি।’
পাখির দাবি অভিযোগ মিথ্যা
নাজমুল যে অভিযোগ করেছেন, তা পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন পাখি। তার দাবি, নাজমুলের সঙ্গে তার দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্ক। তার ইচ্ছাতেই বিয়ে হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘যতটুকু ঝামেলা হয়েছে তা শুধু কাবিননামার টাকা নিয়ে। আমিসহ আমার বড় ভাইদের দাবি ছিল কাবিন ৫ লাখ টাকা হবে। আর নাজমুল চেয়েছে, কাবিন ৫০ হাজার টাকা হবে। এ বিষয়টি নিয়ে সামান্য একটি ঝামেলা হয়েছে, যেটা ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা গেছে।’
ইশরাত বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যে মামলা করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। কারণ গত ২৭ তারিখ আমাদের বিয়ে হয়েছে ঢাকাতে বসে। আর ২৭ তারিখ আমি নাকি ওকে (নাজমুল) পটুয়াখালী শহর থেকে অপহরণ করেছি। এক দিনে আমি দুই জায়গায় থাকি কীভাবে?’
নাজমুলের বাসায় থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তিন দিন ধরে আমি আমার স্বামীর বাড়ি (পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার গাজীপুর গ্রামে) বাড়িতে অবস্থান করছি। আমিই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’
কেন নিরাপত্তাহীনতা- এই প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমাকে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। বিয়ের পর জানতে পারি নাজমুলের সঙ্গে একাধিক মেয়ের সম্পর্ক রয়েছে। সে আমার জীবনটাকে তছনছ করে ফেলেছে।’
নাজমুল অবশ্য পাখির সব বক্তব্য অস্বীকার করে তার আগের অভিযোগেই অটল থাকেন। তিনি আশা করছেন, পুলিশের প্রতিবেদন ও আদালতের মাধ্যমে পুরো বিষয়টি স্পষ্ট হবে।
আইনজীবী যা বলছেন
নাজমুলের আইনজীবী আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘আশা করি পুলিশের তদন্ত রিপোর্টের পর আমরা সঠিক ও ন্যায়বিচার পাব।’
তিনি বলেন, ‘নাজমুল আর ইশরাতের মধ্যে যদি প্রেমের সম্পর্ক থেকেই থাকে, তবে সেটা পারিবারিকভাবে সমাধান করা উচিত ছিল। এভাবে ভিডিও করে সেটা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছেড়ে দিয়ে তাদের উভয়ের ভবিষ্যতের জন্য হুমকি বয়ে এনেছে।’
পটুয়াখালী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান জানান, মামলা গ্রহণ করে একজন কর্মকর্তাকে তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। গত দুই দিন ধরে তিনি তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছেন। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা কবে।