দেশজুড়ে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা রোধে এবং এর সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের সঙ্গে বৈঠক করেছেন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় নির্বাচনি জোট।
সচিবালয়ে মঙ্গলবার দুপুরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে আসেন ১৪ দলের প্রতিনিধিরা। প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ।
বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘সহিংসতার ঘটনা পূর্ব পরিকল্পিত। এ বিষয়ে আমরাও একমত। তবে এখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো শিথিলতা ছিল কি না, থাকলে ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছি।’
বর্ষীয়ান এই রাজনীতিক বলেন, ‘সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনায় আগে যে মামলাগুলো ছিল সেগুলোর অনেকগুলোরই চার্জশিট জমা হয়নি। আমরা অনুরোধ জানিয়েছি যাতে দ্রুত চার্জশিট দেয়া হয়।’
এদিন সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর অংশ হিসেবে রাজধানীতে শান্তি ও সম্প্রীতির শোভাযাত্রা করে আওয়ামী লীগ। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শোভাযাত্রা শুরু হয়ে শহীদ মিনারে যায়। সেখানে সমাবেশের মাধ্যমে এই আয়োজন শেষ হয়।
যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ বলেন, ‘দেশের সব জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। দেশের ভালোর জন্য সবার ভূমিকা রাখার প্রয়োজন আছে। আমাদের এমন একটা বিরোধী দল, যারা সারাক্ষণ যড়যন্ত্র আর কুচক্র করে যাচ্ছে সম্প্রীতি নষ্ট করার জন্য। এর বিরুদ্ধে সব পেশাজীবী থেকে শুরু করে আপামর জনগণের সজাগ ও সচেতন থাকতে হবে। সবাইকে বুঝতে হবে এটা একটি সিস্টেমেটিক যড়যন্ত্র। এদের আইনের আওতায় এনে ব্যবস্থা নিতে হবে।’
দুর্গাপূজা চলাকালীন ও বিসর্জন শেষে কুমিল্লাসহ দেশের কয়েকটি জায়গায় হিন্দুদের পূজামণ্ডপ, মন্দির ও বাড়িঘরে হামলা চালানো হয়।
গত বুধবার কুমিল্লা নগরীর নানুয়ার দিঘির উত্তর পাড়ের অস্থায়ী পূজামণ্ডপে কোরআন শরিফ পাওয়ার অভিযোগ তোলার পর ওই দিন সকাল থেকে শহরে ছড়িয়ে পড়ে উত্তেজনা।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মোতায়েন করা হয় পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির বিপুলসংখ্যক সদস্য। তবে আলোচিত মণ্ডপের পূজার আয়োজকরা বলছেন, সেখানে পবিত্র কোরআন শরিফ কী করে এলো, সে বিষয়ে তাদের কোনো ধারণা নেই।
কুমিল্লার ঘটনার জের ধরে নোয়াখালীর চৌমুহনী, চাঁদপুরের হাজীগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় মণ্ডপ, মন্দির ও হিন্দু সম্প্রদায়ের ঘরবাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
এর মধ্যে ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে রোববার রাতে রংপুরের পীরগঞ্জে রামনাথপুর ইউনিয়নের বাটের হাটে হিন্দু সম্প্রদায়ের বেশ কয়েকটি বাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়। হামলাকারীরা অন্তত ২৩টি বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ ক্ষতিগ্রস্তদের।
পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স জানিয়েছে, এসব ঘটনায় সোমবার পর্যন্ত ৭১টি মামলা হয়েছে। এতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৪৫০ জনকে। আরও কিছু মামলা প্রক্রিয়াধীন।