বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বুস্টার ডোজ নিয়ে ভাবছে না সরকার

  •    
  • ১৯ অক্টোবর, ২০২১ ০৮:১৭

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাণিজ্যিক গবেষণা ছাড়া তৃতীয় বুস্টার ডোজের পক্ষে তেমন কোনো সুপারিশ নেই গবেষকদের। তাই এখনই বুস্টার ডোজের বিষয়ে চিন্তা না করে দ্রুত দেশের ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনতে টিকা কার্যক্রম বাড়ানোর পক্ষে তারা।

করোনাভাইরাস মহামারি, বিশেষ করে অতি সংক্রামক ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট রুখতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ এরই মধ্যে নিজেদের ব্যবস্থাপনায় তৃতীয় একটি বুস্টার ডোজ দেয়া শুরু করেছে। তবে এ বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুনির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকার কারণে এখনই এ রকম বুস্টার ডোজ নিয়ে ভাবছে না বাংলাদেশ সরকার।

দেশে ৮০ শতাংশ মানুষের টিকাদান নিশ্চিত করতে আগামী বছরের মার্চ-এপ্রিলের মধ্যে ১২ কোটি মানুষকে টিকার আওতায় আনার লক্ষ্য নিয়েছে সরকার। এ জন্য প্রতি মাসে একটি করে টিকা ক্যাম্পেইন ও সপ্তাহে এক কোটির ওপরে টিকা প্রয়োগের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাণিজ্যিক গবেষণা ছাড়া তৃতীয় বুস্টার ডোজের পক্ষে তেমন কোনো সুপারিশ নেই গবেষকদের। তাই এখনই বুস্টার ডোজের বিষয়ে চিন্তা না করে দ্রুত দেশের ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনতে টিকা কার্যক্রম বাড়ানোর পক্ষে তারা। তবে সংক্রমণ যদি আবার বাড়ে, তখন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের বুস্টার ডোজ দেয়ার পরিকল্পনা নেয়া যেতে পারে।

দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ কমে আসায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, অন্যান্য দেশের তুলনায় দেশে দ্রুত টিকা কর্মসূচি হাতে নেয়ার কারণে এখানে হার্ড ইমিউনিটি অর্জিত হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনই এমনটি বলার সময় আসেনি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের (এমআইএস) পরিচালক মিজানুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বুস্টার ডোজের বিষয়ে এখনও কোনো নির্দেশনা বা পরিকল্পনা আমাদের নেই। এ ছাড়া করোনার দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণে আসছে। যদি আবার তৃতীয় ঢেউ দেখা দেয়, এ বিষয়ে হয়তো পরিকল্পনা নেয়া হতে পারে।’

এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক সাইদুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যেসব দেশ এরই মধ্যে ৭০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনতে পেরেছে, তারাই তৃতীয় বুস্টার ডোজ দিচ্ছে। কোনো কোনো দেশে স্বাস্থ্যকর্মী বা ৬০ বছরের বেশি বয়স্ক লোকেদের বা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের তৃতীয় ডোজ হিসেবে বুস্টার ডোজ দেয়া হচ্ছে। এখনও কোনো দেশ ঢালাওভাবে বুস্টার দিচ্ছে না।’

তিনি বলেন, ‘বুস্টার ডোজ যতটা না বিজ্ঞান, তার চেয়ে বেশি বাণিজ্যিক কারণে। যেসব দেশ অনেক বেশি টিকা ইতোমধ্যে দিয়ে ফেলেছে, যেসব দেশের অনেক বেশি টিকা কেনার অর্থ রয়েছে, বা ইতোমধ্যে অনেক বেশি টিকা কিনে মজুত করে রেখেছে, তারা টিকার মেয়াদ শেষ হওয়ার শঙ্কা থেকে বুস্টার ডোজ দেয়ার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে।

‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা দেয়নি। তাই এখনই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ নেই।

‘আমাদের দেশে টিকা কার্যক্রম চলতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসে শুরু হয়েছে। টিকা নিয়ে যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়, তার মেয়াদ থাকে ৯ মাস থেকে এক বছর। এ কারণে যাদের টিকা নেয়ার পর ৯ মাস অতিবাহিত হয়েছে, তাদের অধিকাংশের শরীরে এখন অ্যান্টিবডি খুঁজে পাওয়া যাবে না। তাই যদি আমাদের দেশে করোনার তৃতীয় ঢেউ আসে, তখন করোনা মোকাবিলায় সম্মুখসারির যোদ্ধা, যেমন চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মীদের বুস্টার ডোজ দেয়া যেতে পারে।’

তিনি বলেন, যেহেতু দেশে এখনও ৭০ শতাংশের বেশি মানুষকে টিকার আওতায় আনা সম্ভব হয়নি, তাই এখনই বুস্টার ডোজের পরিকল্পনা না করাই ভালো।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব ও জনস্বাস্থ্য কমিটির সদস্য ডা. আবু জামিল ফয়সাল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বুস্টার ডোজের বিষয়ে ঢালাওভাবে কোনো নির্দেশনা এখনও দেয়নি। যেসব দেশে বুস্টার ডোজ পরিচালনা করা হচ্ছে, সেসব দেশের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়েই এই ডোজ দেয়া হচ্ছে। সে জন্য আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, আমাদের দেশে এখনই ঢালাওভাবে বুস্টার ডোজের দরকার নেই।’

টিকা কার্যক্রমে প্রসার বাড়াতে হবে জানিয়ে এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘৮০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনতে হবে। এটি বাস্তবায়ন করতে আমাদের দুটি জিনিসের ওপরে নজর রাখতে হবে। একটা হলো কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করে টিকার প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে হবে। সেই সঙ্গে ক্রয়ের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। এ ছাড়া দ্রুত সময়ের মধ্যে সবাইকে টিকা দিতে হবে।’

তৃতীয় বুস্টার ডোজ নিয়ে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ বিষয়ে এখনও বিশ্বের কোনো দেশের পরিষ্কার কোনো ধারণা নেই। এ বিষয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে। যদি কোম্পানির পৃষ্ঠপোষকতায় গবেষণা হয়, সেখানে দেখা গেছে টিকা বাণিজ্যের কারণে বুস্টার ডোজ দেয়ার সুপারিশ করা হয়। তবে স্বাধীনভাবে যে গবেষণা হয়েছে, তার কোথাও বুস্টার ডোজ দেয়ার সুপারিশ করা হয়নি।

‘যদি সারা পৃথিবীর মানুষকে দুই ডোজ টিকা দেয়া সম্ভব না হয়, তাহলে পৃথিবীর কোথাও না কোথাও সংক্রমণ ছড়াতে থাকবে। সো বুস্টার ডোজের পরিকল্পনা বাদ দিয়ে দ্বিতীয় ডোজ সবাইকে দেয়ার পরিকল্পনা নেয়া উচিত। অনেক দেশ শুধু একটি ডোজ দিয়ে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। দুই-তিনটা দেশে বুস্টার ডোজ দেয়া হচ্ছে।’

এ বিভাগের আরো খবর