বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বিনা-১৭ ধানে কৃষকের হাসি

  •    
  • ১৯ অক্টোবর, ২০২১ ০৯:১০

কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিনা-১৭ ধানের প্রতি বিঘায় প্রায় ২৬ থেকে ২৭ মণ ফলন হয়ে থাকে। অন্যান্য জাতের ধানের তুলনায় বিঘাপ্রতি উৎপাদন খরচ দুই থেকে তিন হাজার টাকা কম হয়।

কম সময়ে, কম খরচে উৎপাদন বেশি হওয়ায় বিনা-১৭ ধান চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন নওগাঁর কৃষকরা। তারা বলছেন, সার-পানি সাশ্রয়ী, আলোক সংবেদনশীল ও খরাসহিষ্ণু এই ধান। অন্য জাতের ধানের চেয়ে এক মাস আগেই বিনা-১৭ কাটার উপযোগী হয়।

এ জাতের ধানের আবাদে কৃষককে উদ্বুদ্ধ ও সহায়তা করে যাচ্ছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) উপকেন্দ্র ও নওগাঁর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

জেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, নওগাঁয় চলতি মৌসুমে ১ লাখ ৯৭ হাজার ১১০ হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে বিনা-১৭ জাতের ধান ১ হাজার ৩০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে।

এই ধান রাণীনগরে ৫২০ হেক্টর, ধামইরহাটে ১২৫ হেক্টর, নিয়ামতপুরে ৫ হেক্টর ও মান্দা উপজেলায় ২০ হেক্টরসহ অন্যান্য উপজেলায় আংশিক আবাদ হয়েছে।

বিনা-১৭ জাতের ধানে পানি কম লাগার কারণে একে গ্রিন সুপার রাইস নামেও অভিহিত করেছেন অনেকে।

কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ জাতের ধানে ইউরিয়া সার এক-তৃতীয়াংশ ও সেচ ৫০ শতাংশ কম লাগে। ধানের জীবনকাল ১১০ থেকে ১১৫ দিন। এর প্রতি শিষে ২০০ থেকে ২৫০ দানা থাকে।

প্রতি বিঘায় বিনা-১৭ প্রায় ২৬ থেকে ২৭ মণ ফলন হয়ে থাকে। অন্যান্য জাতের ধানের তুলনায় বিঘাপ্রতি উৎপাদন খরচ দুই থেকে তিন হাজার টাকা কম হয়।

নিয়ামতপুর উপজেলার শালবাড়ি গ্রামের কৃষক ইব্রাহিম খলিল এই প্রথম তার চার বিঘা জমিতে বিনা-১৭ জাতের ধানের আবাদ করেছেন।

তিনি বলেন, ‘আমি কয়েক মাস আগে ইউটিউবে বিনা-১৭ জাতের ধানের সুফল দেখার পর এর উপকেন্দ্র চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও জেলার কৃষি অফিসে যোগাযোগ করি। সেখানকার কর্মকর্তাদের পরামর্শ ও সহায়তা নিয়ে আমার চার বিঘা জমিতে বিনা-১৭ জাতের ধান রোপণ করেছিলাম।

‘বর্তমানে ধান কাটার উপযোগী হয়েছে। আমার জমিগুলোর পাশেই স্বর্ণা-৫, তেজ ধানি গোল্ড, বিনা-৭ জাতের ধানের আবাদ করেছে এখানকার কৃষকরা। তবে তাদের ধান এখনও কাঁচা রয়েছে। আরও প্রায় এক মাসের মতো সময় লাগবে এসব ধান কাটার উপযোগী হতে।’

এই ধান চাষে খরচ কেমন লেগেছে জানতে চাইলে ইব্রাহিম বলেন, ‘সেচ, সার, ওষুধ ও পানির খরচ অনেকটাই কম। অন্য জাতের ধানে বিঘাপ্রতি সব মিলিয়ে খরচ হয় প্রায় ৮ থেকে ১০ হাজার টাকার মতো, কিন্তু বিনা-১৭ জাতের ধানে বিঘাপ্রতি দুই থেকে তিন হাজার টাকা কম খরচ হচ্ছে।’

ইব্রাহিম জানান, এরই মধ্যে এক বিঘা জমির ধান কাটা হয়েছে। সেখান থেকে ২৭ মণ ধান পাওয়া গেছে। ঝড়-বৃষ্টিতে এই ধানের শিষ তেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয় না।

রাণীনগর উপজেলার জলকৈ গ্রামের কৃষক রবিউল হোসেন বলেন, ‘হামার সাত বিঘা জমিত এবার বিনা-১৭ জাতের ধানের আবাদ করিছি। পাঁচ থেকে ছয় দিনের মধ্যেই হামি জমির ধানগুলা কাটমু। ১১০ থ্যাকা ১১৫ দিনের মধ্যেই ধান পাকা গেছে। ফলনও ভাল হচে। তাই সব মিলা এই জাতের ধান আবাদ লাভজনক।’

নওগাঁ জেলা কৃষি প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা কে এম মঞ্জুরে মওলা নিউজবাংলাকে জানান, বিনা-১৭ চাষে কৃষকদের প্রয়োজনীয় বীজ ও সার সহায়তা দেয়া হচ্ছে। প্রতিটি উপজেলায় কৃষকদের নিয়ে মাঠ দিবসও পালন করা হচ্ছে।

নিয়ামতপুরে কৃষক ইব্রাহিমের জমির ধান পরিদর্শনে গিয়েছেন বিনা চাঁপাইনবাবগঞ্জের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও উপকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ড. মো. হাসানুজ্জামান।

তিনি বলেন, ‘বিনা-১৭ একটি স্বল্পমেয়াদি জাতের ধান। এটি খরাসহিষ্ণু, ৩০ শতাংশ পানি কম প্রয়োজন হয় এর চাষে। যে জমিতে দুটি ফসল হতো, সেখানে এ জাতের ধান চাষে এখন তিনটি ফসল করা সম্ভব। বিনা ধান-১৭ স্বল্প জীবনকালীন হওয়ায় ধান কাটার পর ওই একই জমিতে কৃষক সরিষা, মসুর বা আলু চাষ করতে পারবেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘পরে জমি তৈরি করে বোরো ধান লাগানো যাবে। আমরা নওগাঁ, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নাটোর জেলার কৃষকদের এই ধান চাষে উদ্বুদ্ধ করতে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছি।’

এ বিভাগের আরো খবর