পুঁজিবাজার তালিকাভুক্ত বিমা খাতের কোম্পানি ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির পুনগঠন করা বোর্ডের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ পদত্যাগ করেছেন।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও বিমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ এ সক্রান্ত চিঠি পাঠানো হয়েছে। এতে এই সিদ্ধান্তের কারণ হিসেবে ‘ব্যক্তিগত ব্যস্ততার’ কথা তুলে ধরা হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের অধ্যাপক ও ডিন রহমত উল্লাহ লেখেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা ও প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনে তাকে অনেক বেশি ব্যস্ত থাকতে হয়। তাই সময়ের অভাবে ফারইস্টের দায়িত্ব পালন একেবারেই অসম্ভব।
বিষয়টি নিশ্চিত করে আইডিআরএ নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র এস এম শাকিল আক্তার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিষয়টি সম্পর্কে আমরা অবগত।’
রহমত উল্লাগ যে কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেছেন তার বাইরে কোনো বিষয় আছে কি না, এই প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘কিছু কারণ তো থাকেই। পুনর্গঠন করা বোর্ডের চেয়ারম্যান কিন্তু কোম্পানির চেয়ারম্যানের মতো স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে না, তারা শুধু পরামর্শ দিতে পারে।
তিনি বলেন, ‘বিমা কোম্পানি চালানোর জন্য এ খাতের দক্ষ লোক প্রয়োজন। বাইরে থেকে কাউকে এনে বাসলে তার সেটি আয়ত্বে নিতে অনেক সময় প্রয়োজন হয়। সে সময়টা অনেকে দিতে চান না।’
গত ১ সেপ্টেম্বর বিএসইসি ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সে রহমত উল্লাহসহ নয়জন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেয়ার মাধ্যমে আগের পর্ষদ ভেঙে দেয় বিএসইসি।
নতুন বোর্ডকে আগামী ৬ মাসের মধ্যে তাদের কোম্পানির শীর্ষ ব্যবস্থাপনা পুনর্গঠন, করপোরেট ক্যাশ ও সম্পদ ফিরিয়ে আনা, যারা গত ১০ বছরে কোম্পানিতে আর্থিক অপরাধ ও মানি লন্ডারিং করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়।
নবনির্বাচিত পর্ষদ কোম্পানিটির করপোরেট গভর্নেন্স ২০১৮ আইন অনুসারে একটি নিরীক্ষা কমিটি গঠন করবে বলেও জানানো হয়। একটি নমিনেশন ও রিমুন্যারেশন কমিটি গঠন করার জন্যও বলা হয়।
পুনগঠন করা বোর্ড দায়িত্ব নেয়ার ১৫ দিনের মধ্যে নানা অনিয়মের অভিযোগে কোম্পানিটির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ হেমায়েত উল্লাহকে অপসারণ করে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)।
এর আগে বিএসইসি যেসব কোম্পানির পর্ষদ পুনগঠন করেছিল সেগুলো ছিল লোকসানি অথবা বন্ধ। উদ্যোক্তা পরিচালকদের ৩০ শতাংশ শেয়ার না থাকলেও পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়েছে।
এসব কোম্পানির মধ্যে আলহাজ্ব টেক্সটাইল ও রিংসাইন টেক্সটাইল এরই মধ্যে উৎপাদন শুরু করেছে। এমারেল্ড অয়েল ১ সেপ্টেম্বর উৎপাদনের ঘোষণা দিয়েও পারেনি।
বাকিগুলোর মধ্যে সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলকে অধিগ্রহণে অনুমতি দেয়া হয়েছে আলিফ গ্রুপকে। ফ্যামিলি টেক্স চালু আছে বলে নতুন পর্ষদ দেখতে পেয়েছে।
এই বোর্ড পুনর্গঠন ইস্যুতে প্রায় সবগুলো কোম্পানির শেয়ার দর অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। আদৌ উৎপাদনে আসা নিয়ে সংশয় থাকা, বা কার্যক্রম চালু হলেও কবে মুনাফায় ফিরবে এ নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকার পরেও কোনো কোনো কোম্পানির শেয়ারদর দ্বিগুণ, কোনোটির তিন গুণ, কোনোটির চারগুণ হয়েছে।
ফারইস্ট ইসলামী লাইফের ক্ষেত্রে উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে ৩০ শতাংশ শেয়ার আছে। ২০২০ সালে লভ্যাংশ ছাড়া বাকি বছরগুলোর নিয়মিত লভ্যাংশও দিয়ে আসছে। কোম্পানিটি পুনর্গঠন করার উদ্দেশ্য আর্থিক অনিয়ম ঠেকানো।