পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে এক হিন্দু বাড়িতে আগুনের ঘটনা ভাইরাল হয়েছে ফেসবুকে। আগুনের ছবি ও ভিডিও শেয়ার করে বেশ কিছু আইডি থেকে দাবি করা হয়, ধর্মীয় সহিংসতার অংশ হিসেবে আগুন দেয়া হয়েছে ওই বাড়িতে।
তবে বাড়ির মালিক অনুকূল চন্দ্র রায় বলছেন, ঘরের ভেতরে স্থাপিত কলা পাকানোর চুল্লি থেকে আগুন লেগেছে। একই তথ্য জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রত্যয় হাসান।
অন্যদিকে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে প্রাণ হারানো যতন সাহার ওপর হামলার দৃশ্য হিসেবে ছড়ানো হচ্ছে একটি পুরোনো ভিডিও। রাজধানীর বুকে গত মে মাসে একটি হত্যাকাণ্ডের সময় সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরা পড়ে ঘটনাটি।
দেবীগঞ্জ উপজেলার দেবীডুবা ইউনিয়নের দারারহাট অধিকারী পাড়া গ্রামের কলা ব্যবসায়ী অনুকূল চন্দ্র রায়ের বাড়িতে মঙ্গলবার ভোররাত ৪টার দিকে আগুন লাগে। স্থানীয়দের সহায়তায় এক ঘণ্টার চেষ্টায় তা নিয়ন্ত্রণে আনে ফায়ার সার্ভিস।
ব্যবসায়ী অনুকূল নিউজবাংলাকে জানান, স্থানীয় হাট থেকে কাঁচা কলা কিনে চুল্লিতে পাকিয়ে বাজারে বিক্রি করেন তিনি। দুর্গাপূজা উপলক্ষে সোমবার তিনি ছাড়া বাড়ির সবাই আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন। রাত ৯টার দিকে তিনি ঘরের ভেতরে স্থাপিত চুল্লিতে আগুন দিয়ে তার ওপর কলা রেখে পাশের ঘরে ঘুমিয়ে পড়েন।
ভোররাতে হঠাৎ ঘুম ভাঙার পর দেখতে পান চুল্লির আগুন পুরো ঘরে ছড়িয়ে পড়েছে। বিষয়টি স্থানীয় থানায় লিখিতভাবেও জানিয়েছেন অনুকূল।
দেবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জামাল হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আগুন কীভাবে লেগেছে, তা উল্লেখ করে অনুকূল চন্দ্র পুলিশের কাছে বিবৃতি দিয়েছেন। বিষয়টিকে নাশকতা হিসেবে প্রচারের জন্য একটি মহল তৎপরতা চালাচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
দেবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রত্যয় হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দেশের সাম্প্রতিক কিছু ঘটনায় একটি মহল দাঙ্গা সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছে। দেবীগঞ্জের ঘটনাটিকেও ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা প্রচার চালানো হচ্ছে। আমরা সমন্বিতভাবে তা প্রতিহত করছি।’
ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুই মাসের খাদ্য ও ঘর নির্মাণের জন্য ছয় বান্ডিল ঢেউটিন দেয়া হয়েছে বলেও জানান ইউএনও।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মজিবর রহমান বলেন, ‘অনুকূলকে গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে ৫০ হাজার টাকা এবং চার বান্ডিল ঢেউটিন দেয়া হয়েছে।’
দেবীগঞ্জ উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি শ্যামল দত্ত নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের এলাকায় হিন্দু-মুসলিমদের মধ্যে দারুণ সম্পর্ক। অপপ্রচার চালিয়ে একটি মহল সেই সম্প্রীতি নষ্ট করার চেষ্টা চালাচ্ছে। আমরা সে বিষয়ে সজাগ আছি।’
কুমিল্লায় যতন সাহার মৃত্যু নিয়ে ভুয়া ভিডিও
কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে সহিংসতার পর নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায় বৃহস্পতিবার এবং শুক্রবার বেশ কয়েকটি মণ্ডপে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এ সময় প্রাণ হারান প্রান্ত চন্দ্র দাশ নামে এক যুবক, আতঙ্কে হৃদরোগে যতন সাহা নামে আরেকজনের মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ।
তবে যতনের পরিবারের অভিযোগ, তিনিও হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন। যতনের ওপর হামলার দৃশ্য দাবি করে একটি পুরোনো ভিডিও ছড়িয়েছে ফেসবুকে।
‘সত্যের সন্ধানে’ নামের একটি ফেসবুক পেজে মঙ্গলবার ওই ভিডিও পোস্ট করে দাবি করা হয়, যতনকে দুর্বৃত্তরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে।
ভিডিওতে দেখা যায়, মাটিতে লুটিয়ে পড়া নীল জামা পরা এক ব্যক্তির শরীরে দুজন যুবক ধারালো কিছু দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করছেন।
তবে এই ফুটেজটি অন্য আরেকটি ঘটনার বলে নিশ্চিত হয়েছে নিউজবাংলা। রাজধানীর পল্লবীর ডি-ব্লকের ৩১ নম্বর রোডে গত ১৬ মে বিকেলে কুপিয়ে হত্যা করা হয় সাহিনুদ্দিন নামে একজনকে। তার বাসা পল্লবীর বুড়িরটেক। সাহিনুদ্দিনকে হত্যার দৃশ্য পাশের একটি সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরা পড়ে।
আর সেই ফুটেজটিকেই যতন সাহার ওপর হামলার ভিডিও হিসেবে ছড়িয়ে দেয়া হয় ‘সত্যের সন্ধানে’ নামের ফেসবুক পেজ থেকে।
ওই পেজ থেকে ভিডিওটি মঙ্গলবার সকাল ৮টা ৩৪ মিনিটে পোস্ট করা হয়, যেখানে আপলোডের ঠিকানা রয়েছে ভারতের নালবাড়ি। তবে মঙ্গলবার দুপুরের দিকে ভিডিওটি সরিয়ে নেয়া হয়।