আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের ফোন নম্বর স্পুফকারী ও তার এক সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবির সাইবার ইনভেস্টিগেশন বিভাগ।
ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার আজীমনগর ইউনিয়ন থেকে সোমবার দিবাগত রাত ১ টার দিকে স্পুফকারী ফিরোজ খন্দকার ও তার সহযোগী মো. রাকিবুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সাইবার ইনভেস্টিগেশন বিভাগের ইন্টারনেট রেফারেল টিমের প্রধান সহকারী কমিশনার কমিশনার ধ্রুব জ্যোতির্ময় গোপ নিউজবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
সাইবার পুলিশ জানায়, ফিরোজ খন্দকার গ্রেপ্তারের আগে হাতিয়ে নিয়েছেন লক্ষাধিক টাকা। তিনি ঢাকার খিলখাঁও থেকে কেরাণীগঞ্জের মধ্যে বিভিন্ন বুথ থেকে এ প্রতারণা করে টাকা তোলেন। সন্দেহ এড়াতে এ প্রতারণা টাকা উত্তোলনের সময় মোটর সাইকেলে চড়ে বিভিন্ন বুথ থেকে অল্প অল্প করে টাকা তুলতেন তিনি।
অভিযোগ পেয়ে ফিরোজ খন্দকার যেসব বুথ থেকে টাকা তুলতেন সেসব বুথের ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে পুলিশের সিটি সাইবার ইন্টারনেট রেফারেল টিম। প্রযুক্তির সহায়তায় নানান তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে তাকে ও তার সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তাদের শেখ ফজলে শামস পরশের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এ ছাড়া, তাদের বিরুদ্ধে আরও তিনটি প্রতারণার মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
গোয়েন্দারা জানান, যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের ফোন নম্বর স্পুফ করে সংগঠনের বিভিন্ন জেলার নেতাকর্মীদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিলেন ফিরোজ। এ কাজে তিনি প্রথমে ইন্টারনেট থেকে যুবলীগের বিভিন্ন কমিটির গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের ফোন নম্বর সংগ্রহ করতেন। ফোন নম্বরে ডায়ালার অ্যাপের মাধ্যমে নম্বর স্পুফ করে ফোন করতেন।
সিটি সাইবারের ইন্টারনেট রেফারেল টিম তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে এবং বুথের ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে ফিরোজকে শনাক্ত করে।
ফিরোজকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানায়, ফিরোজ সরাসরি টাকা চাইতেন না। বিভিন্ন কর্মসূচির কথা বলে নিজেকে পরশ হিসেবে পরিচয়ে দিয়ে বিকাশ-রকেট নম্বরে টাকা চাইতেন। সংগঠনের চেয়ারম্যানের ফোন নম্বর পেয়ে নেতারা উৎফুল্ল মনে বিকাশে টাকা পাঠাতেন। আর রাজধানীর বুথগুলো থেকে এ টাকা তুলতেন তিনি।
এসব ঘটনা এক সময় যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ জানতে পারেন। তিনি বাধ্য হয়ে তার ফোন নম্বরটি বন্ধ করে দেন। বুঝতে পারেন তার নম্বরটি ক্লোন করে অর্থ আত্মসাৎ করছে একটি চক্র। নিজের ভেরিয়েইড ফেসবুক পেজে এ সংক্রান্ত একটি সতর্কর্তামূলক পোস্টও দেন তিনি।
এসব ঘটনায় যুবলীগ চেয়ারম্যানের হয়ে গত ১৫ অক্টোবর রাজধানীর বনানী থানায় মামলা করেন ব্যারিস্টার রানা তাজউদ্দিন খান। এতে মোবাইল ফোন নম্বর ক্লোনিং করে টাকা দাবির অপরাধের কথা উল্লেখ করা হয়। মামলার পরপরই সাইবার সিটি তদন্ত নামে। তদন্তের একপর্যায়ে ফিরোজ খন্দকারকে শনাক্ত করা হয়।
সূত্র জানায়, পরশের নাম করে তার ব্যবহৃত রবি নম্বরটি ক্লোন করে গত ৯ অক্টোবর প্রথম ফোন করা হয় গাইবান্ধা যুবলীগের সভাপতি সরদার মো. শাহীন হাসান লোটনের গ্রামীণ ফোনের নম্বরে। সংগঠনের জন্য চাঁদা হিসেবে তাকে একটি রকেট নম্বরে টাকা পাঠাতে বলা হয়। একই দিন নেত্রকোণা যুবলীগের আহ্বায়ক জনি ও সুনামগঞ্জ জেলা যুবলীগের চপলকে ফোন করে বিকাশ নম্বরে টাকা পাঠাতে বলা হয়।
১০ অক্টোবর মুশফিকুল ইউনুস জায়গীরদার নামে এক ব্যক্তি এবং পাবনা জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক সনি বিশ্বাসকে ফোন করে বিকাশে টাকা চাওয়া হয়। এছাড়াও গত কয়েকদিনে একই পরিচয়ে দেশের কয়েকজন গণ্যমান্য ব্যক্তিদের ফোন করে টাকা দাবি করে প্রতারক চক্রটি।
সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে নিজের মোবাইল ফোনটি বন্ধ রেখেছেন পরশ। তবে শনিবার (১৬ অক্টোবর) রাতে নিজের ভেরিফায়েড পেজ থেকে বিষয়টি খোলাসা করেন তিনি। শেখ পরশ বলেন, ‘সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি। যুবলীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীসহ সকলকে এই মর্মে সতর্ক করা যাচ্ছে যে, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের সম্মানিত চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের মোবাইল নম্বর ক্লোন করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিকে ফোন করে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টাসহ নানা বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছে একটি প্রতারক চক্র। অনুগ্রহপূর্বক কেউ প্রতারক চক্রের ফাঁদে পা দেবেন না।’