নাব্যসংকটে পানির প্রবাহ কম থাকলেও গাইবান্ধায় ঘাঘট নদীতে দেখা দিয়েছে ব্যাপক ভাঙন। এক মাসের ব্যবধানে নদীর কাছাকাছি এলাকার শতাধিক পরিবার তাদের ঘরবাড়ি অন্য স্থানে সরিয়ে নিয়েছে।
হুমকির মুখে রয়েছে নদীপাড়ের ২৬ কিলোমিটারের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধসহ বহু সরকারি স্থাপনা, স্কুল, কলেজ, মসজিদসহ একটি গুচ্ছগ্রাম। এ ছাড়া গত এক বছরে এখানকার হাজারো পরিবারের শ শ হেক্টর আবাদি জমি, ঘরবাড়ি ও চলাচলের রাস্তা নদীতে বিলীন হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন দিয়ে বয়ে চলেছে ঘাঘট নদী। নদীর অপর অংশে রয়েছে রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলা। তবে বেশির ভাগটাই গাইবান্ধায়।
তবে মিঠাপুকুর অংশে নদীশাসন, জিও ব্যাগ, ব্লক নির্মাণসহ নানা পদক্ষেপ নেয়া হলেও গাইবান্ধা অংশে কোনো কাজই করা হয়নি। এতে বন্যার সময় পানির চাপে গাইবান্ধা অংশে ক্রমাগত ভাঙন দেখা দিচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, সাদুল্লাপুর উপজেলার নলডাঙ্গা ইউনিয়নের শ্রীরামপুরের ছান্নার ঘাট থেকে নাটির ছাড়া, রসূলপুর ইউনিয়নের কাটা নদী মুখ হয়ে দামোদরপুর ইউনিয়নের ভাঙ্গামোড় এলাকার কুটিরপাড়া পর্যন্ত নদীর পাড়ে গত এক মাস ধরেই ভাঙন অব্যাহত রয়েছে।
এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২০টিরও বেশি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ। নদীতে বিলীন হয়েছে শ শ হেক্টর আবাদি জমি, ঘরবাড়ি, গাছপালা ও চলাচলের রাস্তা।
তারা আরও জানান, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের সর্বানন্দ থেকে সাদুল্লাপুর উপজেলার টুনির চর পর্যন্ত দীর্ঘ ৩০ কিলোমিটার ঘাঘটপাড়ে রয়েছে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ। এ বাঁধে থাকেন ভাঙনে নিঃস্ব ১০ হাজারের বেশি মানুষ। প্রতিবছর বন্যা আর নদীভাঙনে নিঃস্ব হওয়া মানুষের সংখ্যা আরও বাড়ছে।
ঘাঘটের বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের কয়েকটি পয়েন্ট এরই মধ্যে নদীতে বিলীন হয়েছে। এ ছাড়া বাঁধসংলগ্ন সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সহাবাজ, দক্ষিণ সাহাবাজ, মাস্টারপাড়া ও আকন্দপাড়া গ্রামগুলো রয়েছে ভাঙন আতঙ্কে।
সাদুল্লাপুর উপজেলার রসূলপুর ইউনিয়নের প্রামানিকপাড়া, রহমতপুর, চাঁন্দেরবাজার ও মহিষবান্দি গ্রামসহ দামোদরপুর ইউনিয়নের ভাঙ্গামোড়, কুটিপাড়া, ভাঙ্গারদহ ও জামুডাঙ্গা গ্রামের হাজারো পরিবারের দিনও কাটছে আতঙ্কে।
নদীভাঙনের স্থায়ী ব্যবস্থার দাবি জানিয়ে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নেয়া দুলা মোল্লা বলেন, ‘এই বাঁধ দিয়ে সাদুল্লাপুর ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হাজার হাজার মানুষ চলাচল করে। মালামাল পরিবহন করে। বাঁধ ভাঙতি ভাঙতি প্রায় শেষ, কিন্তু সংস্কার নাই। আমরা তো অসহায় হয়ে পড়েছি।’
এ বাঁধেই গত ১০ বছর ধরে বসবাস করে আসছেন আনজুয়ারা বেগম। তিনি বলেন, ‘নদীটে অনেক দূরে আছিল। এখন অনেক কাছে আসচে। অনেক ঘরবাড়ি চলি গেছে। অনেক বাচ্চা-কোচ্চা পানিত পড়ি মরিও গেছি।’
শ্রীরামপুর গ্রামের আজিজার রহমান মাস্টার বলেন, ‘কমপক্ষে ৪০ বছর আগে রাস্তাটা (বাঁধ) হচে। এটি একটা ঘাট আছিল; সেটা ভাঙতি ভাঙতি ওপারে চলি গেছে। বন্যার টাইমে এক গালা পানি হয়। গত ৫০ বছরে এই এলাকায় ভাঙন রোধে একটা কাজও হয় নাই।’
নলডাঙ্গা ইউনিয়ন যুবলীগের ২ নম্বর ওয়ার্ড সভাপতি রহিম বাদশা বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমরা বিষয়টি স্থানীয় এমপিকে জানিয়েছি। আশা করি, তিনি ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেবেন।’
গাইবান্ধা জেলা তাঁতী লীগের আহ্বায়ক এসএম আহসান হাবীব স্বাধীন বলেন, ‘প্রতিবছরই নদী ভেঙে ভেঙে এদিকে চলে আসছে। পূর্বে নদীটি সোজা ছিল; কিন্তু ইদানীং নদী ঘন ঘন বাঁক নিয়েছে। এ জন্য ভাঙন আরও বেড়েছে।’
গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শনসহ ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চাহিদা পাঠানো হবে।’